Logo
Logo
×

শেষ পাতা

‘৫ আগস্ট’ জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস উদযাপন হবে

যাত্রা শুরু করছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর

৬৩ পদে জনবল চায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় * মনিটরিংয়ে থাকছে ২৭ জনবলের অনুবিভাগ * সম্ভাব্য ব্যয় সাড়ে ১০ কোটি টাকা

রেজাউল করিম প্লাবন

রেজাউল করিম প্লাবন

প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

যাত্রা শুরু করছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর

গণ-অভ্যুত্থানের আদর্শকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ইতিহাস সংরক্ষণ, নিহতদের পরিবার ও আহতদের পুনর্বাসনে কাজ করবে প্রতিষ্ঠানটি। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন থাকবে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর’।

জানা গেছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর গঠনে ৬৩ জনবল চেয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। অধিদপ্তর মনিটরিংয়ের জন্য ২৭টি জনবল নিয়ে একটি পৃথক ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অনুবিভাগ’ গঠিত হবে। দুই বিভাগে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯০ জনের বেতন সাড়ে ৩ কোটি টাকা। বাকি ৭ কোটি টাকা অধিদপ্তর ও অনুবিভাগ নির্মাণে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয়ে ব্যয় হবে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার দুটি পৃথক সাংগঠনিক কাঠামোর (অর্গানোগ্রাম) মাধ্যমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে জনবলের প্রস্তাব পাঠিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এর আগে সোমবার মন্ত্রিপরিষদ থেকে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের ‘অ্যালোকেশন অব বিজনেস’ সংশোধনের অনুমতি দেয়। এর আলোকেই মঙ্গলবার জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর গঠনে প্রয়োজনীয় জনবল ও বার্ষিক ব্যয়ের প্রস্তাব জনপ্রশাসনে পাঠায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘অ্যালোকেশন অব বিজনেস’-এ অধিদপ্তর গঠনের অনুমতি ছিল না। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গতকাল (সোমবার) অনুমতি দিয়েছে। ফলে আজ আমরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর গঠনে একটি সাংগঠনিক কাঠামো (অর্গানোগ্রাম) পাঠিয়েছি। সঙ্গে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অনুবিভাগও গঠনের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সব ঠিক থাকলে দ্রুতই অধিদপ্তরের কাজ শুরু করতে পারব বলে প্রত্যাশা করছি।

মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত নভেম্বরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে অধিদপ্তরের প্রক্রিয়া শুরুর অনুরোধ জানানো হয়। গত ১৮ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীরপ্রতীক। সভায় বিস্তর আলোচনা শেষে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর গঠনে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়। এরপর অর্গানোগ্রাম তৈরি করে গতকাল মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে অধিদপ্তর গঠনের প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর গঠনে গুরুত্বারোপ করে সাংগঠনিক কাঠামোয় (অর্গানোগ্রাম) জানানো হয়, ‘মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তরের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এই গণ-অভ্যুত্থানে শহিদ ও আহত ছাত্র-জনতার তালিকা সংরক্ষণ এবং ডাটাবেজ রক্ষণাবেক্ষণ, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ পরিবার ও আহত ছাত্র-জনতার কল্যাণ সাধন করবে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহিদ পরিবার ও আহত ছাত্র-জনতার গেজেট প্রকাশ ও গণকবর সংরক্ষণ, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস ও স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য গবেষণা, নীতিমালা প্রণয়ন এবং এ সংক্রান্ত কার্যক্রম গ্রহণ করবে। প্রতিবছর ‘৫ই আগস্ট’ জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস হিসাবে উদযাপিত হবে।’

জানা গেছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহিদ পরিবার ও আহতদের ৬৩৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পর্যায়ক্রমে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রতি শহিদ পরিবার ৩০ লাখ করে টাকা পাবে। এর মধ্যে ১০ লাখ টাকা এফডিআর। আহতদের সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা দেওয়া হবে। প্রতি মাসে শহিদ পরিবার ও আহতরা মাসিক ভাতা পাবেন। জানুয়ারি মাসে ২৩২ কোটি ৬০ লাখ টাকা দেওয়া হবে, যা আগামী সপ্তাহ থেকেই দেওয়া শুরু হবে। আগামী অর্থবছরের শুরুতে জুলাই মাসে বাকি ২০ লাখ টাকা দেওয়া হবে। আর এসব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর’-এর মাধ্যমে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তরের জন্য প্রস্তাবিত সাংগঠনিক কাঠামোতে (অর্গানোগ্রাম) দেখা যায়, মহাপরিচালক পদে ২য় গ্রেডভুক্ত (অতিরিক্ত সচিব) কর্মকর্তা ও ৩য় গ্রেডভুক্ত অতিরিক্ত মহাপরিচালক (যুগ্মসচিব) থাকবেন। ২ জন পরিচালক প্রস্তাব করা হয়েছে ৫ম গ্রেডভুক্ত ও ৩ জন উপপরিচালক প্রস্তাব করা হয়েছে ৬ষ্ঠ গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তা। প্রোগ্রামার পদে ১ জন হবেন ৬ষ্ঠ গ্রেডভুক্ত। ৯ম গ্রেডের সহকারী পরিচালক চাওয়া হয়েছে ৪ জন। একই গ্রেডে ১ জন করে সহকারী প্রোগ্রামার ও সহকারী মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে অর্গানোগ্রামে। ১০ম গ্রেডের সহকারী হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা হবেন ১ জন, ১৩তম গ্রেডে কম্পিউটার অপারেটর ৪ জন, ১৪তম গ্রেডের উচ্চমান সহকারী ৬ জন ও হিসাবরক্ষক পদে ১টি পদ উল্লেখ আছে অর্গানোগ্রামে। এছাড়া ১৬তম গ্রেডের অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে ৬ জন, ক্যাশিয়ার পদে ১ জন ও গাড়িচালক ৬ জন প্রস্তাব করা হয়েছে। ১৭তম গ্রেডে ডেসপাস রাইডার ২ জন। ২০তম গ্রেডে অফিস সহায়ক পদে ১৬ জন, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ৩ জন ও নিরাপত্তাকর্মী হিসাবে ৩ জন জনবলের প্রস্তাব করা হয়েছে।

জনবলের মধ্যে মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত মহাপরিচালকের কার্যালয়ে ৩ জন করে কর্মরত থাকবেন। একই পরিমাণ জনবলের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) ও পরিচালক (কল্যাণ, গবেষণা ও পরিকল্পনা) বিভাগে। ২ জন করে উপপরিচালক (প্রশাসন ও সেবা) ও উপপরিচালক (অর্থ) বিভাগে এবং প্রোগ্রামার (আইসিটি) বিভাগে ১০ জন জনবল চাওয়া হয়েছে। সহকারী পরিচালক (প্রশাসন ও সেবা) বিভাগে ২০ জন, সহকারী পরিচালক (মাঠ প্রশাসন) বিভাগে ৪ জন, সহকারী পরিচালক (অর্থ) বিভাগে ৪ জন জনবল চাওয়া হয়েছে।

এছাড়া উপপরিচালক (কল্যাণ) ও উপপরিচালক (গবেষণা ও পরিকল্পনা) বিভাগে ২ জন করে, সহকারী পরিচালক (কল্যাণ) ও সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা ও গবেষণা) বিভাগে ৪ জন করে জনবল চেয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়। তবে জনবলের সংখ্যা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্তের পর বিভাগওয়ারি বণ্টন করা হবে বলে জানায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অনুবিভাগ গঠনের প্রস্তাবে মোট ২৭ জন জনবল চেয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবিত অর্গানোগ্রামে এই অনুবিভাগের প্রধান হিসাবে প্রস্তাব করা হয়েছে অতিরিক্তি সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা। তার অধীনে একজন উপসচিব কাজ করবেন। অনুবিভাগে কল্যাণ ও সেবা এবং অর্থ ও তথ্য ব্যবস্থাপনা নামের ২টি পদে ২ জন সিনিয়র সহকারী সচিব বা সহকারী সচিব মর্যাদার কর্মকর্তা চাওয়া হয়েছে। এর অধীনে জনবল চাওয়া হয়েছে ২ জন। তারা ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ও অফিস সহায়ক হিসাবে কাজ করবেন। উপসচিবের জন্যও ১ জন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ও ১ জন অফিস সহায়ক প্রস্তাব করা হয়েছে।

২৭ জন কর্মকর্তার মধ্যে ১ম থেকে ৯ম গ্রেডভুক্ত অতিরিক্ত সচিব ১ জন, উপসচিব মর্যাদার ১ জন ও সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট ১ জন। সিনিয়র সহকারী সচিব বা সহকারী সচিব ২ জন। সহকারী প্রোগ্রামার ১ জন। ১০ম গ্রেডভুক্ত প্রশাসনকি কর্মকর্তা ২ জন ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ২ জন। কম্পিউটার অপারেটর ৫ জন। ১১ থেকে ১৬তম গ্রেডভুক্ত অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক ২ জন। ১৭ থেকে ২০তম গ্রেডে অফিস সহায়ক ৬ জন, নিরাপত্তাকর্মী ২ জন ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী ২ জন।

এর মধ্যে অতিরিক্ত সচিব বা যুগ্মসচিবের কার্যালয়ে ৩ জন, যুগ্ম সচিব বা উপসচিবের কার্যালয়ে ৩ জন, কল্যাণ ও সেবা কার্যালয়ে ৮ জন এবং অর্থ ও তথ্য ব্যবস্থাপনা কার্যালয়ের জন্য ৪ জন জনবল প্রস্তাব করা হয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম