লামার আগুন ভূমিবিরোধে জড়িত ‘বেনজীরের লোক’
পাহাড়ে নিরাপত্তায় সরকার বদ্ধপরিকর-সুপ্রদীপ চাকমা
ইলিয়াছ সানি, লামা (বান্দরবান)
প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বান্দরবানের লামায় ১৭টি বসতঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে ভূমিবিরোধকে কেন্দ্র করে। এর সঙ্গে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মং ওয়াই চিং এবং সরই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা ইদ্রিস কোম্পানি জড়িত। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের। মং ওয়াই চিং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের ম্যানেজার নামে পরিচিত।
এদিকে শুক্রবার লামার সরই ইউনিয়নের টঙ্গঝিরির বেতছড়াপাড়ায় আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরির্দশন করেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। এ সময় তিনি বলেন, ভূমিবিরোধের জেরে যারা আগুন লাগিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন এটি আইনগতভাবে সামাধান করবে।
তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারের চলমান দাঙ্গার আগুন এখানে যেন না ছড়ায়। এজন্য সবাইকে সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে। পাহাড়ি-বাঙালি সবাইকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে বসবাস করতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তায় বদ্ধপরিকর।
এ সময় উপদেষ্টার সঙ্গে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক থানজামা লুসাই, জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দীন, পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ কাউছারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। উপদেষ্টা ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে শীতবস্ত্র, চাল, ঢেউটিনসহ নানা সামগ্রী বিতরণ করেন।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ২০১৭ সালে বেতছড়াপাড়ায় বেনজীর আহমেদ স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মং ওয়াই চিং মারমা এবং চেয়ারম্যান ইদ্রিস কোম্পানির সহযোগিতায় পাহাড়ে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের জুমচাষের জমি জবরদখল করে বাগানবাড়ি তৈরি করেন। বেনজীরের সেই বাগানবাড়ি ‘এসপি বাগান’ নামে পরিচিত ছিল। বাগানবাড়ি দেখাশোনায় মো. ইব্রাহিম নামে এক ব্যক্তিকে মাসে ১০ হাজার টাকা বেতনে কেয়ারটেকার নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তখন ওই এলাকা থেকে ২০টি ত্রিপুরা পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়। ৫ আগস্টের পর ১৯টি পরিবার সেখানে আবারও ঘর তৈরি করে বসবাস শুরু করে। ২৪ ডিসেম্বর দুর্বৃত্তের আগুনে ১৭টি বসতঘর পুড়ে যায়।
স্থানীয় সাবেক চেয়ারম্যান ফরিদুল আলম, হালিম মেম্বার ও নাছির মেম্বার জানান, টঙ্গঝিরির ওই এলাকায় ত্রিপুরা ও স্থানীয়রা জুমচাষসহ বিভিন্ন সবজির আবাদ করে আসছিল কয়েক যুগ ধরে। কিন্তু কয়েক বছর আগে সেখানে বেদখল করে আওয়ামী লীগ নেতারা।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, দখলবাজ আওয়ামী লীগ নেতারাই অগ্নিসংযোগের সঙ্গে জড়িত। বান্দরবানে জমি নিতে হলে জেলার স্থায়ী বাসিন্দা সনদ, রাজা সনদ ও হেডম্যান সনদ লাগে। চেয়ারম্যান ইদ্রিস কোম্পানি এতে সহযোগিতা করেন। তিনি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে স্থায়ী সনদ দিয়ে বাকি কাজ সহজ করে দেন। এ বিষয়ে অভিযুক্ত সরই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইদ্রিস কোম্পানি যুগান্তরকে বলে, এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমি তাদের (বেনজীর ও মং ওয়াই চিং) চিনি না। তাদের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। এদিকে সরকারপতনের পর থেকে মং ওয়াই চিং আত্মগোপনে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, আমরা ঘটনা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি, জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।