আগস্ট অভ্যুত্থানের তথ্য সংরক্ষণের নির্দেশ ট্রাইব্যুনালের
উত্তরায় মুগ্ধ এবং লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতা ফয়েজ হত্যায় অভিযোগ, আসামি শেখ হাসিনাসহ ৪১
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বিভিন্ন ঘটনার তথ্য যাতে মুছে ফেলা না হয়, সব ডিজিটাল তথ্য যাতে সংরক্ষণ করা হয়, সেজন্য ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বৃহস্পতিবার প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে করা এ-সংক্রান্ত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন। সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এদিকে লক্ষ্মীপুর জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. ফয়েজ আহমদকে ২০১৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর নিজ বাসায় গুলি করে হত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪১ জনের নামে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করা হয়েছে।
এছাড়া এদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর উত্তরায় গুলিতে মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ নিহতের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করেছে তার পরিবার।
গণ-অভ্যুত্থানের ডিজিটাল তথ্য সংরক্ষণে এনটিএমসি-বিটিআরসিকে নির্দেশ : চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ডেটা (তথ্য) এনটিএমসি ও বিটিআরসির কাছে সংরক্ষিত আছে, সেসব একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুছে (ডিলিট) যায়। ট্রাইব্যুনালসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন, যেন এসব গুরুত্বপূর্ণ ডেটা আলাদাভাবে সংরক্ষণ করা হয়। এসব ডেটা ভবিষ্যতে বিচারকাজে প্রয়োজন হতে পারে।
এদিকে ডা. ফয়েজ আহমদকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় তার বড় ছেলে ডা. হাসানুল বান্না বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করেছে। আসামিদের মধ্যে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা তারেক আহাম্মদ ছিদ্দিকী, সাবেক এডিজি র্যাব মে. জে. জিয়াউল আহসান, র্যাব-১১ এর সাবেক সিইও তারেক সাইদ মোহাম্মদ। অভিযোগ দাখিলের পর এক লিখিত বক্তব্যে হাসানুল বান্না জানান, ২০১৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ডা. ফয়েজ আহমেদের নিজ বাসার ছাদে নিয়ে আঘাত করে, গুলি করে ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হয়েছে।
ডা. ফয়েজ আহমেদ অত্যন্ত মানবিক ডাক্তার হিসাবে পরিচিত এবং লক্ষ্মীপুর জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ছিলেন। ২০১৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর রাতে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সরকারি বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত হয়ে র্যাবের স্টিকারযুক্ত একটি গাড়িতে করে এসে বাসার লোহার গেট ভেঙে ডা. ফয়েজকে বাসার দোতলার কক্ষ থেকে ধরে নিয়ে ভবনের ছাদে নিয়ে যায়। এ সময় আগ্নেয়াস্ত্রের বাঁট দিয়ে মাথার সম্মুখ ভাগ ও নাক-মুখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি পেটানো হয়। এক পর্যায়ে ডান হাঁটুর ওপরে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করা হয়, তাতে ওই স্থানে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়। পরে ছাদের ওপর থেকে মাথা নিচের দিকে রেখে ফেলে দেওয়া হয়। পরে তারা মরদেহটি সদর হাসপাতালে রেখে যায়। মানবতাবিরোধী এই অপরাধটি সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
মুগ্ধ নিহতের ঘটনায় অভিযোগ : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর উত্তরায় গুলিতে মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ নিহতের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে কারও নাম উল্লেখ না করে এ অভিযোগ করেন মুগ্ধর ভাই স্নিগ্ধ।
গত ১৮ জুলাই উত্তরার আজমপুরে সংঘর্ষের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন মুগ্ধ। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনলাসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০২৩ সালে গণিতে স্নাতক পাশের পর বিইউপিতে এমবিএ করছিলেন মীর মুগ্ধ।