হাসান আরিফকে শ্রদ্ধা
এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হারাল বাংলাদেশ: প্রধান বিচারপতি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
শোক, ভালোবাসা ও ফুলেল শ্রদ্ধায় সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে বিদায় নিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ। শনিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে সুপ্রিমকোর্টের ইনার গার্ডেন প্রাঙ্গণে জানাজার মাধ্যমে তাকে বিদায় জানান বন্ধু, সহকর্মী, আইনজীবী, রাজনীতিবিদ ও শুভানুধ্যায়ীসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
হাসান আরিফকে শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ আইনের জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রকে হারাল।
জানাজার পর প্রধান বিচারপতি, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তার লাশ গাড়িতে তোলা হয়।
সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হাসান আরিফ শুক্রবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। তিনি দেশের ১১তম অ্যাটর্নি জেনারেল হিসাবে ২০০১ সালের ১৪ অক্টোবর থেকে ২০০৫ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। রাজধানীর ধানমন্ডির ৭ নম্বরের বায়তুল আমান মসজিদে শুক্রবার বাদ এশা হাসান আরিফের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হাসান আরিফের লাশ দীর্ঘদিনের প্রিয় কর্মস্থল সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে আনা হয়। সেখানে জানাজার পর বেলা সাড়ে ১২টায় সচিবালয়ে উপদেষ্টা হাসান আরিফের তৃতীয় জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ইনার গার্ডেনে তার আরেকটি জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দীন, সাবেক প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, এম আমীর-উল-ইসলাম, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ফিদা এম কামাল, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন, সুপ্রিমকোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতি, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার প্রমুখ জানাজায় অংশ দেন।
জানাজার আগে মরহুমের জন্য দোয়া প্রার্থনা করেন হাসান আরিফের ছেলে মোয়াজ আরিফ। স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য দেন হাসান আরিফের জুনিয়র আইনজীবী আশিক আল জলিল। হাসান আরিফ সম্পর্কে স্মৃতিচারণা ও বক্তব্য দেওয়ার কার্যক্রম সঞ্চালনা করেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন।
জানাজার আগে প্রধান বিচারপতির লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মাহবুব উদ্দিন খোকন। এতে বলা হয়, হাসান আরিফের মৃত্যুতে বাংলাদেশ আইনের জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রকে হারাল।
ইনার গার্ডেন প্রাঙ্গণে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘তিনি (হাসান আরিফ) আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তাকে হারানোয় বারে (আইনজীবী সমিতি) একটি শূন্যতা সৃষ্টি হবে। ভালো ও অভিজ্ঞ আইনজীবী বন্ধুকে হারিয়েছি। একের পর একজনকে হারাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘তিনি (হাসান আরিফ) সেই ধরনের লোক ছিলেন, যারা আইনজীবী হিসাবে অভিজ্ঞ এবং সমাজ ও দেশের প্রতি দরদি।’ ড. কামাল বলেন, হাসান আরিফ সবসময় ধর্মনিরপেক্ষ ছিলেন। সংবিধানকে সমুন্নত রাখার জন্য একজন যোদ্ধা হিসাবে কাজ করেছেন। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘তার সাবমিশন (আদালতে শুনানিতে বক্তব্য উপস্থাপন) অনুকরণীয়। একজন ভালো আইনজীবী ও একজন ভালো মনের মানুষকে আমরা হারিয়েছি, যেটি অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে আমাদের।’
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানান, বর্তমানে বিদেশে অবস্থানরত হাসান আরিফের মেয়ে দেশে ফেরার পর দাফনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি ২২ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১০টায় দেশে পৌঁছাবেন।