ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন: রাজশাহী-১
বিএনপির চার, জামায়াতের এক প্রার্থী মাঠে
মো. শরীফ উদ্দীন ও মুজিবুর রহমান
আগামী সংসদ নির্বাচনের দিন-তারিখ এখনো নির্দিষ্ট হয়নি। তবে রাজশাহীর ছয় আসনেই বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নেমে পড়েছেন মাঠে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই তারা নানাভাবে নির্বাচনি এলাকায় নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন।
রাজনৈতিক নানা কর্মসূচিতে যোগদানের পাশাপাশি অংশ নিচ্ছেন নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডে। বিতরণ করছেন শীতবস্ত্র, অতিথি হচ্ছেন ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও। এলাকার মানুষের সমর্থন চাইছেন। দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের সঙ্গে বিভিন্ন উপায়ে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন তারা। ব্যানার-পোস্টার সাঁটিয়ে চাইছেন দোয়া। অবশ্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কোনো সাংগঠনিক বা দলীয় তৎপরতা রাজশাহীর কোনো নির্বাচনি এলাকায় নেই।
রাজশাহীর ছয় আসনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ রাজশাহী-১। গোদাগাড়ী ও তানোর উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনের ভোটার ৪ লাখ ৪০ হাজার ২১৮ জন। এখানে আগাম নির্বাচনি তৎপরতা শুরু করেছেন বিএনপির সম্ভাব্য চার প্রার্থী। জামায়াতের এক প্রার্থীও জোর সাংগঠনিক তৎপরতা চালাচ্ছেন। পাশাপাশি জামায়াত নেতাকর্মীরা সাংগঠনিক কৌশলের অংশ হিসাবে মসজিদ-মাদ্রাসায় সমবেত হয়ে দোয়া মাহফিল করছেন। এসব মাহফিলে তারা ইসলামি শাসনব্যবস্থার নানাদিক তুলে ধরে বক্তব্য দিচ্ছেন। সমর্থন চাইছেন এলাকাবাসীর। এ আসনে জাতীয় পার্টির এক প্রার্থীও মাঠের নেতাকর্মীদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছেন।
বিএনপির অন্যতম মনোনয়নপ্রত্যাশী অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল শরিফ উদ্দিন। তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য ও সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী প্রয়াত ব্যারিস্টার আমিনুল হকের ছোট ভাই। শরিফ এখন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার (২০০১-২০০৬) সামরিক সচিব ছিলেন। এলাকায় ব্যাপক সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেছেন তিনি। গত ১৫ বছর বিএনপির যেসব নেতাকর্মী হামলা মামলায় নিষ্ক্রিয় ও বিপর্যস্ত ছিলেন তাদের সংগঠিত করছেন। গোদাগাড়ী ও তানোরের তৃণমূল পর্যায়ে দলীয় কমিটিগুলো পুনর্গঠন করছেন। এলাকায় এলাকায় গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। শরিফ উদ্দিনের নিজের এলাকা গোদাগাড়ী।
আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে শরিফ উদ্দিন বলেন, বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে আমাকে মাঠের রাজনীতিতে তৎপর হতে বলা হয়েছে। রাজশাহী-১ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে আমি দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা নিয়ে মানুষের কাছে যাচ্ছি। আমি ঐতিহ্যবাহী একটি রাজনৈতিক পরিবার থেকে এসেছি। দলীয় নেতাকর্মী ও এলাকার মানুষ আমাকে আগামীতে বিএনপির প্রার্থী হিসাবে দেখতে চান।
সূত্রমতে, এ আসনে ব্যারিস্টার আমিনুল হক ১৯৯১ থেকে ২০০১ পর্যন্ত পরপর তিনবার বিপুল ভোটে জিতেছিলেন। একটি মামলায় দণ্ডিত হওয়ায় ২০০৮ সালে নির্বাচন করতে পারেননি। ওই বছর শরিফের বড় ভাই পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এনামুল হক বিএনপির প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন। শরিফ উদ্দিন বলেন, এ আসনে বিএনপির ভোটার বেশি। তবে গত সরকারের আমলে প্রহসনের চারটি নির্বাচনে দলীয় ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেননি। আগামীতে দল আমাকে প্রার্থী করলে আমি বিপুল ভোটে বিজয়ী হব ইনশাআল্লাহ।
শরিফ ছাড়াও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসাবে মাঠে নেমেছেন সুপ্রিমকোর্ট জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও গোদাগাড়ী উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন, বিএনপি নেতা সুলতানুল ইসলাম তারেক ও জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি সাজেদুর রহমান মার্কনি। তারা যুগান্তরকে জানিয়েছেন, আগামীতে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। এজন্যই এলাকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন।
জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসাবে মাঠে ব্যাপক দলীয় ও সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করেছেন দলের নায়েবে আমির অধ্যাপক মজিবুর রহমান। তার বাড়ি গোদাগাড়ী পৌর এলাকার মহিষালবাড়ি সাগরপাড়া গ্রামে। ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে তিনি এ আসন থেকে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে আরও কয়েকটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হলেও জয়ের মুখ দেখতে পারেননি। এবার মজিবুর রহমান যেমন সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন, তেমনি দলের দায়িত্বশীলরাও ব্যাপক তৎপর। তারা মসজিদে মসজিদে গিয়ে জামায়াতের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে ইসলামি সমাজ ও রাষ্ট্র কায়েমের কথা বলছেন।
এ বিষয়ে মজিবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আমি রাজশাহী-১ আসনে দলীয় প্রার্থী হব-দল এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেভাবেই নেতাকর্মীরা কাজ শুরু করছেন। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও রাজশাহী মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম স্বপন বলেন, এ আসনে আমাদের পার্টি প্রার্থী দেবে। আমিই প্রার্থী হব। এ লক্ষ্যে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করেছি। এলাকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছি।
অন্যদিকে ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি গত কয়েকটি নির্বাচনে এ আসনে রফিকুল ইসলাম পিয়ারুলকে প্রার্থী করে। তবে ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মতো ওয়ার্কার্স পার্টির নেতাকর্মীরাও এলাকাছাড়া। ফলে এসব দলের দলীয় ও সাংগঠনিক তৎপরতা এই নির্বাচনি এলাকায় অনুপস্থিত।