Logo
Logo
×

শেষ পাতা

দখল-চাঁদাবাজি

কুয়াকাটায় বেপরোয়া বিএনপি নেতাকর্মীরা

কেন্দ্রের পদক্ষেপেও নেই কোনো ভ্রুক্ষেপ * হুমকি-ধমকি, লাঞ্ছনার শিকার কর্মকর্তারা

Icon

অমল মুখার্জী, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কুয়াকাটায় বেপরোয়া বিএনপি নেতাকর্মীরা

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার পর্যটন নগরী কুয়াকাটায় দখল, চাঁদাবাজিতে বেপরোয়া হয়ে উঠছে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এসব অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করায় সন্ত্রাসী হামলার শিকার হচ্ছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা। খোদ উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারাও তাদের হুমকি-ধমকি ও লাঞ্ছনার হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। অভিযুক্ত এসব নেতাকর্মীদের শোকজ নোটিশসহ দল থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও বন্ধ হচ্ছে না দখল, চাঁদাবাজির মহোৎসব।

ভুক্তভোগী মানুষের কোনো অভিযোগ থানা পুলিশ রেকর্ড না করলেও বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের লোহা, তামা, স্টিল লোপাটের অভিযোগে কলাপাড়া থানায় ও উপজেলা প্রশাসনের সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মহিপুর থানায় মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। তবে এসব মামলায় বিএনপির নেতাকর্মীদের আসামি করা হলেও পুলিশ তাদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এদিকে বিএনপির কুয়াকাটা পৌর শাখার সম্পাদক মো. মতিউর রহমান হাওলাদারের বিআরটিসি কাউন্টার দখলের একটি নির্দেশনামূলক কথোপকথনের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এতে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘কাল থেকে তোমাদের কাউন্টার বন্ধ থাকবে। বিএনপির ৯ ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা এখন থেকে ভোগ করবে।’ এ ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ার পর পটুয়াখালী জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে মতিউর রহমানকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সশরীরে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। তবে এ নিয়ে কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমানের বক্তব্য কুয়াকাটায় দুটি কাউন্টার হয়েছে। ৫ তারিখের পর এতে পর্যটকরা টিকিট কাটা নিয়ে ঝামেলায় পড়ছেন। সেটা নিরসনে একটি কাউন্টার বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ক্লিপটি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা অসৎ উদ্দেশ্যে ছড়িয়েছে।

বিআরটিসি বরিশাল ডিপোর ম্যানেজার জামিল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটি সরকারি পরিবহণ। দীর্ঘ ৩০-৪০ বছর ধরে কুয়াকাটার আলী হোসেন নামের একজন এটি পরিচালনা করছেন। তার সঙ্গে বিআরটিসির চুক্তিপত্র এবং জামানতের টাকা নেওয়া রয়েছে। অথচ এটি এখন জবরদখলে নিতে চায় ৪/৫টি গ্রুপ। বিআরটিসির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’ এর আগে ৫ নভেম্বর কুয়াকাটায় সরকারি খাস জমি ও সৈকতে বিএনপির অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান শুরু করে উপজেলা প্রশাসন। ৬ নভেম্বর উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার সময় ভেকু ভাঙচুর ও চালককে মারধর করে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ওই সময় কুয়াকাটা ট্যুরিজম পার্কে অবস্থানরত দুই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) কৌশিক আহমেদকে পুলিশসহ অবরুদ্ধ করে তারা ইট-পাটকেল ছুড়ে মারেন। তাদেরকে দেখে নেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়। এ ঘটনায় মহিপুর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা আ ন ম মুরাদুল ইসলাম মহিপুর থানায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ১৯ নেতাকর্মীর নামে মামলা করেন। ৪ জানুয়ারি কুয়াকাটা মসজিদের সামনে খাস জমির ওপর ফের অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ শুরু করেন কুয়াকাটা পৌর শ্রমিকদলের সহ-সভাপতি জসিম। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কৌশিক আহমেদ বাধা দিলে প্রকাশ্যে তাকে গালমন্দ করাসহ মারধরের হুমকি দেয় জসিম। এছাড়া সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন দেশ রূপান্তরের সাংবাদিক কেএম বাচ্চু। হামলা, ভাঙচুর করা হয় একুশে টেলিভিশন ও দৈনিক যুগান্তরের কুয়াকাটা প্রতিনিধি নাসির উদ্দিন বিপ্লব ও আমাদের সময়ের কুয়াকাটা প্রতিনিধি মাসুদ পারভেজ সাগরের বসতবাড়িসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে।

এদিকে ৫ আগস্টের পর উপজেলার হাটবাজার, খেয়াঘাট, বালুমহাল, বাস কাউন্টার দখলসহ চাঁদাবাজিতে মেতে ওঠে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এমনকি বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের লোহা, তামা, স্টিল চুরির সঙ্গে তারা জড়িয়ে পড়েন। বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের পক্ষ থেকে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ৩৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে কলাপাড়া থানায় মামলা করে বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট কর্তৃপক্ষ। এমনকি ঢাকা মহাসড়কের রাজপাড়া পয়েন্টে রাতের অন্ধকারে পুলিশ পরিচয়ে মাছের ট্রাক আটকে চাঁদাবাজিকালে হাতেনাতে পুলিশের হাতে আটক হন বিএনপির সহযোগী সংগঠনের ইউনিয়ন পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। এসব বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে শোকজ, বহিষ্কারের মতো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাজী হুমায়ুন সিকদার বলেন, ‘বিএনপি জনগণের দল। এখানে কোনো সন্ত্রাসীর জায়গা নেই। ইতোমধ্যে অভিযুক্ত নেতাকর্মীদের দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। পুলিশ পরিচয়ে চাঁদাবাজিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বিদ্যুৎ প্ল্যান্টে চুরির ঘটনায় আওয়ামী লীগের অনেকে জড়িত, তারপরও বিএনপির ক্লিন ইমেজের অনেককে অহেতুক আসামি করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে সত্যতা পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ কুয়াকাটায় উচ্ছেদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘হাইকোর্টের স্থিতি আদেশ উপেক্ষা করেও মসজিদ মার্কেট উচ্ছেদ করা হয়েছে। প্রশাসনের এসব কর্মকর্তারা কোথা থেকে কিভাবে এসে কলাপাড়ায় যোগদান করেছেন তা আপনারা সবাই জানেন।’

মহিপুর থানার ওসি তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘উচ্ছেদ অভিযানে হামলা মামলার আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। কুয়াকাটায় বৈধ কাগজধারী বাস কাউন্টার সচল রয়েছে। অবৈধ কাউন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিআরটিসির পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কলাপাড়া থানার ওসি জুয়েল ইসলাম বলেন, ‘৫ আগস্টের পর এখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো ছিল না। এখন জনসাধারণের সহায়তায় অনেক ভালো হয়েছে। বিদ্যুৎ প্লান্টের মামলার আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান চলছে।’

সহকারী কমিশনার (ভূমি) কৌশিক আহমেদ বলেন, ‘সরকারি খাস জমিতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার সময় বিএনপির নেতাকর্মীদের বাধা সৃষ্টি, ভেকু ভাঙচুর ও ভেকু চালককে মারধরের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেফতার করেছে বলে আমার জানা নেই। কর্তব্যরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের মারমুখী, অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আওয়ামী লীগের ডিও লেটারে পদোন্নতি পেয়েছি, এমন কোনো কাগজ তাদের কাছে থাকলে তারা দেখাক।’ কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি কাজে বাধাদানের বিষয়টি কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। বিচারিক বিষয়টি আদালত দেখবেন।’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম