সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড এবং সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার বাতিলের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ। রোববার এক বিবৃতিতে বলা হয়, সংগঠন সংশ্লিষ্টরা মনে করে, এ ধরনের আদেশ স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকি ও অন্তরায়। সংগঠনটির পক্ষে সভাপতি মাহফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ ওই বিবৃতি দেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, ২৭ ডিসেম্বর এক আদেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বাতিল করে। পরদিন প্রেস উইং থেকে বার্তা দিয়ে জানানো হয়েছে, সচিবালয়ের নিরাপত্তা বিবেচনায় অন্য সব বেসরকারি পাশের পাশাপাশি বর্তমান অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড নিয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশও সীমিত করা হয়েছে। সরকার শিগগিরই বিদ্যমান প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডগুলো পর্যালোচনা করবে। সর্বশেষ রোববার তথ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড পুনঃমূল্যায়ন করা হচ্ছে, খুব শিগগিরই নতুন করে স্থায়ী/অস্থায়ী অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড/পাশ ইস্যু করা হবে। আজ থেকে সাংবাদিকদের অস্থায়ী পাশ দেওয়া হবে।

পর্যালোচনা ও পুনঃমূল্যায়নের উদ্যোগকে স্বাগত জানায় সম্পাদক পরিষদ। সংগঠনটি মনে করে, এ কাজে প্রয়োজনে ও অপেশাদার সাংবাদিক শনাক্তে সংগঠনের পক্ষ থেকে সহযোগিতারও সুযোগ রয়েছে। কিন্তু ঢালাওভাবে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকারে বাধা দেওয়া সারা পৃথিবীতেই স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি আক্রমণ হিসাবে দেখা হয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী সরকারের ক্ষেত্রেও এ ধরনের প্রবণতা দেখা গিয়েছিল। আর্থিক খাতে যখন ক্রমাগত অনিয়ম চলছিল, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকে তখন সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকারে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছিল। ওই সব কর্মকাণ্ড নিয়ে সাংবাদিকদের অবস্থান, গণ-অভ্যুত্থানপূর্ব অতীত ওই সময়েও ছিল স্পষ্ট এবং দ্ব্যর্থহীন।

গণ-অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে এলে সাইবার নিরাপত্তা আইন সংস্কার বা বাতিলের দাবি ওঠে। এ আইন বাতিলের বিষয়ে ৭ নভেম্বর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর ২৪ ডিসেম্বর সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। নতুন এ অধ্যাদেশে পুলিশের ক্ষমতা আগের মতোই রাখা হয়েছে। সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৪-এর ৩৫ ও ৩৬ ধারায় পুলিশের ক্ষমতার বিষয়গুলো উল্লেখ রয়েছে। উল্লেখ্য, এরই মধ্যে বাতিলের নীতিগত সিদ্ধান্ত হওয়া সাইবার নিরাপত্তা আইনেও পুলিশকে একই ধরনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। যেখানে আইনের ধারাগুলো নিয়ে সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগের অন্যতম ছিল পুলিশের ক্ষমতার অপব্যবহার।

সম্পাদক পরিষদ মনে করে, সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড এবং সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার বাতিলের অনাকাঙ্ক্ষিত পদক্ষেপটি অযৌক্তিক। আর সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া একতরফাভাবে অধ্যাদেশ গ্রহণ করা হতাশাজনক এবং কর্তৃত্ববাদী মনোভাবেরও বহিঃপ্রকাশ। প্রবেশাধিকার বাতিলের প্রতিবাদ জানাচ্ছে সম্পাদক পরিষদ। সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের মতামত সাপেক্ষে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর খসড়ায় থাকা উদ্বেগের বিষয়বস্তু দূর করতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছে।