Logo
Logo
×

শেষ পাতা

নারায়ণগঞ্জে অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ

সন্দেহজনক ব্যয় প্রস্তাবে অনুমোদন মেলেনি

পর্যালোচনার নির্দেশ * পানগাঁওয়ের আগেই এটি করা উচিত ছিল বলে মনে করছে একনেক

হামিদ-উজ-জামান

হামিদ-উজ-জামান

প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সন্দেহজনক ব্যয় প্রস্তাবে অনুমোদন মেলেনি

অতিরিক্ত ব্যয় ধরা হয়েছে-এমন সন্দেহ এবং অপচয় রোধে অনুমোদন দেওয়া হয়নি নারায়ণগঞ্জের ‘খানপুরে অভ্যন্তরীণ কনটেইনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ’ প্রকল্প। অনুমোদিত মোট ব্যয় থেকে ২২৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বাড়িয়ে প্রথম সংশোধনের প্রস্তাব করা হয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে। কিন্তু বিভিন্ন ব্যয় বেশি ধরে প্রস্তাব করা হতে পারে এবং এটি কতটুকু কার্যকর হবে, তা নিয়ে সন্দেহ ও প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। ফলে পর্যালোচনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৮ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থাপন করা হলেও অনুমোদন না দিয়ে প্রকল্পটি ফেরত দেওয়া হয়। খরব সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৩৯২ কোটি টাকা। প্রথম সংশোধিত প্রস্তাবে ২২৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হয় ৬১৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এছাড়া অনুমোদনের সময় ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের জুন-আড়াই বছরে এটি বাস্তবায়নের কথা ছিল। পরবর্তী সময়ে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া ২০২৫ সালের জনু পর্যন্ত আরও ২ বছর বাড়ানো হয়। এতেও কাজ শেষ না হলে প্রথম সংশোধনীতে এসে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত দুই বছর মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নে গতি ছিল ধীর। প্রায় ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও আর্থিক অগ্রগতি মাত্র ৩ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ১০ শতাংশ। এত কম অগ্রগতি কেন হয়েছে এবং ব্যয় বৃদ্ধির কারণ ভালোভাবে পর্যালোচনা করতে বলা হয়েছে বৈঠকে। এটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

এ প্রসঙ্গে একনেক বৈঠকে অংশ নেওয়া এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রোববার যুগান্তরকে বলেন, সংশোধনীর জন্য প্রস্তাবিত প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ২০১৩ সালে বুড়িগঙ্গার তীরে কেরানীগঞ্জে দেশের একমাত্র পানগাঁও অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনালটি তেমন ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারছে না। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। যে প্রত্যাশা নিয়ে এটি তৈরি হয়েছিল, এর কিছুই পূরণ হয়নি। ফলে সেখানে বড় অঙ্কের অপচয় হয়েছে বলে মনে করছে সরকার। এ নিয়ে একনেক বৈঠকে অনেকেই মন্তব্য করেন, পানগাঁও টার্মিনাল না করে নারায়ণগঞ্জের খানপুরের প্রকল্পটি আগে বাস্তবায়ন করা উচিত ছিল। তাহলে সেটি অনেক কার্যকর হতো। সেক্ষেত্রে পানগাঁও না হলেও হয়তো চলত। এজন্য প্রথম সংশোধিত প্রকল্পটি বাতিল করা হচ্ছে না। তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ব্যয় ধরা এবং অর্থ অপচয় যাতে না হয়, সেজন্য অধিকতর পর্যালোচনা প্রয়োজন। তাই প্রকল্পটি অনুমোদন না দিয়ে ফেরত দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্প সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কনটেইনার এবং বাল্ক টার্মিনাল স্থাপন হলে বৃহত্তর রাজধানী ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় কনটেইনার ও বাল্ক পরিবহণব্যবস্থা বেগবান হবে। ফলে ভবিষ্যতে নতুন শিল্প স্থাপনে উদ্যোক্তারা উৎসাহ পাবেন। পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, গাজীপুর, সাভার, মানিকগঞ্জ, নরসিংদীসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের কিছু জেলায়ও কনটেইনার পরিবহণ চালু করা যাবে। সে অনুযায়ী খানপুরে আইসিটি (ইনল্যান্ড কনটেইনার টার্মিনাল) প্রকল্প নির্মাণের জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের বিষয়টি নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়। পরে ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে নৌ-যোগাযোগে কনটেইনার এবং বাল্ক পরিবহণের গুরুত্ব বিবেচনায় নারায়ণগঞ্জ অভ্যন্তরীণ নৌবন্দরটিকে আধুনিকায়ন করার জন্য মূল প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়।

প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে নতুন অঙ্গ অন্তর্ভুক্তি, রেট শিডিউল ও বাজারদর পরিবর্তন, প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি প্রভৃতি কারণে মোট ৬৯৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এতে অনুমোদিত ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) থেকে প্রস্তাবিত প্রথম সংশোধিত ডিপিপিতে ব্যয় ২২৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা (৫৭ দশমিক ০৮ শতাংশ) বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ সংশোধনের কারণ হিসাবে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলেন, আরিচা ও কাঁচপুর এলাকায় গোডাউন এবং গোডাউনসংশ্লিষ্ট স্থাপনাসহ স্টিল র‌্যাক ও প্লাস্টিক প্যালেট স্থাপন প্রভৃতি নতুন আইটেম যুক্ত করা হয়েছে। ফলে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী কনটেইনার পোর্টের জন্য প্রতি বর্গমিটারে আগের ২ টনের পরিবর্তে ৫ টন লাইভলোড বিবেচনায় কনটেইনার বহনে সক্ষম আরসিসি মাল্টিপারপাস জেটির ডিজাইন করা হয়েছে। সয়েল টেস্ট অনুসারে জেটি নির্মাণস্থানের মাটির স্তর নরম হওয়ায় ফাউন্ডেশন ব্যয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে। পোর্ট এলাকার নদীর পাড় স্লোপ প্রটেকশনের পরিবর্তে ভার্টিক্যালি প্রটেকশন পাইলসহ (আরসিসি রিভেটমেন্ট, আরসিসি কি-ওয়াল) ডিজাইন করায় ফাউন্ডেশন ব্যয়সহ প্রাক্কলিত মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।

এনইসি-একনেক ও সমন্বয় অনুবিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা রোববার যুগান্তরকে বলেন, একনেকে বৈঠকে উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন পানগাঁও অভ্যন্তরীণ পোর্ট এবং খানপুরের টার্মিনাল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। পরে আরও অনেকেই এ বিষয়ে কথা বলায় শেষ পর্যন্ত পর্যালোচনার নির্দেশ আসে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে। আমরা সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে বলেছি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম