Logo
Logo
×

শেষ পাতা

এমএলএআর জটিলতায় অর্থ পাচারের ১০ মামলা

দীর্ঘসূত্রতায় মামলার তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়া

Icon

আসাদুল্লা লায়ন

প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

এমএলএআর জটিলতায় অর্থ পাচারের ১০ মামলা

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মামলাসহ চাঞ্চল্যকর ১০ অর্থ পাচারের মামলা মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট বা এমএলএআর জটিলতায় পড়েছে। সংশ্লিষ্ট দেশে পাঠানো এমএলএআরের তথ্য না পাওয়ায় তদন্ত কার্যক্রম এগিয়ে নিতে পারছে না পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ফলে মামলার তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রতায় পড়ে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরানোর পথ ক্ষীণ হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মামলাসহ এমএলএআর জটিলতায় পড়া মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে ২০১৯ সালের ক্যাসিনোকাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে ৯৮ লাখ ৯৫ হাজার ৫০০ টাকা বিদেশে পাচার, ২০২০ সালের এমপি কাজী শহিদুল ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধে ৩৮ কোটি ২৬ লাখ ৯৬ হাজার ৫৬৬ টাকা পাচার, একই বছর যুবলীগ নেতা সম্রাট ও আরমানের বিরুদ্ধে ১৯৫ কোটি টাকা পাচার, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা পাচার, ২০২১ সালের আব্দুর রহমান রাজুর বিরুদ্ধে ৩০ কোটি টাকা তানজানিয়ানে পাচার।

সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মো. বাছির উদ্দিন জানান, সাধারণত অর্থ পাচার মামলায় তথ্য-উপাত্ত ব্যাপক বিশ্লেষণের বিষয় থাকায় তদন্ত শেষ হতে অন্য মামলার তুলনায় বেশি সময় লাগে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এসব মামলায় সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে পাঠানো এমএলএআরের তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। বিদেশে অর্থ পাচারের এমএলএআরের তথ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মামলায় তদন্ত শেষ করা যাচ্ছে না।

অর্থ পাচারের ঘটনায় আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ দশ মামলারই তদন্ত চলছে দীর্ঘদিন ধরে। মামলাগুলোর তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের তদন্ত কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে কিন্তু সংশ্লিষ্ট দেশগুলো থেকে এমএলএআরের তথ্য না পাওয়ায় তারা চার্জশিট জমা দিতে পারছে না। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি ঘটনার মামলা। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরির ঘটনায় ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের উপপরিচালক জোবায়ের বিন হুদা বাদী হয়ে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে একটি মামলা করেন। প্রায় সাড়ে আট বছর পরও শেষ হয়নি চাঞ্চল্যকর মামলাটির তদন্ত।

জানা গেছে, সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট ইতোমধ্যে ৮০ বারের মতো সময় নিয়েছে। আদালত সবশেষ আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সিআইডি নির্দেশ দিয়েছে। এদিকে সিআইডি বলছে, মামলা তদন্ত কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে তবে চীন ও শ্রীলংকায় পাঠানো এমএলএআরের তথ্য না পাওয়ায় চার্জশিট জমা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

মামলাটির তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মামলার চার্জশিট জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে এমএলএআরের তথ্য পাওয়া জরুরি। চীন, আমেরিকা, জাপান, ফিলিপাইন ও শ্রীলংকায় তথ্য চেয়ে এমএলএআর পাঠানো হয়েছিল। এর মধ্যে শ্রীলংকা ও চায়না থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে তদন্তের জন্য এই দুটি দেশের তথ্য পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। চার বছর ধরে কয়েক দফা এমএলএআর পাঠানো হলেও এই দুটি দেশ থেকে কোনো উত্তর আসেনি। তথ্য না পেলে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া সম্ভব হবে না।

অন্যদিকে সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শহীদুল ইসলাম ওরফে পাপুলের বিরুদ্ধে মানব পাচারের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে ২০২০ সালে মামলা করে সিআইডি। একই বছর যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাট ও আরমানের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের মামলা করা হয়। তবে ২০২১ সালে কুয়েত এবং ২০২০ সালে মালয়েশিয়ায় পাঠানো এমএলএআরের তথ্য না পাওয়ায় মামলা দুটির তদন্ত শেষ করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক মেহেদী মাকসুদ।

একইভাবে ২০২১ সালে পূর্ব আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ায় অর্থ পাচারের অভিযোগে আব্দুর রহমান রাজুর বিরুদ্ধে মামলা করে সিআইডি। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির উপপরিদর্শক জহির রায়হান জানান, মামলাটি তদন্ত শুরুর পর ২০২২ সালের শেষের দিকে সংশ্লিষ্ট দেশ তানজানিয়ানে এমএলএআরের মাধ্যমে তথ্য চাওয়া হয়। এরপর দীর্ঘ অপেক্ষার পর তথ্য পেতে তাদের তাগিদ দিয়ে বার্তা পাঠানো হলে এখনো কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এই মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম শেষ করা যায়নি।

এছাড়া ২০২১ সালে সাবেক কমিশনার ও যুবলীগ নেতা একেএম মমিনুল হক সাঈদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মাধ্যমে অর্জিত ৪৬ লাখ ৪৯ হাজার ১৬০ টাকা বিদেশে পাচার, ২০২৩ সালে ফারইস্ট স্টক অ্যান্ড বন্ডসের চেয়ারম্যান এমএ খালেকের বিরুদ্ধে ১১৬ কোটি টাকা পাচারের মামলা, ২০১৭ সালে মো. শরীফুল ইসলামের বিরুদ্ধে সৌদি রিয়ালসংবলিত লাগেজ নিয়ে সিঙ্গাপুর কাস্টমসের কাছে গ্রেফতার এবং ২০২১ সালের বিমানবন্দর থানায় বিভিন্ন দেশের মুদ্রা পাচারের আরেকটি মামলার তদন্ত করছে ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। তদন্তসংশ্লিষ্ট ও তদারক কর্মকর্তারা বলছেন, পাচারের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট দেশগুলো থেকে এমএলএআরের মাধ্যমে তথ্য না পাওয়ায় তদন্ত শেষ করা যাচ্ছে না।

প্রসঙ্গত, এমএলএআর বা মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট রিকোয়েস্ট হচ্ছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার এক ধরনের চিঠি বা আবেদন। একটি দেশের দায়িত্বশীল সংস্থা সুনির্দিষ্ট তথ্যের বিষয়ে জানতে অন্য দেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার কাছে আইনি প্রক্রিয়ায় এ ধরনের এমএলএআর পাঠিয়ে থাকে। জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনে (আনকাক) সই করা দেশগুলোর মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানে এমএলএআর বেশি ব্যবহৃত হয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম