Logo
Logo
×

শেষ পাতা

রূপগঞ্জে সরকারি জমি দখল করে কারখানা

নির্গত বর্জ্য শীতলক্ষ্যায় হুমকিতে জনস্বাস্থ্য

টাকা বাঁচাতে ব্যবহার করছে না ইটিপি * কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো ফল হয়নি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)

প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নির্গত বর্জ্য শীতলক্ষ্যায় হুমকিতে জনস্বাস্থ্য

ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের তারাব পৌরসভার নোয়াপাড়া বিসিক জামদানিপল্লীর পাশে সরকারি জমি ও খেলার মাঠ দখল করে নিটিং, ডায়িং, প্রিন্টিং ও ফিনিশিং কারখানা স্থাপনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কারখানাটি থেকে নির্গত রাসায়নিকযুক্ত রঙিন ও গরম পানি ফেলা হচ্ছে শীতলক্ষ্যা নদী, জলাশয়, পতিত জমি, বিসিক জামদানিপল্লীসহ আশপাশের এলাকায়। এর ফলে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) নোয়াপাড়া জামদানি পল্লীর পূর্ব পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২৫টি আলাদা দাগে ১২ বিঘা ৭ শতাংশ জমি রয়েছে। ১৯৯৬ সালে নোয়াপাড়া গ্রামের হাজী আলাউদ্দিন পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে এ জমি লিজ নেন। পরে রূপগঞ্জ উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর থেকে লিখিত অনুমতি নিয়ে শতাধিক যুবককে সঙ্গে নিয়ে তিনি সমবায় ভিত্তিতে মাছের খামার গড়ে তোলেন। ২০১১ সাল পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল। এর পর থেকে লিজ নবায়নের জন্য হাজী আলাউদ্দিন দৌড়-ঝাঁপ করলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড তা দিতে গড়িমসি করে। উপায়ন্তর না দেখে ২০১২ সালে তিনি আদালতে মামলা করেন। পরে ওই জমিতে খেলার মাঠ ও জামদানিপল্লীর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে জানিয়ে স্থানীয় সংসদ-সদস্যের প্রস্তাবে হাজী আলাউদ্দিন মামলা তুলে নেন।

সংসদ-সদস্যের প্রস্তাব অনুযায়ী জলাশয় ভরাট করে সেখানে খেলার মাঠ গড়ে তোলা হয়। এরপর থেকে এলাকার শিশু-কিশোররা এ মাঠে খেলাধুলা করত। পরে ২০২৩ সালে হাজী আলাউদ্দীন মারা গেলে ওই খেলার মাঠে ইউনিফিল টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড নামে একটি নিটিং, ডায়িং, প্রিন্টিং ও ফিনিশিং কারখানা গড়ে ওঠে। পরে নাম পরিবর্তন করে ট্রু ফেব্রিক্স লিমিটেড ও ২২৪ নিটিং, ডায়িং, প্রিন্টিং ও ফিনিশিং নামক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়। সে কারখানার রাসায়নিকমিশ্রিত রঙিন গরম পানি শীতলক্ষ্যা নদীসহ আশপাশের এলাকায় ফেলা হচ্ছে। যে কারণে এলাকার মানুষ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন।

তারাব পৌরসভার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম চৌধুরী এলাকাবাসীর পক্ষে জলাশয় ভরাট ও সরকারি জমিতে কারখানা স্থাপনের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু কোনো ফল আসেনি। পরে ২৮ সেপ্টেম্বর হাজী আলাউদ্দিনের ছেলে আলী আকবর বাদী হয়ে দুদক বরাবর আবেদন করেন।

তারাব পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর জোছনা বেগম বলেন, ইটিপি প্ল্যান্ট থাকলেও টাকা বাঁচাতে রাতে কারখানা নির্গত বর্জ্য খোলা স্থানে ছেড়ে দেওয়া হয়।

মামলার বাদী মৃত হাজী আলাউদ্দিনের ছেলে মো. আলী আকবর জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা সরেজমিন তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন। কোনো ফল হয়নি। ট্রু ফেব্রিক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জামান বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে কারখানার জমি লিজ নেওয়া। এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি। প্রতিষ্ঠানটি গ্রিন আর্থ তথা পরিবেশবান্ধব শিল্প-প্রতিষ্ঠান। জনস্বাস্থ্যের ক্ষতির কোনো প্রশ্নই উঠে না। তারাব পৌরসভার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ১৯৯১-৯২ অর্থবছরে বিসিক নোয়াপাড়ায় জামদানিপল্লী স্থাপন করা হয়। তখন জামদানি শিল্পীদের মাঝে ৪০০ প্লট হস্তান্তর করা হয়। এ সময় জামদানিপল্লীর সুবিধার্থে পাশে সবুজায়ন, স্কুল, খেলার মাঠ স্থাপন করা হয়। অগ্নিদুর্ঘটনা মোকাবিলায় পানি সরবরাহে এখানে জলাশয়ও রাখা হয়। এখন সেই জলাশয়সহ ১২ বিঘা ৭ শতাংশ জমি বেদখল হয়ে গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নরসিংদী অঞ্চলের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) হুমায়ুন কবির বলেন, দুদক থেকে এ বিষয়ে তিনি একটি নোটিশ পেয়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমিতে স্থাপনা নির্মাণেরও কোনো বিধান নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও তারাব পৌরসভার প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, অবৈধ দখলদাররা যত প্রভাবশালীই হোক ছাড় দেওয়া হবে না। সরকারি জমি বেদখল হয়ে থাকলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম