Logo
Logo
×

শেষ পাতা

আজ থেকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে

পৌষের শেষে ফের শীতের দাপট

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পৌষের শেষে ফের শীতের দাপট

ফাইল ছবি

মাঝে কদিন শীতের অনুভূতি কিছুটা কম থাকলেও পৌষের শেষে দেশজুড়ে হাড়কাঁপানো শীত পড়ার আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বুধবার সকাল থেকেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা কুয়াশার চাদরে ঢাকা ছিল। দেখা মেলেনি সূর্যের। কুয়াশার সঙ্গে ছিল শীতের হিমেল হাওয়া। ফলে শীতের অনুভূতি কিছুটা বেড়েছে। আজ থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

এছাড়া জানুয়ারিতে দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে একাধিক শৈত্যপ্রবাহের আভাস আছে। অধিদপ্তর বলছে, চলতি মাসে মৃদু থেকে মাঝারি পর্যায়ের শৈত্যপ্রবাহ থাকবে একটি থেকে তিনটি। এছাড়া একটি থেকে দুটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে দেশজুড়ে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বুধবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যশোরে রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্যদিকে ইতোমধ্যেই কমতে শুরু করেছে ঢাকার তাপমাত্রা। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে কোথাও কোথাও তাপমাত্রা বাড়তেও দেখা গেছে। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে বুধবার দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া উত্তরবঙ্গের অন্য জেলাগুলোতেও তাপমাত্রা খুব একটা কমতে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তারপরও জেলাগুলোতে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ১৪ জানুয়ারির মধ্যে দেশজুড়ে মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার একটি শৈত্যপ্রবাহ বইতে পারে। তবে সেটি বেশিদিন স্থায়ী হবে না। খুব স্বল্প সময়ের জন্য থাকতে পারে। আগামী সপ্তাহের শেষের দিকে শীতের তীব্রতা কিছুটা কমে আসবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর কয়েকদিন পর জানুয়ারির শেষ ১০ দিনে আরও এক থেকে দুটি মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ আসতে পারে। ওই সময় রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, যশোর, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া এবং চুয়াডাঙ্গায় শীত বেশি অনুভূত হতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমান বুধবার বলেন, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে এলে আমরা তাকে শৈত্যপ্রবাহ বলি। কিন্তু বর্তমানে দেশের কোথাও শৈত্যপ্রবাহ নেই। তারপরও মানুষের মধ্যে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। মেঘ ও কুয়াশা থাকার কারণে দিনের তাপমাত্রা অনেক কমে এসেছে। ফলে দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমেছে।

ফের শীতের তীব্রতা বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। বিশেষ করে ভোর থেকে রাত অবধি ঘরের বাইরে কাজ করতে হয় এমন শ্রমজীবী সাধারণ মানুষ। হাঁড়কাপানো শীতে তারা তাদের দৈনন্দিন কাজ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। শীতে কাবু হয়ে পড়েছে শিশু ও বয়স্কসহ নানা বয়সি মানুষ। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল এবং অভ্যন্তরীণ নদী পরিবহণ ও সড়ক যোগাযোগ সাময়িকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে শীতের তীব্রতা বাড়ায় বাড়ছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্তের সংখ্যা।

বুধবার আবহাওয়ার নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়েছে, সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা ২ থেকে তিন এবং দিনের তাপমাত্রা ২ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে দিনের বেলা শীতের অনুভূতি বাড়তে পারে। আর মধ্য রাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত এ পরিস্থিতি থাকতে পারে। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

কুড়িগ্রাম : তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলেও কমেনি শীতের তীব্রতা। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও হিমেল বাতাসে কনকনে ঠান্ডায় কাহিল হয়ে পড়েছে জেলার জনজীবন। শহরে লোকসমাগমও ছিল কম। বৃষ্টিময় আবহাওয়ার কারণে মানুষজন প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে আসেনি। শীতকষ্টে পড়েছেন অতি দরিদ্র ছিন্নমূল, শ্রমজীবী এবং নদ-নদী তীরবর্তী চরাঞ্চলের মানুষ। প্রচণ্ড ঠান্ডায় লোকজন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বাইরে যাচ্ছেন না। বুধবার সকাল ৯টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পরিমাপ করেছে কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। যা গতকালের তুলনায় ২ ডিগ্রি বেশি।

জয়পুরহাট : এই কয়েক দিনের রোদ ঝলমলে আবহাওয়া দেখে মনে হচ্ছিল, শীত বুঝি বিদায় নিতে যাচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ দুদিন থেকে দৃশ্যপট পরিবর্তন হয়ে হালকা কুয়াশার সঙ্গে হিমশীতল ঠান্ডা বাতাস বইতে শুরু করায় হঠাৎ করে জয়পুরহাট জেলা ও এর আশপাশের এলাকায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে।

যশোর : দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে। বুধবার সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল থেকেই ঘন কুয়াশা আর হিমেল বাতাসে কনকনে শীত অনুভূত হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝলমলে রোদে গা তাপিয়ে নেওয়ার সুযোগ মিললেও গোটা জনপদে শীত অনুভূত হচ্ছে। রোদের মধ্যেও সোয়েটার-জ্যাকেট পরে চলাচল করতে হচ্ছে।

সিলেট : সিলেটে সারা দিনেও সূর্যের দেখা মেলেনি। কুয়াশার চাদরে ঢাকা ছিল সারা দিন। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশার সঙ্গে হিমশীতল বাতাসও ছিল। চারদিক যেন কুয়াশার চাদরে মোড়া। ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত এই শীত থাকতে পারে। পশ্চিমা লঘুচাপের নিম্নমুখী অংশ উত্তর-পশ্চিম ভারতের হিমালয় পর্বতের কাশ্মীর এলাকা থেকে ঠান্ডা বাতাস বয়ে নিয়ে আসছে। এই হিমেল বাতাসের প্রবাহ ভারতের মধ্য ও উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলো পেরিয়ে পূর্ব দিকে আসছে। বুধবার সকাল থেকে তা বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

বরিশাল : গত ২ দিন বরিশালে সূর্যের দেখা পাওয়া গেলেও বুধবার আবার সূর্যের দেখা মেলেনি। ঘন কুয়াশায় দিনভর বিরাজ করেছে শীতের তীব্রতা। মেঘলা আকাশ এবং ঘন কুয়াশায় শীত বেশি অনুভূত হয়েছে। ঘন কুয়াশার কারণে সকালের দিকে নৌ ও সড়কপথে যান চলাচল কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। দিনভর শীতের কারণে চরম ভোগান্তির চিত্র ফুটে ওঠে কর্মস্থলে যাওয়া ও খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের জনজীবনে।

ভোলা : ভোলায় শৈত্যপ্রবাহের জেরে বুধবার সকাল থেকে তীব্র কালশীত পড়তে শুরু করেছে। দিনভর কুয়াশায় ঢাকা থাকায় সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। এদিকে ভোর থেকে কুয়াশার কারণে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল করতে পারেনি। নাব্য সংকট ও কুয়াশার কারণে চট্টগ্রাম থেকে খুলনাগামী রুটের শতাধিক জ্বালানি তেল ও পণ্যবাহী জাহাজ ভোলার মেঘনা নদীতে আটকে থাকে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম