আহারে মা...
জীবন দিয়ে বাঁচালেন সন্তান
মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রতীকী ছবি
মৃত্যু নিশ্চিত দেখতে পেয়েও নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে বুকে আগলে রাখা শিশুসন্তানকে বাঁচালেন মা। মৃত্যুদূত হয়ে আসা ট্রাকটি চাপা দেওয়ার মাত্র কয়েক সেকেন্ড আগে মিম খানের কোলে থাকা ছেলেকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে তার প্রাণ রক্ষা করেছেন। এরপর তিনি আর নিজেকে বাঁচানোর সময় পাননি। এতে শিশুসন্তান মাথা ও ঠোঁটে আঘাত পেলেও বেঁচে গেছে প্রাণে। মঙ্গলবার বিকালে এই দুর্ঘটনা ঘটে যশোরের রাজারহাট-চুকনগর মহাসড়কের মনিরামপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে। চিকিৎসকের দেওয়া উপদেশ অনুযায়ী, ল্যাবে আলট্রাসনোগ্রাফি শেষে ভ্যানে বাড়ি ফেরার পথে বিপরীত দিক থেকে আসা মালবাহী ট্রাকচাপায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান মিম খানের বোন রূপা খাতুন (৪২) ও ভ্যানচালক মোসলেম উদ্দীন (৫৫)।
নিহত রূপা খাতুন উপজেলার মুন্সিখানপুর গ্রামের রবিউল ইসলামের স্ত্রী এবং ভ্যানচালক মোসলেম উদ্দীনের বাড়ি উপজেলার ফেদাইপুর গ্রামে। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত মিম খানকে উদ্ধার করে প্রথমে মনিরামপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে যশোর আড়াইশ শয্যা হাসপাতালে পাঠানো হয়। এদিকে দুর্ঘটনার পরপরই ট্রাকের চালক ও হেলপার পালিয়ে যান।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মিম খান আলট্রাসনোগ্রাফি করান। এরপর ভ্যানে বাড়ি ফেরার সময় যশোরগামী একটি মালবাহী ট্রাকের চাকার নিচে পড়ে দুমড়ে-মুচড়ে যায় ভ্যানটি। এ সময় ঘটনাস্থলেই নিহত হন রূপা খাতুন ও ভ্যানচালক মোসলেম উদ্দীন। ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মী এবং স্থানীয়রা মিম খানকে ট্রাকের টায়ারের নিচ থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।
প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুল্লাহ-আল মামুন জানান, চোখের পলকেই সবকিছু ঘটে গেল। ভ্যানটি ঘোরাতেই বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রাকের নিচে পড়ে। ট্রাকটি চাপা দেওয়া মাত্র কয়েক সেকেন্ড আগে মিম খানের কোলে থাকা শিশুপুত্রকে ছুড়ে ফেলে দেন। তিনি নিজেকে আর বাঁচানোর সময় পাননি। চোখের পলকে তিনি ছুড়ে ফেলে দিয়ে শিশুপুত্রের প্রাণ বাঁচিয়েছেন। এতে শিশুটি মাথা ও ঠোঁটে আঘাত পেয়েছে।
মনিরামপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মকর্তা মো. সাফায়াত হোসেন জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনজনকে ট্রাকের নিচ থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
মনিরামপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. সাইফুল ইসলাম জানান, ভ্যানচালক মোসলেম উদ্দীন ও রূপা খাতুন হাসপাতালে আনার আগেই মারা গেছেন। আহত মিম খানের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে যশোর আড়াইশ শয্যা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
মনিরামপুর থানার ওসি নূর মোহাম্মদ গাজী জানান, দুর্ঘটনার পর ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে। তবে চালক বা হেলপার কাউকে আটক করা যায়নি।