১২ বছর পর মুক্ত ডেসটিনির রফিকুল
সাবেক সেনাপ্রধান হারুনসহ ১৯ জনের কারাদণ্ড
আদালত প্রতিবেদক ও কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
মালটিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানি (এমএলএম) ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীন ১২ বছর পর কারামুক্ত হলেন। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
এর আগে গ্রাহকের ২২৫৮ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে রফিকুল আমীন ও ডেসটিনির পরিচালক সাবেক সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারুনুর রশিদসহ ১৯ জনকে ১২ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত। পাশাপাশি তাদের ৪৫১৫ কোটি ৫৭ লাখ ৫৪ হাজার ৪৫৪ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক মো. রবিউল আলম এ রায় দেন। তবে, রফিকুল আমীন ১২ বছর ধরে কারাগারে আছেন। রায়ে আদালত জানান, কারাগারে থাকার বয়স সাজা থেকে বাদ যাবে। সেক্ষেত্রে তার সাজা শেষ হয়ে গেছে। তার বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা না থাকায় তিনি কারামুক্তি পান।
এদিকে, রফিকুল আমীনের মুক্তির খবরে বিকাল থেকেই ডেসটিনির সদস্যরা কারাফটকে ভিড় জমাতে থাকেন। সন্ধ্যার পর মুক্ত হয়েই ডেসটিনি এমডি ছাদখোলা প্রাইভেট কার থেকে প্রতিষ্ঠানটির সদস্য ও কর্মীদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান।
দণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন-প্রধান কার্যালয়ের চেয়ারম্যান মো. হোসেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ গোফরানুল হক, সাইদ-উর রহমান, মেজবাহ উদ্দিন স্বপন, ইঞ্জিনিয়ার শেখ তৈয়েবুর রহমান ও গোপাল চন্দ্র বিশ্বাস, পরিচালক সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, ইরফান আহমেদ সানী, ফারহা দিবা ও জামসেদ আরা চৌধুরী, প্রফিট শেয়ারিং ডিস্ট্রিবিউটর জসিম উদ্দীন ভূঁইয়া, ডেসটিনি মালটিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন ও সদস্য আবুল কালাম আজাদ, ডায়মন্ড এক্সিকিউটিভ এসএম আহসানুল কবির বিপ্লব, জোবায়ের সোহেল ও আব্দুল মান্নান এবং ক্রাউন এক্সিকিউটিভ মোসাদ্দেক আলী খান। আসামিদের মধ্যে রফিকুল আমীন, তার স্ত্রী ফারহা দিবা ও মোহাম্মদ হোসেন কারাগারে আছেন। রায় ঘোষণার আগে তাদের আদালতে হাজির করা হয়। জামিনে থাকা অবরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারুনুর রশিদও আদালতে হাজির হন। অপর ১৫ আসামি পলাতক। আদালত তাদের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। জানা যায়, আইন ও বিধি লঙ্ঘন করে ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের শীর্ষ কর্মকর্তারা গাছ বিক্রির নামে ২ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। এর মধ্যে ঋণপত্র (এলসি) হিসাবে ৫৬ কোটি ১৯ লাখ ১৯ হাজার ৪০ টাকা এবং সরাসরি আরও ২ লাখ ৬ হাজার মার্কিন ডলার পাচার করা হয়। এ অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) রাজধানীর কলাবাগান থানায় ২০১২ সালের ৩১ জুলাই মামলা দুটি করে। ২০১৪ সালের ৪ মে একটি মামলায় ১৯ জনের এবং অপর মামলায় ৪৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ১২ মে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ এবং বেআইনিভাবে অর্থ পাচারের অভিযোগে করা মামলায় এমডি রফিকুল আমীনকে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া, হারুন অর রশীদসহ ৪৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
আসামিপক্ষের আইনজীবী এহসানুল মাহবুব সমাজী জানান, রফিকুল আমীন, তার স্ত্রী ফারহা দিবা এবং মোহাম্মদ হোসেনকে এদিন আদালতে হাজির করা হয়। জামিনে থাকা হারুনুর রশিদও আদালতে ছিলেন। রায় ঘোষণার পর সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পলাতক বাকি ১৫ আসামির বিরুদ্ধে সাজা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন বিচারক।