মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সের সাক্ষাতে প্রধান উপদেষ্টা
জুলাই ঘোষণাপত্রে রাজনৈতিক ঐক্য কঠিন কাজ

বাসস
প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

রাজনৈতিক দলগুলো ফেব্রুয়ারির শুরুতে জুলাই ঘোষণাপত্রের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এখনো কোনো বিরোধী মত পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য গঠন করা ‘কঠিন’ কাজ। সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ‘চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স’ ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনের সাক্ষাৎকালে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় জ্যাকবসন উন্নয়ন ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দেওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আমরা জাতি হিসাবে আপনার সরকারকে বিভিন্ন বিষয়ে সমর্থন দিতে প্রস্তুত রয়েছি।
প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের চলমান সংস্কার কার্যক্রম, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের ওপর রাজনৈতিক ঐকমত্য গঠনের প্রচেষ্টা এবং আগামী সাধারণ নির্বাচনের পরিকল্পনা সম্পর্কে আলোচনা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, প্রস্তাবিত ঘোষণাপত্রের মূল বিষয়বস্তু হলো ‘ঐক্য’। তিনি বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্রের ব্যাপারে সরকার কেবলমাত্র সহযোগীর ভূমিকা পালন করবে। আমার কাজ হলো ঐকমত্য গঠন। আমি কোনো ধারণা চাপিয়ে দিচ্ছি না।
ড. ইউনূস জানান, রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার প্রস্তাবের বিষয়ে একমত হলে সরকার তাদের জুলাই সনদে স্বাক্ষরের জন্য অনুরোধ করবে। তিনি মার্কিন এই কূটনীতিককে বলেন, আমরা জানি না জুলাই ঘোষণাপত্রে অনেক বিষয় থাকবে, নাকি সীমিত কিছু বিষয় থাকবে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমাদের এখানে বহু মতবাদ রয়েছে, তাই ঐকমত্য গঠনের কাজটা খুব কঠিন। তবে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। একবার এটি স্বাক্ষর হয়ে গেলে আমাদের রাজনীতি জুলাই সনদের ভিত্তিতে এগোবে।
যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স সাংবাদিকদের আটক এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার কিছু রিপোর্ট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তার সরকার সব নাগরিকের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এবং যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স উভয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলোর সম্পর্ক, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের অগ্রগতি এবং মিয়ানমারের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন।
ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ তার প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্কের মূল্য দেয়। তিনি বলেন, এই ধারণা থেকেই সার্ক গঠিত হয়েছিল এবং আমরা এই সংস্থার উদ্ভাবক। সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আদলে একটি প্ল্যাটফর্মে রূপান্তর করতে সাম্প্রতিক উদ্যোগের বিষয়ে তিনি আলোকপাত করেন।
প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানান এবং রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিরাপদ অঞ্চলে প্রত্যাবাসনে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন চান।
বৈঠকে এসডিজিবিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।
রোহিঙ্গাদের কারণে বাড়তি চাপের সৃষ্টি হয়েছে-জ্যাকবসন : ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেকের আগে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ‘চার্জ দ্য অ্যফেয়ার্স’ (সিডিএ) হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছেন জ্যাকবসন। সোমবার তিনি জনসমক্ষে প্রথম বক্তৃতা করেন। জ্যাকবসন বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে বাংলাদেশের কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে চাপের সৃষ্টি হয়েছে। অবকাঠামো ও খাদ্য নিরাপত্তার ওপর পড়ছে এই চাপ। এটাকে ‘জটিল সমস্যা’ হিসাবে অভিহিত করে সমস্যাটির দীর্ঘস্থায়ী সমাধানে সবাই মিলে কাজ করার প্রতি জোর দেন তিনি।
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডি’র একটি প্রকল্পের ডিজিটাল উদ্বোধনে দেওয়া বক্তব্যে জ্যাকবসন আরও বলেন, কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং প্রাকৃতিক সম্পদে ভারপুর। ওই অঞ্চলের আবার চ্যালেঞ্জও রয়েছে। চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা যা শুধু জীবনকে হুমকির মুখে ফেলছে না; বরং সাধারণ মানুষের ওপর অর্থনীতিসহ নানামুখী প্রভাব ফেলছে।