Logo
Logo
×

শেষ পাতা

তিন বছরের কাজ শেষ করতে ১৩ বছর

৭৯৬ কোটির প্রকল্প ঠেকছে ১৭০০ কোটি টাকায়

বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী বাণিজ্যমেলা কেন্দ্র: চীন সরকারের অনুদান কমছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা

হামিদ-উজ-জামান

হামিদ-উজ-জামান

প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

৭৯৬ কোটির প্রকল্প ঠেকছে ১৭০০ কোটি টাকায়

শেষ নেই যেন ‘বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার’ নির্মাণকাজের। চলছে তো চলছেই। সেই সঙ্গে নতুন নতুন কাজের নামে বাড়ছে ব্যয়ও। ৭৯৬ কোটি টাকা খরচের এ প্রকল্পটি অবশেষে ঠেকছে ১ হাজার ৭০০ কোটি ৫১ লাখ টাকায়। তবে এ পর্যায়ে কমছে চীনের অনুদান। সেই সঙ্গে তিন বছরে বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও এখন মোট সময় লাগবে ১৩ বছর। এদিকে প্রায় ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিরাজ করছে ধীরগতি। এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৮২৭ কোটি ৮ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে আর্থিক অগ্রগতি ৬৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৭০ শতাংশ। এ অবস্থায় প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। সেখানে ব্যয় বাড়ছে ৩৯৭ কোটি টাকা এবং মেয়াদ ৪ বছর বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। তবে মেয়াদ ৪ বছর বাড়ানোর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

সংস্থাটি বলছে, এই বৃদ্ধি অত্যধিক হওয়ায় ২ বছর মেয়াদ বাড়ানো যেতে পারে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন খাতের ব্যয় প্রস্তাবে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। আগামী ৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এসব বিষয় তুলে ধরা হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন সোমবার যুগান্তরকে বলেন, এ প্রকল্পের যেহেতু বড় অংশের কাজ শেষ হয়েছে কাজেই একেবারেই বন্ধ করার সুযোগ নেই। এ অবস্থায় বছরে শুধু এক মাস বাণিজ্যমেলার মতো বড় অনুষ্ঠান করা হলে এটি লাভজনক হবে না। এক্ষেত্রে ডিজাইন সংস্কার করা প্রয়োজন। অর্থাৎ রিডিজাইন করে বড় এবং ছোট সব ধরনের অনুষ্ঠান করার উপযোগী করা দরকার। এ প্রকল্প নেওয়ার সময়ই বর্তমান সংশোধনীতে যেসব প্রস্তাব করা হয়েছে সেগুলোর বিষয়ে চিন্তা করা উচিত ছিল। অনুদানের টাকা বলেই যেনতেন প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে আর্থিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্নীতি থাকতে পারে। এখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যা প্রস্তাব দিয়েছে সেভাবেই অনুমোদন দেওয়ার কোনো কারণ নেই। তাহলে তো এ প্রকল্পটি শ্বেতহস্তীতে পরিণত হবে।

সূত্র জানায়, ‘বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার নির্মাণ’ প্রকল্পটির অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৭৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ১৩৮ কোটি, চীনের অনুদান ৬২৫ কোটি এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা ইপিবি’র নিজস্ব তহবিল থেকে ৩২ কোটি ১৩ লাখ টাকা ধরা হয়। পরে প্রকল্পের প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে একবারে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ১ হাজার ৩০৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ পর্যায়ে চীনের অর্থের পরিমাণ ঠিক থাকলেও বেড়ে যায় সরকারি ও ইপিবির অর্থ। এবার দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাবে ৩৯৭ কোটি টাকা বাড়িয়ে মোট ১ হাজার ৭০০ কোটি ৫১ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ পর্যায়ে সরকারি তহবিলের কোনো বরাদ্দ বাড়ছে না। তবে চীনের অনুদান থেকে কমছে ৯৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। কিন্তু ইপিবির নিজস্ব তহবিল থেকে বাড়ছে ৪৯৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।

এদিকে প্রকল্পটির মূল অনুমোদনের সময় মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত তিন বছর। কিন্তু এর মধ্যে চার দফায় মেয়াদ বেড়েছে ৬ বছর। এখন দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাবে আরও চার বছর বাড়িয়ে ২০২৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ ধরার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সময় লাগবে ১৩ বছর। প্রকল্পটি ঢাকার কাছেই রূপগঞ্জের পূর্বাচল নিউটাউন এলাকায় বাস্তবায়ন করছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)।

প্রকল্পটি সংশোধনের কারণ হিসাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, প্রয়োজনের ভিত্তিতে প্রকল্পের ৬ দশমিক ১ একর এবং আশপাশের জমিতে তিন স্তরের বেজমেন্টসহ কারপার্কিংয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া নতুন করে চারটি এক্সিজিবিশন হল তৈরি করা হবে। এক্ষেত্রে বলা হয়েছে, চীনের সহায়তায় দুটি বড় হল নির্মাণ করা হয়েছে, এগুলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার মতো বড় আয়োজনের জন্য উপযুক্ত। কিন্তু একক প্রতিষ্ঠানভিত্তিক প্রদর্শনীর জন্য ছোট ছোট প্রদর্শনী হল করতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আরও আছে, নতুন করে ৫ হাজার বর্গফুটের একটি ওয়্যার হাউজ নির্মাণ প্রস্তাব এই সংশোধনীতে যুক্ত করা হয়েছে। প্রদর্শনী কেন্দ্রের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যবস্থাপনা অফিস স্থাপনের সংস্থান রাখা হয়েছে। আধুনিক সুবিধার দেড় হাজার আসনের একটি নতুন অডিটরিয়াম তৈরি, পণ্যের স্থায়ী প্রদর্শন গ্যালারি নির্মাণ, প্রার্থনা কক্ষ, চিকিৎসা কক্ষ, ফায়ার সার্ভিস রুম, সাধারণ পরিষেবা কেন্দ্র এবং মিটিং রুমসহ বিভিন্ন নতুন অবকাঠামো নির্মাণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব কারণে মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ছে প্রকল্পটির।

পরিকল্পনা কমিশনর দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসাবে বিভিন্ন নতুন অবকাঠামো তৈরির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সেগুলো এখনই নির্মাণ করা জরুরি কি না সেটি ভাবা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বাস্তবতা ও বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে পিইসি সভায় আলোচনা করা হবে। এছাড়া সংশোধনী প্রস্তাবে অন্যান্য অবকাঠামো বা স্থাপনা নির্মাণ অংশে ৪৩ হাজার ৯৩৫ বর্গমিটারের জন্য ২৫২ কোটি টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বর্গমিটার প্রতি ব্যয় ৫৭ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা পড়ে, যা অত্যধিক বলে মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন। এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হবে পিইসি সভায়। আরও যেসব খাতের ব্যয় প্রশ্নের মুখে পড়তে যাচ্ছে সেগুলোর অন্যতম হলো-পরামর্শক ফি বাবদ ৯ কোটি ১০ লাখ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বা শিক্ষা সফরের জন্য ৭০ লাখ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব বাদ দেওয়ার পক্ষে মত দেবে পরিকল্পনা কমিশন। এগুলোও ছাড়াও আরও অন্তত ১০ খাতের ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে সেগুলো যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার পক্ষে মত দিতে যাচ্ছে পরিকল্পনা কমিশন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম