Logo
Logo
×

শেষ পাতা

টেকসই জ্বালানিতে যাওয়ার উদ্যোগ

নতুন দুটি গ্যাস অনুসন্ধান কূপ খননের উদ্যোগ

হামিদ-উজ-জামান

হামিদ-উজ-জামান

প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নতুন দুটি গ্যাস অনুসন্ধান কূপ খননের উদ্যোগ

গ্যাসের উৎপাদন বাড়িয়ে টেকসই জ্বালানি ব্যবস্থা তৈরি করতে চায় সরকার। এর অংশ হিসাবে নতুন করে দুটি গ্যাস অনুসন্ধান কূপ খনন করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এজন্য ‘ডুপিটিলা-১ ও কৈলাশটিলা-৯নং কূপ (অনুসন্ধান কূপ) খনন’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৪৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৪১৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ২৩০ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। আজ ৮ জানুয়ারি প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল)।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে-নতুন ২টি অনুসন্ধান কূপ খনন, বৈদেশিক পরামর্শক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান নিয়োগ এবং ১৪ কিমি. গ্যাস গ্যাদারিং পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, নতুন কূপ খনন করে গ্যাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া গেলে ডুপিটিলা-১ ও কৈলাশটিলা-৯নং কূপ দুটি হতে প্রথম ৫ বছরে ২০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস উত্তোলন করা হবে। এছাড়া পরবর্তী ৫ বছরে ১২ মিলিয়ন ঘনফুট হারে অর্থাৎ ১০ বছরে মোট ৫৬ বিসিএফ গ্যাস উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদার আংশিক পূরণ করা হবে।

সম্প্রতি গ্যাসসংক্রান্ত একটি প্রকল্পের বিষয়ে বলতে গিয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছিলেন, আমাদের সিলেট ও মৌলভীবাজার অঞ্চলে প্রচুর গ্যাস মজুত আছে। আগের সরকার কেন এগুলোতে গুরুত্ব না দিয়ে এলএনজি এবং কয়লা আমদানির প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছেন, সেটি বড় প্রশ্ন। আমরা আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি মেনেই গ্যাস অনুসন্ধান এবং কূপ খননের কাজ করব। যতটা পারি এ কাজ অব্যাহত রাখা হবে। গ্যাস ও বিদ্যুতে আমরা কোনো নিয়ন ভাঙতে চাই না। তবে গ্যাস উত্তোলনে প্রচুর বিনিয়োগ দরকার। সরকার সেজন্য বিদেশি বিনিয়োগ প্রত্যাশা করে।

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের (এসজিএফএল) আওতাধীন সিলেট (হরিপুর), কৈলাশটিলা, বিয়ানীবাজার ও রশিদপুর গ্যাস ক্ষেত্রের মোট ১৪টি কূপ থেকে বর্তমানে দৈনিক কমবেশি ১০৯ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস উৎপাদিত হচ্ছে। বাপেক্স ২০১৭ সালে ডুপিটিলা স্ট্রাকচারে সম্পাদিত ২ডি সিসমিক জরিপের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা ইন্টারপ্রিটেশন রিপোর্ট অন ডুপিটিলা প্রসপেক্ট প্রতিবেদনে ডুপিটিলা কাঠামোতে ৩টি নতুন অনুসন্ধান কূপ (প্রপোজড-১, প্রপোজড-২ ও প্রপোজড-৩) খননের প্রস্তাব করা হয়। পরবর্তীতে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড গঠিত কমিটি প্রস্তাবিত ৩টি প্রসপেক্টসের মধ্যে তুলনামূলক বিচারে ১টি প্রসপেক্ট (প্রপোজড-৩) ডুপিটিলা-১নং কূপ (অনুসন্ধান) খননের সুপারিশ করে। এদিকে বৈদেশিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অ্যাসক্লামবারজার সিকো ইনচ ২০১৮ সালে সম্পাদিত ত্রিমাত্রিক (৩ডি) সিসমিক জরিপ রিভিউ ফলাফলের ভিত্তিতে কৈলাশটিলা কাঠামোতে ৪টি প্রসপেক্ট (এসএলবি-১, এসএলবি-২, এসএলবি-৩ ও এসএলবি-৪)-এ ৪টি অনুসন্ধান উন্নয়ন কূপ খননের সুপারিশ করে। পেট্রোবাংলার মাধ্যমে গঠিত কমিটি এসএলবি-৪ প্রসপেক্টকে কৈলাশটিলা-৯নং কূপ (অনুসন্ধান) হিসাবে খননের সুপারিশ করে। এ জন্য এই প্রকল্পের আওতায় ডুপিটিলা-১ (প্রপোজড-৩) এবং কৈলাশটিলা-৯ (এসএলবি-৪) নামে দুটি অনুসন্ধান কূপ খননের প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্প প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, চলমান অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অনুচ্ছেদ ৫, ৩, ২-এ উল্লিখিত জ্বালানি সম্পর্কিত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হলো প্রাথমিক জ্বালানির দক্ষ সরবরাহ নিশ্চিত করা। প্রকল্পের লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সঙ্গতিপূর্ণ। এছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজ) ৭ দশমিক ১-এ উল্লিখিত সবার জন্য সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য ও আধুনিক জ্বালানি সহজলভ্য করার লক্ষ্যও পূরণ হবে।

এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মোস্তাফিজুর রহমান পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, সিলেট বিভাগের জৈন্তাপুর ও গোলাপগঞ্জ জেলায় ডুপিটিলা-১ ও কৈলাশটিলা-৯নং কূপ (অনুসন্ধান কূপ) খনন করে গ্যাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হলে দেশের জন্য অনেক ভালো হবে। প্রথম ৫ বছরে দৈনিক ২০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে এবং পরবর্তী ৫ বছরে দৈনিক ১২ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস উৎপাদন এবং জাতীয় গ্রিড লাইনে সরবরাহ বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। যা দেশের এবং ওই প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে সরাসরি ভূমিকা রাখবে। এর ফলে দেশীয় শিল্পের বিকাশ ঘটবে এবং এলএনজি আমদানি খাতে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম