১৭ বছর পর কারামুক্ত বিএনপি নেতা বাবর
ঢাকায় নেতাকর্মীদের ঢল, নেত্রকোনায় আনন্দের বন্যা * যারা অন্যায়ভাবে সাজা দিয়েছিল তারা প্রায়শ্চিত্ত করছে-স্ত্রী তাহমিনা জামান শ্রাবণী
যুগান্তর প্রতিবেদন ও নেত্রকোনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সাড়ে ১৭ বছর কারাবাসের পর সব মামলায় খালাস পাওয়ায় অবশেষে কারামুক্ত হলেন বিএনপি নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। বৃহস্পতিবার কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি মুক্ত হন। এর আগে সকালে বাবরের জামিনের কাগজপত্র কারাগারে পৌঁছায়। যাচাই-বাছাই শেষে দুপুর ২টার দিকে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে তার মুক্তির অপেক্ষায় কারাগারের সামনে নেতাকর্মীদের ঢল নামে। কারাগারের সামনে অবস্থান করেন স্বজন ও নেতাকর্মীরা। তার নির্বাচনি এলাকা নেত্রকোনা থেকেই ঢাকায় আসেন ৫০ হাজার নেতাকর্মী। কারামুক্তির পর কারাফটকে তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন তারা।
কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন্স-ঢাকা বিভাগ) মো. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ছয়জন কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। অন্যরা হলেন-কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ থেকে বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার (অব.) সাহাবুদ্দিন আহম্মদ, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে এনএসআইয়ের সাবেক ফিল্ড অফিসার আকবর হোসেন খান, সিইউএফএলের সাবেক এমডি মহসিন উদ্দিন তালুকদার, এনএসআই ডিজি ও ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী এবং কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন মেজর (অব.) এম লিয়াকত হোসেন।
এর আগে মঙ্গলবার সর্বশেষ আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের দায় থেকে খালাস পান বাবর। বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
লুৎফুজ্জামান বাবর কেরানীগঞ্জের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করেন। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, সহসাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল আলমসহ কেন্দ্রীয় ও বাবরের নির্বাচনি আসনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
বাবরের স্ত্রী তাহমিনা জামান শ্রাবণী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় গণমাধ্যমকে বলেন, ১৭ বছর পর আদালতের রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া প্রকাশ করছি। যারা অন্যায়ভাবে তাকে সাজা দিয়েছিল। আজ তারা তাদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করছে।
বাবরের চাচাতো ভাই শিক্ষক মো. মাহমুদুর রহমান মীর্জা বলেন, যারা আমাদের বাবরকে সাজানো মামলায় ফাঁসির রায় দিয়েছিল। তারা আজ দেশছাড়া। তাদের জন্য আজ ঝুলছে ফাঁসির রশি! এটাই হচ্ছে ইতিহাসের নির্মম সত্য।
বাবরের মুক্তির খবরে তার নির্বাচনি এলাকা নেত্রকোনার মদনসহ গোটা জেলায় মানুষের মাঝে দেখা গেছে উল্লাস। কৃষক শ্রমিক, রিকশাচালক, শ্রমজীবী মানুষের মাঝে মুখে মুখে ভেসে বেড়াচ্ছে তার মুক্তির খবর। স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রিয় নেতাকে স্বাগত জানাতে নেত্রকোনা থেকে আড়াই শতাধিক বাস ও তিন শতাধিক মাইক্রোবাস এবং পাবলিক পরিবহণে কেরানীগঞ্জে গেছেন কয়েক হাজার নেতাকর্মী।
মদন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম আকন্দ যুগান্তরকে বলেন, অন্তত ৫০ হাজার মানুষ ঢাকায় গেছে নেতাকে বরণ করতে। আশা করি তিনি আবারও এলাকার সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে হাল ধরবেন।
খালিয়াজুরি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুর রউফ স্বাধীন বলেন, যারা সাজানো মামলায় আমাদের নেতাকে ফাঁসির রায় দিয়েছিল। তাদের জন্য ঝুলছে ফাঁসির দড়ি।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এসএম মনিরুজ্জামান দুদু বলেন, বাবর ভাইয়ের মুক্তির খবরে নেত্রকোনায় আনন্দের বন্যা বইছে। বিশেষ করে ভাটি উপজেলা হিসাবে খ্যাত মদন-মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরিতে দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নেত্রকোনা-৪ আসন থেকে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন লুৎফুজ্জামান বাবর। এরপর ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের সপ্তম ও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ-সদস্য হন। তিনি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।
২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রামের সিইউএফএল ঘাট থেকে ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালান জব্দ করা হয়। এ নিয়ে কর্ণফুলী থানায় অস্ত্র আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে দুটি মামলা হয়। মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ রায় দেন।
এর মধ্যে অস্ত্র চোরাচালান মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী (অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর), সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া এবং দুটি গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৪ জনকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। অস্ত্র আইনে করা অন্য মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছিল একই আসামিদের।