আদাবরে হত্যা মামলা
ঢাকায় যাননি ১০ বছরেও, আসামি তালতলীর বৃদ্ধ
যুগান্তর প্রতিবেদন, আমতলী (বরগুনা)
প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রতীকী ছবি
তালতলী উপজেলার ৭৭ বছর বয়সি মো. লিয়াকত হাওলাদার ১০ বছরেও ঢাকায় যাননি। অথচ ঢাকার আদাবরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হত্যা মামলায় তিনিসহ তার দুই ছেলেকে আসামি করা হয়েছে। অরাজনৈতিক পরিবারের তিনজনকে হত্যা মামলার আসামি করায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের দ্রুত অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখেরটেক এলাকার জাবেদ আলীর ছেলে আলী মিয়া সন্ত্রাসীদের গুলিতে গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালে ২৫ জুলাই আলী মারা যান। এ ঘটনায় গত বছরের ১৪ নভেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আলীর চাচাতো ভাই তোহা খান বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১২৭ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় তালতলী উপজেলার শারিকখালী ইউনিয়নের উত্তর বাদুরগাছা গ্রামের লিয়াকত হাওলাদারকে ১৩নং, আবুল কালাম হাওলাদারকে ১৫নং এবং গোলাম মোস্তফা হাওলাদারকে ১৯নং আসামি করা হয়। মোস্তফা স্থানীয় মসজিদের ইমাম এবং কালাম ব্যবসায়ী।
মামলার বাদী তোহা খান বলেন, আমার ভাইয়ের হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদেরই আসামি করা হয়েছে। তালতলীর তিন আসামিকে চেনেন কি না-এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি। তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহজালাল বলেন, ডিএমপির আদাবর থানা থেকে এ তিনজনের নামপরিচয় শনাক্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলেছে। ওই অনুসারে প্রতিবেদন দেওয়া হবে। ডিএমপির আদাবর থানার ওসি মাহফুজ ইমতিয়াজ ভুঁইয়া মোবাইল ফোনে জানান, মামলাটির তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিনা অপরাধে কাউকে হয়রানি করা হবে না।
আবুল কালাম ও গোলাম মোস্তফার অভিযোগ, আমাদের ৭৭ বছর বয়সি বাবা ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারেন না। ঢাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের ওপর তিনি কীভাবে গুলি চালালেন? আমরা দুই ভাই পাঁচ বছরে একবারও ঢাকায় যাইনি। কীভাবে আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের ওপর হামলা চালালাম? তারা বলেন, আমাদের পরিবারের কেউ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নয়। একটি কুচক্রীমহল ষড়যন্ত্রমূলক আমাদের আসামি করেছে। তদন্ত করলেই এর সত্যতা বেরিয়ে আসবে। এমন মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা।
লিয়াকত হাওলাদার বলেন, আমি ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারি না। অন্যের সহযোগিতায় মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করি। ২০১৪ সালে হজে যাওয়ার সময় আমি ঢাকায় গিয়েছি। এরপর ঢাকায় যাইনি। আমার দুই ছেলেও পাঁচ বছরে ঢাকায় যায়নি। অথচ আমাকে ও আমার দুই ছেলেকে হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে। এ হত্যা মামলা থেকে আমাদের দ্রুত অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
স্থানীয় দেলোয়ার খান ও ইব্রাহিম হাওলাদার বলেন, লিয়াকত হাওলাদার ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারেন না। তিনি কীভাবে ঢাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলি চালালেন? এ মিথ্যা মামলা থেকে তাদের নাম প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।