Logo
Logo
×

শেষ পাতা

এফবিসিসিআইর সেমিনারে বক্তারা

জ্বালানি অপরাধীদের বিচার করতে হবে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জ্বালানি অপরাধীদের বিচার করতে হবে

জ্বালানি অপরাধীরা কমিশনের লোভে দেশের এ খাতকে আমদানিনির্ভর করেছে। যার খেসারত দিতে হচ্ছে দেশের সাধারণ জনগণ ও শিল্প উদ্যোক্তাদের। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে এসব অপরাধীর বিচার করা উচিত। শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই ভবনে আয়োজিত সেমিনারে ব্যবসায়ী ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা এই দাবি জানিয়েছেন। ‘পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি সিনারিও ইন বাংলাদেশ : এনসিওরিং এনার্জি সিকিউরিটি ফর ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এফবিসিসিআইর প্রশাসক হাফিজুর রহমান।

জ্বালানি উপদেষ্টা তার বক্তব্যে বলেন, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে প্রতিযোগিতার অভাব ছিল। সরকারের ঘনিষ্ঠ কিছু লোক ব্যবসা করত। শুধু তেল আমদানিতে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা চালু করায় ৬ মাসে প্রিমিয়াম বাবদ ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় করতে পেরেছি। গুটিকয়েক লোক এলএনজি আমদানি করত। প্রতিযোগিতা উন্মুক্ত করে দেওয়ায় এখন সৌদির আরামকো, বিপি এবং শেলের মতো প্রতিষ্ঠান আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন কমছে। আমরা গ্যাস রিজার্ভের কথা ভাবছি না। গ্যাসের উৎপাদন ২ হাজার ঘনফুট ধরে রাখতে চাই। এ জন্য পুরোনো ৫০টি কূপে জরিপ চালানো হবে। প্রতিশ্রুতিশীল কূপগুলোতে খনন করা হবে।

জ্বালানি অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা দরকার মন্তব্য করে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, জ্বালানি অপরাধ শনাক্তে অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারপতিকে প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি খতিয়ে দেখছে। কিছু চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন করা হবে।

বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়ানোর চাপ আছে মন্তব্য করে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, এই সরকার এখনো দাম বাড়ায়নি। কতোদিন না বাড়িয়ে থাকতে পারবে তা বলতে পারছি না। বিইআরসির কাছে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে সমালোচনা আছে। সব গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। শুধু নতুন সংযোগ বা বাড়তি গ্যাসের জন্য দাম বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। এটা উদ্যোক্তাদের জন্য একটি সিগন্যাল, তারা কোন ব্যবসায় যাবে, আর কোন ব্যবসায় যাবে না। কারণ সরকারের ৭২ টাকায় গ্যাস কিনে ৩০ টাকায় সরবরাহ করা সম্ভব না।

ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম বলেন, গত ১৫ বছরে নতুন কূপ অনুসন্ধান না করে জ্বালানি খাত আমদানিনির্ভর করা হয়েছে। এখন আদানির কেন্দ্র থেকে ১৪-১৫ টাকায় বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। অথচ দেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে বসিয়ে বসিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হচ্ছে। যেসব সক্ষমতা (বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের) কাজে লাগছে না, সে সবের জন্য টাকা খরচ করতে হবে কেন? আগামীতে যেই সম্পদ কাজে লাগে না বা সেবা দেয় না, সেই সব সম্পদের জন্য কোনো চার্জ দেওয়া হবে না। এ জন্য সবাইকে আন্দোলন করতে হবে। জ্বালানি খাতে ব্যয় কমালে ঘাটতি কমে যাবে। ঘাটতি কমলে জ্বালানির দাম বাড়াতে হবে কিনা বা সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে কিনা তখন ভোক্তারাই বলতে পারবে।

তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগ, জ্বালানি বিভাগ, ইডকল এবং রেগুলেটরি কমিশনে যারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল তাদের ব্যাপারে সে সব দপ্তরে অভিযোগ করা হয়েছে। পত্রপত্রিকায়ও জ্বালানি অপরাধের বিস্তারিত লেখা হয়েছে। সেইসব অভিযোগের বিচার করার জন্য বিইআরসি আইন অনুযায়ী বিচার করতে হবে। এক্ষেত্রে সুপ্রিমকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা যেতে পারে।

শামসুল আলম বলেন, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা থাকলেও বিদ্যুৎ বিভাগ, জ্বালানি বিভাগ ভোক্তার জ্বালানি অধিকার খর্ব করেছে। আইন মানার ক্ষেত্রে এরা নিষ্ক্রিয় ছিল। জনগণের টাকা ঘাটতি দেখিয়ে চুরি করা হয়েছে। এ কাজে চারজন সরাসরি জড়িত। এরা হচ্ছে-আওয়ামী লীগ সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহি, সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, কায়কাউস এবং সাবেক বিইআরসির চেয়ারম্যান মনোয়ারুল ইসলাম। এসব জ্বালানি অপরাধীদের বিচার করতে হবে। জ্বালানি খাত সংস্কারে প্রধান উপদেষ্টার কাছে যেই স্মারকলিপি দেওয়া হবে, তাতেও এদের নাম থাকবে। এই সরকারকে বিচার সূচনা করে যেতে হবে।

এফবিসিসিআই প্রশাসক হাফিজুর রহমান বলেন, জ্বালানির দীর্ঘমেয়াদি সংকট পুরো অর্থনীতিকে স্থবির করে দিতে পারে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটের কারণে অর্থনৈতিক অঞ্চলে যারা শিল্প স্থাপনের জন্য বিনিয়োগ করেছেন, তাদের উৎপাদন স্থবির হয়ে ঋণ খেলাপিতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। একইসঙ্গে নতুন বিনিয়োগ অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। তিনি আরও বলেন, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ খাতের অপচয় নিরসনের প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধিসহ জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। তখন শ্রমিকের বেতন বৃদ্ধির দাবি আসবে। যা পণ্য মূল্যের ওপর দ্বিগুণ প্রভাব ফেলবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম