বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে আরও বেশি বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিনিয়োগ প্রক্রিয়া সহজ করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, উন্নত বিনিয়োগ পরিবেশে আন্তর্জাতিক ব্যবসা ও বিনিয়োগ বাড়াতে বাংলাদেশ এখন প্রস্তুত। বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনের ফাঁকে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে ড. ইউনূস একাধিক সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন কোম্পানির নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, চীনসহ বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে তিনি নিয়মিত কথা বলছেন। বাংলাদেশের বিনিয়োগ উপযোগী পরিবেশের কথা তুলে ধরে তিনি বিনিয়োগ করার আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন। বিপুলসংখ্যক তরুণ জনগোষ্ঠীর কারণে বাংলাদেশ একটি রপ্তানি কেন্দ্র হয়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

এদিকে সকালে ড. ইউনূসের সঙ্গে বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ডের গ্রুপ চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সুলতান আহমেদ বিন সুলাইম সাক্ষাৎ করেন। পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তারা আলোচনা করেন। এদিন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ফেসবুকের মূল কোম্পানি মেটার গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের প্রেসিডেন্ট নিক ক্লেগ সাক্ষাৎ করেন।

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের তৃতীয় দিনে ড. ইউনূস ব্যস্ত সময় পার করছেন। ২১ জানুয়ারি তিনি দাভোস শহরে পৌঁছান।

উচ্চ প্রবৃদ্ধি নিয়ে হাসিনা সরকারের দাবি ছিল জালিয়াতি-রয়টার্সকে ড. ইউনূস : প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা দাবি করেছিলেন প্রবৃদ্ধিতে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। তার (হাসিনা) সরকারের আমলে দেশের অর্থনীতির উচ্চ প্রবৃদ্ধি নিয়ে যা বলা হতো, তা ছিল জালিয়াতি। বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। 

সুইজারল্যান্ডের দাভোস শহরে চলমান বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনের ফাঁকে রয়টার্সকে সাক্ষাৎকার দেন প্রধান উপদেষ্টা। এতে হাসিনা সরকারের দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন না তোলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা করেন ড. ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি (হাসিনা) দাভোসে এসে দেশ কীভাবে চালাতে হয়, সে কথা সবাইকে বলেছিলেন। কেউ তখন প্রশ্ন করেননি। এটা মোটেও কোনো ভালো বিশ্বব্যবস্থা নয়। শেখ হাসিনা সরকারের স্বৈরাচারী হয়ে ওঠায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও দায় আছে বলে মনে করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এটা যে ঘটেছে, এর জন্য পুরো বিশ্ব দায়ী। তবে এটা বিশ্বের জন্য একটি শিক্ষা। প্রবৃদ্ধি নিয়ে হাসিনার একটি মন্তব্যের উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তিনি (হাসিনা) বলেছিলেন, আমাদের প্রবৃদ্ধির হার অন্য সবার চেয়ে বেশি। এটা একেবারে জালিয়াতি।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার দিয়ে মানুষের জীবনমানের উন্নতির তুলনা করতে চান না বলে উল্লেখ করে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রবৃদ্ধির হার দিয়েই সবকিছু বিবেচনা করার খুব একটা পক্ষে নই। আমি চাই একেবারে প্রান্তিক পর্যায় থেকে শুরু করে প্রতিটি মানুষের উন্নত জীবনমান। আর এ কারণেই আমি এমন অর্থনীতি চাই, যেখানে সম্পদ পুঞ্জীভূত করার ধারণা এড়িয়ে চলা হয়। 

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত সম্পর্ক যতটা সম্ভব শক্তিশালী হওয়া উচিত। বাংলাদেশের মানচিত্র ছাড়া ভারতের মানচিত্র আঁকা সম্ভব নয়।