Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ঢাকা ট্রেড সেন্টারে দোকান বাণিজ্য

খোলস বদলে সক্রিয় হচ্ছে স্বৈরাচারের সুবিধাভোগীরা

আফজাল গংয়ের বিরুদ্ধে মামলা করায় বাদীকে হত্যার হুমকি * আসামি করা হয়েছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের হত্যা মামলায়

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

খোলস বদলে সক্রিয় হচ্ছে স্বৈরাচারের সুবিধাভোগীরা

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মার্কেটগুলোতে কর্তৃত্ব ধরে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে স্বৈরাচার সরকারের সুবিধাভোগীরা। পরিস্থিতি বদলের পর খোলস পালটে নতুন পরিচয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে সাবেক এমপি আফজাল গংয়ের সদস্যরা। বিএনপিতে ভর করে আগের দাপট ধরে রাখতে অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কেউ কেউ। ইতোমধ্যে বিভিন্ন কমিটিতে পদ-পদবিও বাগিয়ে নিয়েছেন আওয়ামী লীগ আমলের সুবিধাভোগীরা। এতে গত দেড় দশকে ট্রেড সেন্টারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা বলছেন, দোকান বাণিজ্যে সুবিধাভোগী চক্রের অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ করতে গিয়ে গত সরকারের সময়ে মামলা-হয়রানির শিকার হয়েছিলেন অনেক ব্যবসায়ী। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ৫ আগস্টের পর পরিস্থিতির পরিবর্তন হলে ক্ষতিগ্রস্ত সেসব ব্যবসায়ীরা মুখ খুলতে শুরু করেন। এর মধ্যে কিশোরগঞ্জের সাবেক এমপি আফজাল গংসহ মার্কেট বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ব্যবসায়ী কামাল হোসেন রিপন।

পুলিশও আসামিদের কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে। তবে আফজাল গংয়ের বিরুদ্ধে মামলা করে এখন জীবন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন বাদী। তার অভিযোগ, আফজাল গংয়ের বিরুদ্ধে মামলা করার কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে দোকান বাণিজ্যে জড়িত জালিয়াত চক্র। সেই শত্রুতা থেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একাধিক হত্যা মামলায় তাকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন নিয়মিত প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে হত্যার হুমিক দিয়ে যাচ্ছে মামলার আসামিদের ঘনিষ্ঠরা। এসএ পরিবহণে কুরিয়ার করে পাঠানো হয়েছে হত্যার হুমকিও। বর্তমানে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে বাদী কামাল হোসেনকে।

সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ঢাকা ট্রেড সেন্টার উত্তর এবং ঢাকা ট্রেড সেন্টার দক্ষিণে ১৯৩টি দোকান বরাদ্দে জালিয়াতি করে কয়েকশ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে কিশোরগঞ্জের সাবেক এমপি আফজালচক্র। কাগজপত্র জালিয়াতি করে ভুয়া ছবি ও পরিচয়পত্র ব্যবহার করে ঢাকা ট্রেড সেন্টার উত্তরের ১৪৪টি ও ঢাকা ট্রেড সেন্টার দক্ষিণে ৪৯টি দোকান বরাদ্দ দিয়ে এসব অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। প্রতিটি দোকান থেকে তারা ৭০-৮০ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলেছেন, আওয়ামী লীগ শাসনামলের গত দেড় দশকে দক্ষিণ সিটির সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন, সাবেক মেয়র ব্যারিস্টার তাপস ও কিশোরগঞ্জের এমপি আফজাল গং ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল গুলিস্তানকেন্দ্রিক সরকারি মার্কেটগুলোতে। মূলত এই প্রভাবশালীদের সামনে রেখে মাঠের অনিয়ম-দুর্নীতি বাস্তবায়ন করেছিলেন দেলোয়ার হোসেন দেলু, নাজমুল হুদা, মোজাম্মেল হক মজু, হুমায়ুন কবির মোল্লা ও জহিরুল ইসলাম সিন্ডিকেট। তাদের সবাই আওয়ামী লীগ আমলে মার্কেট মালিক সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদে ছিলেন। এর মধ্যে ট্রেড সেন্টারের উত্তরের সভাপতি ছিলেন নাজমুল ও সাধারণ সম্পাদক মজু। আর ট্রেড সেন্টার দক্ষিণের সভাপতি ছিলেন হুমায়ুন ও সাধারণ সম্পাদক এমপি আফজাল।

তাপস-আফজাল গংয়ের বিরুদ্ধে মামলার বাদী ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী কামাল হোসেন রিপন বলেন, তাপস ও আফজালসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ এবং ২০-২২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে অবৈধ পন্থায় অতিরিক্ত তৈরি ৫৯১টি দোকান বরাদ্দ দিয়ে ২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া বহুতল ভবন নির্মাণের অজুহাতে আগুন দিয়ে মার্কেট পুড়িয়ে দিয়ে শত শত ব্যবসায়ীকে পথে নামিয়ে দেওয়া হয়। এর আগে স্বৈরাচার সরকারের আমলে ঢাকা ট্রেড সেন্টারের উত্তর ও দক্ষিণে অবৈধভাবে নকশাবহির্ভূত অতিরিক্ত দোকান তৈরির ঘটনায়ও উচ্চ আদালতে রিট করেছিলেন।

কামাল হোসেন রিপন আরও বলেন, আফজাল গংয়ের বিরুদ্ধে মামলা ও আসামি নাজমুলকে গ্রেফতারের পর থেকে একটি পক্ষ আমাকে হয়রানি করে যাচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের হত্যা মামলার আসামি করেছে। আমার ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়াসহ নিয়মিত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এসএ পরিবহণে পার্সেল পাঠিয়ে হুমকিও দিয়েছে। এখন জীবন রক্ষায় পালিয়ে বেড়াচ্ছি।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সরকার পরিবর্তনের পর আওয়ামী আমলের সুবিধাভোগীরা আত্মগোপন করলেও ঢাকা ট্রেড সেন্টার উত্তরের সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক মজু কর্তৃত্ব ধরে রাখতে নানা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। নানা তদবির করে পদও বাগিয়ে নিয়েছেন ঢাকা মহানগর বিএনপিতে। রামগঞ্জ স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী জানান, ২০০৮ সালে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার দুর্দিনের এমপি নাজিম উদ্দিনকে আহ্বায়ক থেকে বাদ দিয়ে কৌশলে রামগঞ্জ উপজেলা বিএনপির অহ্বায়ক হন মজু। তাকে পদ দেওয়ার পরে উপজেলা বিএনপি কয়েকভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে।

রামগঞ্জ বিএনপির পদদারী দুজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, মোজাম্মেল হক মজু রামগঞ্জ বিএনপিতে বিভক্তি সৃষ্টি করেছেন। অধিকাংশ বিএনপি নেতাই তার কার্যকলাপ পছন্দ করেন না। মজু আওয়ামী লীগ আমলে তাদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ৫ আগস্ট হাসিনা সরকার পতনের পর আবার বিএনপি সাজার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে টাকার জোরে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপিতে সদস্য পদ বাগিয়ে নিয়েছেন।

পুরোনো নথিপত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, হাসিনা সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন মোজাম্মেল হক মজু। ‘রাতের ভোটের’ সংসদ-সদস্য খ্যাত লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ-সদস্য আনোয়ার খানের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একসঙ্গে মঞ্চে বসেছিলেন। রামগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহানের সঙ্গেও আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানেও একই মঞ্চে অংশ নিতে দেখা গেছে।

অভিযোগের বিষয়ে মোজাম্মেল হক মজু যুগান্তরকে বলেন, বঙ্গবাজারের কিছু ব্যবসায়ী ও রামগঞ্জ স্থানীয় বিএনপির একটি গোষ্ঠী চক্রান্ত করে আমার বিরুদ্ধে নানা তথ্য ছড়াচ্ছে। তারা ঈর্ষান্বিত হয়ে ষড়যন্ত্র করছে।

বিএনপিতে পদ পাওয়ার বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু যুগান্তরকে জানান, মোজাম্মেল মজু আগেও বিএনপিতে ছিলেন। তবে বড় ব্যবসায়ী হওয়ার কারণে অনেকের সঙ্গে কৌশলে সুসম্পর্ক রাখতে হয়েছিল।

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম