Logo
Logo
×

শেষ পাতা

এখন সংস্কার না হলে কখনোই হবে না: ড. সাখাওয়াত হোসেন

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

এখন সংস্কার না হলে কখনোই হবে না: ড. সাখাওয়াত হোসেন

অন্তর্বর্তী সরকারের নৌ পরিবহণ, শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, আমরা যদি এখন কিছু সংস্কার করে যেতে না পারি, তাহলে আর কখনোই করা সম্ভব হবে না। শনিবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশে (কেআইবি) ‘সংস্কারের দায় ও নির্বাচনের পথরেখা’ শীর্ষক এক সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ এই সংলাপের আয়োজন করে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক সালেহ উদ্দিন।

এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমরা ২০০৭ সালে একবার সংস্কারের চেষ্টা করেছিলাম। কিছু কিছু সংস্কার করেছিলামও। কিন্তু ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের কারণে সেগুলো থাকেনি। এখন যদি সংস্কার করতে না পারি, যদি সংবিধান ও অন্যান্য আইনের দোহাই দেওয়া হয়, তাহলে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যারা রক্ত দিয়েছেন তাদের প্রতি অন্যায় করা হবে। বলছি না যে আমরা চার-পাঁচ বছর থাকব। এক বছরের মধ্যে সংস্কার করা সম্ভব। তরুণদের রাজনৈতিক দল গঠনে উৎসাহিত করা উচিত বলে জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের অনুৎসাহ করা ঠিক নয়। আমরা মনে করি নতুন রক্ত প্রয়োজন। তাদের নিরুৎসাহিত করবেন না। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি অনুরোধ তাদের উৎসাহিত করুন। তারা আপনাদের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। তাদের যদি উৎসাহিত না করেন তাহলে আমরা এ জিনিসই (আওয়ামী লীগের পতন) দেখব। আজকে না হয় ১০, ১৫ বছর পরে দেখব।

রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানিয়ে সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, ধৈর্য ধরতে হবে। আমরা কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করছি। নির্বাচন আইন পরিবর্তন করলে হবে না, রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও পদ্ধতির পরিবর্তন করলেই নির্বাচনি আইনও পরিবর্তন হয়ে যাবে। এবারের নির্বাচনের (দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন) আগে বলেছিলাম, যে নির্বাচনে যাবে তার আম-ছালা দুটোই যাবে, সেটাই হয়েছে।

সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সামনে আমাদের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। এটা শুধু অভ্যন্তরীণ নয়, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আসবে দেশের বাইরে থেকে। আমাদের নতুন প্রতিবেশী তৈরি হচ্ছে। সেটা স্বাভাবিক নয়, ভিন্নধর্মী প্রতিবেশী। আরাকান এখন নতুন বাস্তবতা। আমরা এতদিন বিবেচনা করতে পারিনি। এখন বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা সব সময়ই বলি, ভালো চাই, আরও ভালো চাই। আমাদের পাওয়ার আকাঙ্ক্ষার শেষ নেই। আল্লাহ আমাদের সুযোগ করে দিয়েছেন গণ-অভ্যুত্থানের বিজয় ধরে রাখার। কিন্তু চাই চাই করে গেলে সব হারাব আমরা। আর আক্ষেপ করব। তাই ছাত্র-জনতার বিজয় ধরে রাখতে প্রয়োজন সবার সম্মিলিত প্রয়াস।

প্রশাসনিক কর্মকর্তারা নানা দাবিদাওয়া নিয়ে সারা দেশে ‘হুলুস্থূল’ পরিস্থিতি তৈরি করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন অভিযোগের সময় না। এখন সময় সহযোগিতা করার। কোনো রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন একা সব করে ফেলতে পারবে না। পরস্পরকে সহযোগিতা করতে হবে। বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের এরশাদবিরোধী গণ-অভ্যুত্থানে জনতার বিজয় রাজনৈতিক বাস্তবতায় বেহাত হয়ে গেলেও চব্বিশে ফ্যাসিবাদবিরোধী গণ-অভ্যুত্থানের বিজয় নস্যাৎ হতে দেওয়া যাবে না। বিশিষ্ট সাংবাদিক সালেহ উদ্দিন বলেন, ছাত্র-জনতা জীবন দিয়ে জুলাই অভ্যুত্থান এনেছেন। এই অভ্যুত্থান বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না। আন্দোলনে আমরা যেভাবে ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, সবাইকে সেভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

নিউএজ সম্পাদক নূরুল কবির বলেন, যত স্বৈরাচার দেখেছি, তাদের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতায় এসেছে। তাই ফ্যাসিবাদ উত্থানের উৎসগুলো বন্ধ করতে হবে-যাতে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য আগামীতে আর যেন জুলাইয়ের মতো আন্দোলন না হয়। তরুণ ছাত্র-জনতার রক্ত দিতে না হয়। সেই ব্যবস্থা আমাদের করে যেতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, সরকার এমন পরিবেশ তৈরি করতে পারে, যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক সরকার দক্ষিণ এশিয়ার নেতৃত্ব দিতে পারে। সেই নেতৃত্ব দেওয়ার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের নতুন প্রতিবেশী আসতে পারে। নতুন রাষ্ট্রের উত্থান হতে পারে। তাই এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়া উচিত যে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে, ভূ-রাজনৈতিকভাবে নেতৃত্ব দেবে।

ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের নেতা মাওলানা আতাউর রহমান বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা রাখা যায় কি না, তা সংবিধান সংস্কার কমিটিকে ভাবতে হবে। বাহাত্তরের সংবিধান রচনার সময় শেখ মুজিবও কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলেননি। সংবিধান নতুন করে রচনার সময় এ অঞ্চলের ধর্মীয় সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্যকে প্রাধান্য দিতে হবে। এ সময় আতাউর রহমান দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট ও সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের পরামর্শ দেন।

জাতীয় নাগরিক কমিটির সরোয়ার তুষার বলেন, ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশের যে সংবিধান তা বাতিল হয়ে গেছে। এ সংবিধান এখন কোমায় চলে গেছে। সংবিধান পরিবর্তন করার লক্ষ্যে একটি লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করতে হবে। গঠন করতে হবে একটি গণপরিষদ। এ গণপরিষদ সংবিধান রচনা করবে নতুন করে। এই গণপরিষদ পরে আইনসভা বা জাতীয় সংসদে পরিণত হতে পারে। প্রয়োজনে গণভোট করা যেতে পারে। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন-গণফোরামের কো-চেয়ারম্যান সুব্রত চৌধুরী, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়ক আবুল হাসান রুবেল, বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান হাবীব, গীতিকবি শহীদুল্লাহ ফরাজী প্রমুখ।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম