একান্ত সাক্ষাৎকারে সৌমিত্র দস্তিদার
আপন গতি ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশ
সৌমিত্র দস্তিদার। ব্লগার, লেখক, রাজনীতিক কনটেন্ট ও ভারতীয় প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা। বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষে যে কয়েকজন ভারতীয় সোচ্চার ছিলেন তার মধ্যে সৌমিত্র অন্যতম। ভারতীয় মিডিয়ায় ওঠে আসা কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের সত্যতা জানতে তিনি এখন বাংলাদেশ সফরে আছেন। ১১ জানুয়ারি থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ বিষয়ে তার দারুণ অভিজ্ঞতা। অল্প কথায় তিনি বলেন, ‘এ এক অনন্য বাংলাদেশ। আপন গতি ফিরে পেয়েছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বেড়ে গেছে বহুগুণ। তরুণদের হাতেই নিরাপদ বাংলাদেশ।’
শুক্রবার বিকালে যুগান্তর কার্যালয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান, পরবর্তী সরকার, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কসহ সমসাময়িক নানা বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়। সৌমিত্র দস্তিদার-এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার রেজাউল করিম প্লাবন।
যুগান্তর : ভারতের বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোতে সংখ্যালঘু মুসলমানদের নিপীড়ন করা হচ্ছে, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, মসজিদ-গির্জা ভেঙে মন্দির বানানো হচ্ছে। ভারত সরকার বাংলাদেশ নিয়ে যে কৃত্রিম আহাজারি করছে তা কি হাস্যকর নয়?
সৌমিত্র দস্তিদার : হাস্যকর তো বটেই। আমাদের যারা কেন্দ্রীয় সরকারে আছেন তাদের মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)। হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডাগুলো বিজেপি সরকার বাস্তবায়ন করে এই আরএসএস দিয়ে। ১৯২৫ সালে থেকে তারা এই নির্যাতনগুলো করে আসছে। তারা হিন্দু সংস্কৃতির বাইরে কিছুই চিন্তা করতে পারে না। তারা বহুত্ববাদী সমাজ মেনে নিতে জানে না। আপনি জেনে অবাক হবেন যে, ভারতে ৫ কিলোমিটার পরপর ভাষা পরিবর্তন হয়। সঙ্গে ধর্ম, পোশাক, সংস্কৃতিও পালটে যায়। বৈচিত্র্যের এই ভারতকে তারা পদদলিত করতে চায়। একজন গরু খাচ্ছে, এটা কি কোনো অপরাধ হতে পারে? কে কী খাবে, কী খাবে না-এটা তার ব্যক্তি স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা। তাহলে তোমরা (ভারতীয়) যে শূকর খাও সেটাও তো মুসলমানদের কাছে দোষের।
যুগান্তর : ভারতে কিছু রাজনীতিক ও সোশ্যাল মিডিয়া বাংলাদেশে মৌলবাদ ও তালেবানের উত্থান হয়েছে বলে প্রচার করছে। নতুন বাংলাদেশে আপনি কী দেখলেন?
সৌমিত্র দস্তিদার : আমি সত্য কথা বলি বিধায় ওরা আমাকেও সুযোগ পেলেই জঙ্গি/তালেবান বলে গালি দেয়। অনেক কথা আমাকেও শুনতে হয়। কখনো হেসে উড়িয়ে দেই। আবার খারাপও লাগে। আসলে বলতে গেলে, পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করা বলতে যা বুঝায়। বাংলাদেশের মানুষদের আগাগোড়া আমি চিনি। আমি একটি বিষয় নিশ্চিত হতে পেরেছি যে, এখানকার মানুষ রাতারাতি তালেবান হয়ে যাবে, জঙ্গি হয়ে যাবে, মৌলবাদী হয়ে যাবে-এটা আমি বিশ্বাস করি না। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। এ নিয়ে বাংলাদেশের কেউ আমাকে পাঠ্যবই ধরিয়ে দেয়নি। কেউ পিস্তল ঠেকিয়ে বলছে না যে, তুমি এটা বলো।
যুগান্তর : বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কী?
সৌমিত্র দস্তিদার : এই সম্পর্ক ব্যক্তি টু ব্যক্তি না করে দুই দেশের মানুষকেই নির্ধারণ করতে হবে। রাষ্ট্র বা সরকার তার মতো করে চলবে। আজ ভারতের কেন্দ্রে যারা ক্ষমতায় আছে তারা পালটে গিয়ে অন্য সরকার এলে ইতিবাচক হতেই পারে। বাংলাদেশে এখন অন্তর্বর্তী সরকার আছে, এটা পালটে ভবিষ্যতে কী হবে সেটাও বলা যাচ্ছে না। সরকারে সরকারে না হয় একটি সম্পর্ক হলো কিন্তু আমার চিন্তা দুই দেশের মানুষে মানুষে সম্পর্ক কী হবে? আমাদের নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা হাহাকার করছেন। ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে। দুই দেশের সরকার মানুষের কথা চিন্তা করলে এমনটি হতো না। মূলত আগের সম্পর্কগুলো ছিল ব্যক্তি টু ব্যক্তি। এর খেসারত দিচ্ছে দুই দেশের সাধারণ মানুষ। ব্যক্তি সম্পর্ক এড়িয়ে ভারত-বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক হওয়া উচিত দীর্ঘমেয়াদি বৈদেশিক নীতির আলোকে। এতে সরকার পালটালেও নীতি পালটাবে না।
যুগান্তর : বাংলাদেশ নিয়ে ভারত কি ধর্মযুদ্ধ করতে চায়?
সৌমিত্র দস্তিদার : আমার মনে হয় না আরএসএস বা বিজেপি সরকার এসব করে সফল হবে। তাছাড়া ভারতের কোনো সরকারই ধর্মযুদ্ধের নামে বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। সে বিজেপি হোক আর কংগ্রেস সরকার হোক। এখন যা হচ্ছে, সবটাই রাজনীতি। এমন বাগাড়ম্বর শুধু ভারতে নয়। বাংলাদেশেও আছে। এদের ভাইরাল হওয়ার একটি খায়েশ থাকে। ভোটের কারণে, মানুষকে সন্তুষ্ট করার কারণে এমনটা বলতে হয়। মূলত ভারতে ধর্মের সাথে ধর্মের বিরোধটা বিজেপি সরকার আরএসএসকে দিয়ে করাচ্ছে। এই সংগঠনটির কার্যকলাপের সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই। তাদের কাছে যুক্তিবাদ পরাজিত হচ্ছে। তারা আবেগ দিয়ে কাজ করছে। এই আবেগ চলে গেলে সবকিছু ভিত্তিহীন হয়ে পড়বে।
যুগান্তর : আপনি বাংলাদেশ সফরে আছেন। সংখ্যালঘু নির্যাতন সম্পর্কে কতটুকু জানতে পারলেন?
সৌমিত্র দস্তিদার : সত্যি বলতে বাংলাদেশের পটপরিবর্তনের পরে একটি পলিটিক্যাল ভায়োলেন্স হয়েছে। এটাকেই রং মাখিয়ে আমাদের ওখানে রিলিজিয়াস ভায়োলেন্স বলে চালিয়ে দিচ্ছে। আমারটা আপনি বলছেন পলিটিক্যাল ভায়োলেন্স আর আপনারটা বলছেন রিলিজিয়াস ভায়োলেন্স। একই আওয়ামী লীগ করার কারণেই কিন্তু দুজনই মারটি খেয়েছি। কোনো ধর্মের কারণে আমরা মার খাইনি। এমন অজস উদারহণ আমি দেখাতে পারি। খোদ পশ্চিম বাংলায়। এর আগেও আমি বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা সফর করেছি। তখনো ধর্মীয় সংঘাত দেখিনি। এবার সিরাজগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, বরিশাল, নোয়াখালী গেলাম। যে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে কলকাতায় গেল গেল রব উঠেছে তা স্বচক্ষে দেখতে এলাম। কিন্তু তার ছিটেফোঁটাও তো দেখলাম না। হাটে-ঘাটে নাকি হিন্দু নারীরা সিঁদুর পরে বেরুতে পারে না। আমি তো বাংলাদেশে সব জায়গায় হিন্দু নারীদের স্বচ্ছন্দে ঘুরতে দেখছি। আমি কয়েকজনকে জিজ্ঞাস করলাম। তারাও বলছে-এসব শুনেছে, কিন্তু দেখেনি। শুনে শুনেই সুভেন্দু বাবুরা কলকাতা কাঁপিয়ে তুলছেন।
যুগান্তর : বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের এনডিটিভি, ইকোনমিক টাইমস, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসসহ অর্ধশতাধিক মিডিয়া ভুয়া খবর ও গুজব ছড়িয়েছে। কলকাতায় যাওয়া বাংলাদেশিরা বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন। এ বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
সৌমিত্র দস্তিদার : এটি সুস্থতা নয়। অতি উৎসাহের ফল ভালো হয় না। এই অতি বাড়াবাড়ির জন্য সীমান্তে সংঘাত বেড়েছে। ৪৯টি না, ২৪৯টি ভুয়া খবর প্রকাশ হলেও আমি অবাক হব না। মিডিয়া দিয়ে ভারতে একটি কনসেপ্ট তৈরি করা হয়। মানুষকে এই কনসেপ্ট খাওয়ানো হয়। তার পেছনে থাকে অর্থ, মেকানিজম, রাজনীতি। সমগ্র পৃথিবীতেই এটা শুরু হয়েছে। এই যে মিথ্যাচার, গুজব ছড়ানো হচ্ছে, এটা সচেতন নাগরিক হিসাবে সবাইকে বুঝতে হবে। আপনাদের দেশেও যদি আমাকে এমনটা করা হয় সেটার যেমন নিন্দা করব, একইভাবে ভারতে যেটা হচ্ছে তারও আমি নিন্দা জানাই। কারণ ছাড়াই যদি আমরা পরস্পরকে শত্রু ভেবে নেই। তাহলে এমনটাই হবে।
যুগান্তর : বাংলাদেশ নিয়ে ভারতে এত ভুয়া সংবাদ বা গুজব কেন ছড়ায়? বাংলাদেশ নিয়ে বিজেপি, আরএসএস কেন এত নেতিবাচক ও আক্রমণাত্মক মনোভাব প্রকাশ করে?
সৌমিত্র দস্তিদার : পৃথিবীর যে দেশেই স্বৈরতন্ত্র হয়েছে সেখানেই একটি কাল্পনিক শত্রু তৈরি করা হয়েছে। এখন ভারত নতুন একটি কাল্পনিক শত্রু ভাবছে বাংলাদেশকে। পাকিস্তান অনেক দূরের ব্যাপার, আর বাংলাদেশ নরম ও ছোট দেশ। এটি একটি আপদমস্তক নিজের করার চেষ্টা। এর পক্ষে রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছাড়া যৌক্তিক কিছু নেই। এই যে এত গুজব, সব তো আরএসএস ও হিন্দুত্ববাদীরা করছে। আমি তো পশ্চিমবাংলার বামদের বলেছিলাম, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে তোমরা মোদি পর্যন্ত চিঠি দিয়ে বসলে। তাহলে তোমরা একটা ব্যালেন্স রাখো। সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে কথা বলো, একটি স্বেতপত্র প্রকাশ করো। বাংলাদেশের বরিশাল, সিরাজগঞ্জসহ কোথায় কী হয়েছে বলো। কিন্তু আজ অবধি সেটা নেই। কোথায় কোথায় তারা নির্যাতিত হয়েছে সেটা তো বলতে হবে, নাকি? কান চিলে নিয়ে গেছে বলা কথাও এখন তারা বিশ্বাস করে। তারা এখন মোদি সরকারের সাথে গা ভাসিয়ে দিয়েছে। তারা আরএসএস ও বিজেপি সরকারকে ভয় পায়।
যুগান্তর : অপপ্রচার যাচাইয়ে ভারতের মিডিয়াকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই আমন্ত্রণে ভারতের সাংবাদিকরা সাড়া দিলেন না কেন?
সৌমিত্র দস্তিদার : ভারতের মিডিয়াগুলোর একটি প্রধান কাজ ছিল ন্যারেটিভ তৈরি করা। আর সেটা তারা করতে সফল হয়েছে। ভারতীয়দের মধ্যে একটি গুজব ছড়িয়ে দিতে পেরেছে। দেখেন, কোনো বিষয় নিয়ে আমার যদি উদ্দেশ্য থাকে আমি কুৎসা করব, তাহলে সে বিষয়টি নিয়ে আমি সবসময় নেতিবাচক কথা বলব। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ও তার প্রেস সেক্রেটারির আমন্ত্রণে যারা এসেছে তাদের ধারণা পালটে গেছে। আমি এমন অনেককে দেখেছি। ভারতেও অনেক ভালো মানুষ আছেন যারা এসব গুজব বিশ্বাস করেন না। বাংলাদেশ নিয়ে মাথাব্যথা নেই। বাংলাদেশে যেসব অভিযোগ নিয়ে ভারতে সোচ্চার হচ্ছে তাদের দৃষ্টিতে ভারতেও এসব সমস্যা আছে। নিজেদের সমস্যা চিহ্নিত না করে পরের সমস্যা নিয়ে ভাবতে অনেকেই নারাজ।
যুগান্তর : ৫ আগস্টের পরের বাংলাদেশ সফরে আছেন। জুলাই অভ্যুত্থান বাংলাদেশের মানুষকে কতটা ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছে? এ দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষার জায়গাটা কি বুঝতে পেরেছেন? ভারত সরকার বুঝতে পারছে না কেন?
সৌমিত্র দস্তিদার : জুলাই বিপ্লবের পরে ভালোও তো কিছু হয়েছে নাকি? দেশটা তো একেবারে গোল্লায় যায়নি। বাংলাদেশে মতপ্রকাশটা অনেক সহজ হয়ে গেছে। আগে চাপ ছিল। চাপ না থাকায় অনেকেই আবার অনেক কথা বলছেন। তবে বাঙালিদের ঐক্যবদ্ধ থাকা বড়ই কঠিন। সবার ভীতিটা কেটে গেছে। বাংলাদেশের মানুষের এই আবেগ, মুক্ত থাকার শক্তি ভারতের বুঝার কথা নয়। অভ্যুত্থানের এই শক্তি তো অনেক বড়। ভারত তো সম্পর্ক করেছে গুটি কয়েক ব্যক্তির সঙ্গে। তরুণদের পেতে ভারতকে অনেক বড় মনের অধিকারী হতে হবে। বড় দেহ দিয়ে সব করা যায় না। তাহলে বনের রাজা হাতি হতো। এটা ভারত যেদিন বুঝতে পারবে সেদিন হয়তো সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে।
যুগান্তর : পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা এবং বিরোধীদলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী পারলে তো এখনই যুদ্ধ বাধিয়ে দেয়। বাংলাদেশ দখল করে নেয়। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধাতেও নানা উসকানি দিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। সাধারণ মানুষকে ক্ষেপিয়ে তুলছেন। তার উদ্দেশ্য কী?
সৌমিত্র দস্তিদার : আমাদের সময় হিন্দু মুসলমান নিয়ে এত কথা ছিল না। এখন যুবকদের মাঝে একটি পার্থক্য সৃষ্টি করেছে। শুভেন্দু বাবুরা এখানে সফল হয়েছে। তারা দেশে একটি জাতিগত, ধর্মগত পার্থক্য গড়ে ফায়দা লুটতে পেরেছে। এটা হতো না যদি বামেরা এই স্রোতের বিপরীতে গিয়ে একটা ভূমিকা নিত। তারাও শুভেন্দু বাবুদের তৈরি করা বয়ান প্রচার করছে।
যুগান্তর : বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও ভারতের দৃষ্টির প্রতিফলন প্রতিষ্ঠা কি আদৌ সম্ভব?
সৌমিত্র দস্তিদার : আমাদের মানুষের মাঝে একটি ন্যারেটিভ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, আওয়ামী লীগ হচ্ছে একমাত্র দল যারা ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ করেছে। প্রথম কথা এই ন্যারেটিভটা মিথ্যা। মুশকিলটা হলো ইতিহাসটা যখন অন্যভাবে দেখার চেষ্টা করি তখন সব গেল গেল বলে রব ওঠে। আমরা ইতিহাসের চর্চা করতে ভালোবাসি না। আমরা গালগল্পে বেশি বিশ্বাস করি। বাংলাদেশ নিয়ে মোদি সরকারের বিশ্বাসটাও ঠিক গালগল্পের মতো। তবে আওয়ামী লীগের রাজনীতি দিয়ে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করা আর সম্ভব নয়।
যুগান্তর : ৪৭ থেকে ৭১, অতঃপর ২০২৪-এই তিনকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন। কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ?
সৌমিত্র দস্তিদার : বাংলাদেশের মানুষের জন্য শেখ হাসিনার বিদায়টা অপরিহার্য ছিল। তিনি ২৪-এ না গেলে ২৫ বা ২৬-এ যেতেনই। একটি ধারাবাহিকতা আছে। জুলাই হঠাৎ করে আকাশ থেকে পড়েনি। ’৬৯, ’৭০-এর মতো ৭১ যেমন অপরিহার্য ছিল, তেমনি ২৪-ও অপরিহার্য ছিল বাংলাদেশের জন্য। ইতিহাস খুব কঠিন ও নির্মম। যা বারবার আঘাত পেয়ে ফের সত্যের ওপর দাঁড়িয়ে যায়। ২৪-এ তাই হয়েছে, যা বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুবই গুরুত্ব বহন করে।
যুগান্তর : ভারতীয় নাগরিক হয়েও বাংলাদেশ প্রশ্নে সত্য উৎঘাটন করে কথা বলেন। নিজ দেশে সমস্যার সম্মুখীন হন না?
সৌমিত্র দস্তিদার : দেখেন, মানুষ পারিবারিক শিক্ষার বাইরে বেরুতে পারে না। আমরা ছোটকাল থেকেই মানুষকে মানুষ হিসাবে চিনেছি। কোনো কিছুতেই পার্থক্য করতে শেখায়নি আমার পরিবার। আমার দেশে যারা ধর্ম বেচে ব্যবসা করে খায়, আমি তাদের ঘৃণা করি। তাদের চোখে আমি শত্রু। সত্য প্রকাশে এসব উগ্রদের কাছে না হয় শত্রু হয়েই থাকলাম। তাই বলে কি সত্য বলা, সত্য দেখা বাদ দেব? এসব করতে কিছু শক্তি আমাকে উৎসাহ জোগায়। তার মধ্যে অন্যতম মওলানা ভাসানী। আমি এই অবিসংবাদিত নেতার আদর্শ অনুসরণ করি। তার নৈতিকতা আমাকে চলার পথে শক্তি জোগায়।
যুগান্তর : এতক্ষণ সময় দিয়ে সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
সৌমিত্র দস্তিদার : আপনাকেও ধন্যবাদ, ধন্যবাদ যুগান্তর পরিবারকে। ভালো থাকুক বাংলাদেশের মানুষ।