ভিডিও কনফারেন্সিং প্ল্যাটফর্ম শক্তিশালীকরণ প্রকল্প
বাস্তবায়নের শেষ সময়ে ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব
শুধু পরামর্শক খাতেই চাওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ৬ কোটি টাকা, যৌক্তিকতা নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের প্রশ্ন
প্রতীকী ছবি
শেষ সময়ে এসে ‘ভিডিও কনফারেন্সিং প্ল্যাটফর্ম শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পে পরামর্শক খাতে অতিরিক্ত চাওয়া হয়েছে ৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এ খাতে মূল বরাদ্দ ছিল ৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এছাড়া প্রকল্পটির প্রযুক্তি সরঞ্জামাদিসহ কয়েকটি খাতে ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে প্রায় ৬ কোটি টাকা। অনুমোদন দিলে সব মিলিয়ে বাড়বে ১২ কোটি টাকা। তবে প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল প্রায় ৪৮ কোটি টাকা। এর আগে একবার বাড়ানো হয়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে কেন এত টাকার পরামর্শক ব্যয় বাড়বে সেটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।
সূত্র বলছে, ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব কমাতে নথিটি তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। প্রসঙ্গত, প্রকল্পটি ২০২১ সালের জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। এরপর বাড়ানো হয় এক বছর। সবশেষে আরও ৬ মাস বাড়ানো হয়। ফলে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ হওয়া কথা।
সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত ব্যয় বাড়ানো হলে মূল ব্যয়ের তুলনায় ২৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ বাড়বে। এছাড়া মেয়াদ বাড়ছে ২ বছর। অর্থাৎ ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে প্রকল্পের বাস্তবায়নও শেষ পর্যায়ে রয়েছে। চলতি ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত প্রকল্পটির আওতায় ব্যয় হয়েছে ৪৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৯৮ দশমিক ৬২ শতাংশ। এছাড়া বাস্তব অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯৮ শতাংশে।
এ বিষয়ে কথা হয় প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মো. আব্দুর রউফের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, পরামর্শক খাতে কেন এত টাকার প্রয়োজন সেটি জানতে চাওয়া হয়েছিল পিইসি সভায়। সেখানে আলাপ-আলোচনার পর এটিসহ অন্যান্য খাতের ব্যয় কমানোর সুপারিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে পরামর্শক খাতে কত টাকা কমানো দরকার সেটি সংশ্লিষ্টরাই ঠিক করবেন। আমরা শুধু যৌক্তিক পর্যায়ে খরচ নামিয়ে আনতে বলেছি। তিনি আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে অনেক সময় প্রধান উপদেষ্টা ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে বিভিন্ন জেলা ও দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করে থাকেন। এজন্য প্রকল্পটি চলমান রাখা জরুরি। এছাড়া এর আগে প্রকল্পটি চলমান রাখতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে মতামত দেওয়া হয়েছিল। সুতরাং গুরুত্বের বিষয়টি বিবেচনা করেই প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির সুপারিশ দেওয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, শেষ সময়ে এসে প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সংশোধনীতে একটি নতুন অঙ্গ অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া ৪টি উপ-অঙ্গের ব্যয় বৃদ্ধি এবং তিনটি অঙ্গের ব্যয় কমানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। এই খাতগুলোর ব্যয় বৃদ্ধি বা কমানোর প্রস্তাবের যৌক্তিকতা নিয়ে পিইসি সভায় প্রশ্ন তোলা হয়। এছাড়া প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সংশোধনীতে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি সরঞ্জামাদি খাতে ৪ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ব্যয় সম্পর্কেও প্রশ্ন তোলা হয়।
প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনের কারণ ও যৌক্তিকতা সম্পর্কে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, গত ৭ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় প্রকল্পটি চলমান রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর আওতায় দুর্যোগ, আপৎকালীন ও জরুরি প্রয়োজনে সিকিউরড নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ভিডিও কনফারেন্স পরিচালনা কার্যক্রম চলমান রাখা হবে। দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবলের মাধ্যমে স্বল্প ব্যয়ে ভিডিও কনফারেন্স সার্ভিস পরিচালনা করা হবে। স্যাটেলাইট প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। স্থায়ী ইউনিট গঠন না হওয়া পর্যন্ত প্রকল্পটির মাধ্যমে ভিডিও কনফারেন্সিং চলমান রাখা হবে। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখা, সরকারের সময়, জ্বালানি ও অর্থ সাশ্রয় এবং উল্লেখযোগ্যভাবে কার্বন নির্গমন কমাতে হবে। এজন্য প্রকল্পটি সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়, স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ব্যবহার করে বর্তমান ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেমটির কারিগরি দিক হালনাগাদ করা ও ভিডিও কনফারেন্সিং পরিচালনায় প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল নিয়োগের জন্য এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় সরকারের ভিডিও কনফারেন্সি প্ল্যাটফর্ম শক্তিশালীকরণ বিনিয়োগ প্রকল্পটি সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ৪৭ কোটি ৩৪ লাখ ১২ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়। এটি ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রী অনুমোদন দেন। এরপর মোট ৪৯ কোটি ৫১ লাখ ১২ হাজার টাকা ব্যয়ে চলতি বছরের জুনে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পের প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব আইসিটি বিভাগ থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আইএমইডির শর্ত পরিপালনসাপেক্ষে আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগ থেকে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া ৬ মাস চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধির প্রশাসনিক আদেশ পাওয়া যায়। দ্বিতীয় সংশোধনী উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) বর্তমান প্রকল্পটির ব্যয় ১২ কোটি ২১ লাখ ৮৮ হাজার টাকা বৃদ্ধি করে মোট ৬১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এছাড়া মেয়াদ ২ বছর বৃদ্ধিসহ প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধন করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে কেন্দ্রীয় প্রশাসনের অনলাইন সভা, সেমিনার বা মিটিং ইত্যাদি কাজ শেষ করার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সব বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়সহ মোট ৭৬টি সরকারি দপ্তরে ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেমস স্থাপন করা হয়। এই ভিডিও কনফারেন্সিংগুলো পাবলিক নেটওয়ার্ক ব্যবহারের মাধ্যমে কার্যক্রম শেষ করা হতো। সরকারের এই গুরুত্বপূর্ণ সভা সেমিনার মিটিংগুলো একটি সিকিউরড (নিরাপদ) নেটওয়ার্কের মাধ্যমে শেষ করা এবং দেশের সরকারি সব নির্বাহী অফিসগুলোকে ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেমসের আওতাভুক্ত করার জন্য বিসিসি (বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল) ২০১৩ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ইনফো-সরকার ফেজ-২ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। এর মাধ্যমে দেশের ৮০৩টি সরকারি অফিসে ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেমস স্থাপন করা হয়েছে। এই সিস্টেম ব্যবহার করে ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত ২ হাজারের বেশি ভিডিও কনফারেন্সিং শেষ করা হয়েছে। করোনাকালীন ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের মে পর্যন্ত প্রায় ৮০০ ভিডিও কনফারেন্সিং শেষ করা হয়।