Logo
Logo
×

শেষ পাতা

অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশের কাছে ম্যাজিক নেই: আইজিপি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশের কাছে ম্যাজিক নেই: আইজিপি

পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, সারা দেশের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশের কাছে ম্যাজিক নেই। ছিনতাই-খুনের মতো অপরাধ কমাতে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। শনিবার রাজধানীর রাজারবাগে বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার্স কল্যাণ সমিতির (বিআরপিওয়া) ৪১তম বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

এ সময় ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, স্বাধীনতার পর এমন পুলিশ বাহিনী দেখতে চায়নি জনগণ। জুলাই-আগস্টের ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। এখনো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে নিজেদের পুলিশ অফিসার পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করছি।

অপরাধ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আইজিপি বলেন, সারা দেশের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশের কাছে ‘ম্যাজিক’ নেই। ছিনতাই-খুনের মতো অপরাধ কমাতে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। সব ধরনের অপরাধ কমাতে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। বিষয়টি নিয়ে ঢাকাসহ সারা দেশের পুলিশ সুপারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ছাত্রদের সহযোগিতা চাই। আইজিপি বলেন, জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে যে ভূমিকা পুলিশ রেখেছে তার জন্য পুরো পুলিশ সামাজিকভাবে লজ্জিত। সেবার মান বাড়িয়ে সামাজিক অবস্থান ফেরাতে হবে।

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, আগুনের ঘটনার তদন্ত চলছে। এখনো সিরিয়াস কিছু পাওয়া যায়নি। তদন্ত কমিটি বিস্তারিত জানাবে। বিভিন্ন জেলার সমন্বয়কদের হুমকির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হুমকি সংক্রান্ত প্রতিটি ঘটনা গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে এবং সুরাহা করা হচ্ছে। কালিয়াকৈরের ঘটনা ছিনতাইয়ের। নারায়ণগঞ্জের ঘটনা মোবাইল ছিনতাইয়ের। আমরা ছাত্র সমন্বয়কদের নারায়ণগঞ্জ নিয়ে গেছি। তারা দেখেছেন এবং ভুক্তভোগীর পরিবারের সঙ্গে কথাও বলেছেন, তারা সন্তুষ্ট। এটা টার্গেট কিলিং নয়। এছাড়া দুটি হুমকির ঘটনা আছে। একটা ময়মনসিংহের। ব্র্যাকের মেহের নামের একজন ছাত্রকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল, সেটি সত্য। এ ঘটনায় সিরাজগঞ্জ থেকে এক স্কুলছাত্রকে গ্রেফতার করেছিল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। সে দশম শ্রেণির ছাত্র। আমরা তাকে তার বাবা-মায়ের জিম্মায় ফেরত দিয়েছি। প্রতিটি ঘটনা সুরাহার জন্য চেষ্টা করছি। তবে প্রতিটি ঘটনা একইসূত্রে গাঁথা তা নয়। আইজিপি আরও বলেন, পুলিশের যেসব কর্মকর্তার চাকরি ১০-১২ দিন আছে তাদের পদোন্নতির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমি নিজে অবসরে গিয়েছিলাম। আবার দায়িত্ব পেয়েছি। কতটুকু দায়িত্ব পালন করতে পারব জানি না। তবে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি, আপনাদের সাহায্য ও পরামর্শ চাই। বিদায়ের সময় যেন সম্মান নিয়ে যেতে পারি।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, আন্দোলনে হাজার ছাত্র-জনতার মৃত্যু দুঃখের কাহিনি রচনা করেছে। আমরা স্বাধীন দেশের পুলিশ। কী কারণে মানুষের এত ক্ষোভ পুলিশের ওপর? জুলাই-আগস্টের ঘটনা আমাদের সামাজিকভাবে অনেক নিগৃহীত করেছে। এখন পর্যন্ত সমাজের বিভিন্ন স্তরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে নিজেদের পুলিশ অফিসার পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করছি। এই ট্রমা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। বের হয়ে আসার জন্য একটিই উপায়, মানুষকে আমাদের সেবা দিতে হবে। সেবাদানের মাধ্যমেই একমাত্র পুলিশের হারানো ইমেজ বা গৌরবকে পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হব। ৫ আগস্টের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৭২ ঘণ্টা আগেও যদি তখনকার নেতৃত্বে থাকা পুলিশ অফিসাররা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতেন তাহলে অনেকের জীবন রক্ষা হতো। পাশাপাশি পুলিশ সদস্যদেরও জীবন রক্ষা হতো। কিন্তু এরূপ সিদ্ধান্ত তখন নেওয়া হয়নি।

ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, বিশেষ করে পুলিশে গত ১৫ বছরে যারা নেতৃত্বে ছিলেন তারা কী ভূমিকা রেখেছিলেন? তারা কী কর্মকাণ্ড করলেন যে এদেশের মানুষ পুলিশের প্রতি এত বিরক্ত হলো? যার বহিঃপ্রকাশ ৪৪ জন পুলিশ সদস্যকে জীবন দিতে হলো, শত শত সহকর্মীকে নানাভাবে ক্ষতবিক্ষত হতে হলো। সঙ্গে পুলিশের থানা, ফাঁড়ি, অস্ত্র লুট হয়ে গেল। পুলিশের যারা নেতৃত্বে ছিলেন তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কি না বা নিতে পেরেছেন কি না, সেই বিচারের বিবেচনা আপনাদের হাতে ছেড়ে দিলাম। তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক অ্যাসোসিয়েশন আছে, আমাদের দুটি আছে। একটি সার্ভিং অফিসারদের, আরেকটি রিটায়ার্ড অফিসারদের। সব অ্যাসোসিয়েশনেই প্রতিযোগিতা, মতপার্থক্য থাকবে। কিন্তু আমি আশা করি সার্ভিং এবং অবসরপ্রাপ্ত অ্যাসোসিয়েশনের মতপার্থক্য কমিয়ে এনে নিজেদের ঐক্যবদ্ধ রেখে এগিয়ে যেতে হবে। পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত অ্যাসোসিয়েশন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সেই ভূমিকা পালন করতে পারেনি। বিভিন্ন সামাজিক ও বিভিন্ন বিষয়ে এই সংগঠন যেন আরও জোরালো ভূমিকা পালন করে সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

বিআরপিওয়ার সভাপতি মতিউর, সেক্রেটারি আনিসুজ্জামান : আইজিপি বাহারুল ইসলামের নিদের্শনায় বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার্স কল্যাণ সমিতির (বিআরপিওয়া) ২০২৫ সালের ৩৫ সদস্যবিশিষ্ট অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সভাপতি সিআইডির অতিরিক্ত আইজিপি মতিউর রহমান শেখ ও ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আনিসুজ্জামানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। অ্যাডহক কমিটির প্রথম সভায় ৩৫ সদস্যের মধ্যে দপ্তর বণ্টন করা হয়। বিআরপিওয়ার সভাপতি এম আকবর আলী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম