আলিফ হত্যার তদন্ত সঠিকভাবে হচ্ছে না: গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না বলে জানিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংগঠনটির পক্ষ থেকে আয়োজিত ‘চট্টগ্রামে আইনজীবী আলিফ হত্যাকাণ্ড পরবর্তী পরিস্থিতি সরেজমিনে পরিদর্শন : পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তাব’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পাঁচ প্রস্তাব তুলে ধরেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদ, আব্দুল্লাহ্ আল কাফি রতন, সীমা দত্ত, সত্যজিৎ বিশ্বাস ও রাফিকুজ্জামান ফরিদ প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে যে পাঁচ দাবি তুলে ধরা হয় সেগুলো হল-১. আইনজীবী আলিফ হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। ২. ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মামলা করে অপরাধীদের চিহ্নিত করা। ৩. সেবক কলোনির হরিজন সম্প্রদায়ের ওপর হয়রানি ও ত্রাস বন্ধ করা। ৪. সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে সুনির্দিষ্ট অপরাধীদের চিহ্নিত করা ও গ্রেফতার বাণিজ্য বন্ধ করা। ৫. অভিযুক্তদের বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করে আইনজীবীদের নিরাপত্তা প্রদান করা।
বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে ২৫ নভেম্বর ঢাকায় গ্রেফতার করা হয়। তার পরদিন তাকে চট্টগ্রাম আদালতে উপস্থিত করা হলে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এ সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যা করা হয়। এ হত্যার ঘটনায় ছয়টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। যেখানে ৩৯০ জনের নাম উল্লেখসহ প্রায় ২,৪০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, চট্টগ্রামের পরিস্থিতি সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করতে গত ২৩ ডিসেম্বর গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির একটি প্রতিনিধিদল চট্টগ্রামে যায়। তার পরিপ্রেক্ষিতে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি তাদের পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তাব তুলে ধরেছে। গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অভিযোগ পেয়েছেন যে, সেবক কলোনির নিরপরাধ বাসিন্দাদের নির্বিচারে গ্রেফতার ও হয়রানি করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ থাকা সত্ত্বেও তদন্ত প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।
হরিজন কলোনির ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের স্ত্রী-সন্তানদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। যারা কাজ করেন, তারা বাদে বেশির ভাগ পুরুষই বাড়ির বাইরে পালিয়ে আছেন।
সংবাদ সম্মেলনে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য আনু মুহাম্মদ বলেন, অজ্ঞাতনামা আসামির মধ্যে যে কেউ পড়তে পারে, সুতরাং একটা ব্যাপক হয়রানি শুরু হয়েছে। পুলিশের যে গ্রেফতার বাণিজ্য ও যারা কোনো না কোনোভাবে ক্ষমতাধর ব্যক্তি, তারা যে কোনো ব্যক্তিকে এটার জন্য হয়রানি করতে পারে, হুমকি দিতে পারে, টাকা আদায় করতে পারে। এগুলো হাসিনা আমলে চলেছে। বিষয়টির পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, আরেকটা সমস্যা হচ্ছে, এর একটা সাম্প্রদায়িক দিক আছে, যেটা নিয়েও আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। যারা ধর্মের নামে বৈষম্য তৈরির রাজনীতি করে, তাদের একটা তৎপরতা তারা দেখতে পাচ্ছেন। তারা এখন উসকানিমূলক তৎপরতা চালাচ্ছে।
গ্রেফতার বাণিজ্যের স্বার্থ ও সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে তার থেকে ফায়দা লোটার কিছু গোষ্ঠীস্বার্থ-এ দুই স্বার্থ একসঙ্গে হয়ে চট্টগ্রামে একটা অবস্থা তৈরি করেছে উল্লেখ করেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, সামনে আরও অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। এই অনিশ্চয়তা থেকে আরও সমস্যা তৈরি হতে পারে ও পুরো বাংলাদেশ এটার জন্য কলঙ্কিত হতে পারে।