Logo
Logo
×

শেষ পাতা

কেরানীগঞ্জে রূপালী ব্যাংকে ডাকাতির চেষ্টা

হাতে খেলনা পিস্তল থাকলেও আচরণ ছিল ‘পেশাদার’

Icon

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

হাতে খেলনা পিস্তল থাকলেও আচরণ ছিল ‘পেশাদার’

খেলনা পিস্তল নিয়ে তিন কিশোর বৃহস্পতিবার কেরানীগঞ্জে রূপালী ব্যাংকে ডাকাতি করতে এলেও তাদের আচরণ ছিল পেশাদার ডাকাতের মতো। সে সময় ব্যাংকটিতে অবস্থান করা লোকজন আসল পিস্তল ভেবে প্রাণভয়ে কেউ প্রতিরোধে এগিয়ে আসেননি। আত্মসমর্পণের পর এরা অস্ত্রগুলো পুলিশের কাছে জমা দেওয়ার পরই জানা যায় এগুলো খেলনা পিস্তল। এদিকে রূপালী ব্যাংকের জিনজিরা শাখায় ডাকাতি চেষ্টার ঘটনায় বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার তারেক মাহমুদ বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন। আটক হওয়া এই তিনজনকে মামলায় আসামি করে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দস্যুতার অভিযোগ আনা হয়েছে।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, আসামিদের মধ্যে দুজন অপ্রাপ্তবয়স্ক। শুক্রবার তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তাদের গাজীপুরের টঙ্গীতে কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে। অপর আসামি প্রাপ্তবয়স্ক (২২ বছর)। তার ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আসামিরা হলো-লিয়ন মোল্লা ওরফে নিরব (২২) ও অপর দুজন কিশোর (১৬)। লিয়ন গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার কুমুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা কবির মোল্লার ছেলে। দুই কিশোরের বাড়ি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কদমতলী খালপাড় এলাকায়। লিয়ন পেশায় গাড়িচালক। বাকি দুজনের একজন একটি স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী, আরেকজন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী।

বৃহস্পতিবার কেরানীগঞ্জের রূপালী ব্যাংক ডাকাতির সময় ভেতরে ডাকাতদের হাতে ৬ জন গ্রাহক, এক শিশু ও ব্যাংকের ১০ কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রায় পৌনে ৪ ঘণ্টা জিম্মি অবস্থায় ছিলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে ডাকাতরা আত্মসমর্পণ করলে মুক্তি পান জিম্মিরা।

জিম্মি থাকা গ্রাহকদের একজন চুনকুটিয়ার বাসিন্দা বাবুল খান। পেশায় তিনি নির্মাণ ঠিকাদার। শুক্রবার বিকালে তিনি জিম্মি অবস্থার বর্ণনা দেন এই প্রতিবেদকের কাছে। তিনি বলেন, দুপুর পৌনে ২টার দিকে এক লাখ টাকা জমা দিতে ব্যাংকে যাই। দুপুরের দিকে তেমন ভিড় ছিল না। আমিসহ মাত্র ৬ জন গ্রাহক। একজনের সঙ্গে ছোট একটা বাচ্চা। টাকাগুলো ক্যাশ কাউন্টারে জমা দিয়েছি, এমন সময় ৩ জন লোক ব্যাংকে ঢুকে পড়ে। সবার মুখমণ্ডল ঢাকা। এ সময় ভেতরে থাকা ব্যাংকের একজন গার্ড পা পিছলে মেঝেতে পড়ে যায়। একজন তার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করার হুমকি দেয়। সবাইকে চুপচাপ থাকতে বলে। অ্যালার্ম বাজাতে নিষেধ করে। এ সময় ভয় আর আতঙ্কে সবাই অস্থির হয়ে পড়ে। অনেকেই কান্নাকাটি করতে থাকেন। এরপর সবাইকে এক জায়গায় এনে ফ্লোরে বসিয়ে দেয়। সবার মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। এরপর সঙ্গে করে আনা ৩টি ব্যাগে ক্যাশ কাউন্টার থেকে টাকা ভরে কাঁধে ঝুলিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়। ৫-৭ মিনিটের মধ্যে এসব ঘটে যায়।

বাবুল খান আরও বলেন, এদিকে ব্যাংক ডাকাতির বিষয়টি বাইরে জানাজানি হয়ে গেলে প্রতিরোধের জন্য মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়। এলাকাবাসী ব্যাংক ঘিরে ফেলেন এবং বাইরে থেকে ব্যাংকের গেট তালাবদ্ধ করে দেন। এতে ডাকাতরা ব্যাংকের ভেতর আটকা পড়ে। তবে এ সময় তাদের বিচলিত হতে দেখা যায়নি। এরপর ঘটনাস্থলে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা উপস্থিত হলেও তারা নির্বিকার ছিল। বলছিল-পুলিশ আমাদের কিছুই করতে পারবে না। তবে যখন সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়, তখন তারা মনোবল হারিয়ে ফেলে। কাঁধ থেকে টাকার ব্যাগ নামিয়ে মেঝেতে রাখে।

তিনি বলেন, এ সময় ওরা অস্থির হয়ে পড়ে। এদিকে ব্যাংকের একজন অফিসারের মোবাইলে ফোন এলে সেই ফোন দিয়ে ওরা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে। এভাবে কয়েক ঘণ্টা কেটে যায়। এ সময় দুজন গ্রাহক টয়লেট ব্যবহার করতে চাইলে ওরা অস্ত্রের মুখে তাদের অনুমতি দিয়েছে। একজন নারী কর্মকর্তা অনেক কান্নাকাটি করছিলেন। তাকেও তারা ক্ষতি করবে না বলে আশ্বস্ত করে কান্না থামাতে বলে। একপর্যায়ে একটি ব্যাগে ১৫ লাখ টাকা ভরে সেটা নিয়ে ওরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।

বাবুল খান বলেন, আমরা ওদের চেহারা দেখতে পারিনি। তবে কণ্ঠস্বর ও শারীরিক গঠন দেখে বুঝতে পারছিলাম এরা কিশোর বয়সের।

ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আহমেদ মুঈদ ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, এ ঘটনায় আমরা জিম্মি লোকজনের সেফটিকে (নিরাপত্তা) সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে অভিযান চালিয়েছি। আটকে পড়ার পর মোবাইলে ওদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়। আমরা সময় নিয়েছি, নানাভাবে বুঝিয়ে ওদের কনভিন্স করেছি। ওদের দাবি আমরা জানতে চেয়েছি। ওরা ১৫ লাখ টাকা ও নিরাপদ প্রস্থান দাবি করে। আমরা রাজি হই। ওরা ১৫ লাখ টাকা ব্যাগে ভরে সঙ্গে নিয়ে আত্মসমর্পণ করে। এ সময় ওই টাকা ও ওদের প্যান্টের পকেট থেকে আরও ৩ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। আত্মসমর্পণের পর তাদের গ্রেফতার করা হয়।

এসপি বলেন, ব্যাংক লুটের বিষয়টি পরিকল্পিত ছিল। ওদের কাছ থেকে উদ্ধার করা পিস্তলগুলো ফেক (খেলনা) ছিল। এদের দুজন ব্যাংকের আশপাশে বসবাস করে। কাছাকাছি হওয়ায় ওরা এই ব্যাংককে টার্গেট করে। কিশোর অ্যাডভেঞ্চার ও ফ্যান্টাসি থেকে তারা এমনটা করেছে। এ ঘটনার আগে তারা বিভিন্ন মুভি ও অনলাইনে ভিডিও দেখেছে। জিজ্ঞাসাবাদে ওরা জানিয়েছে, একজন রোগীকে সাহায্য করতে ও আইফোন কিনতে তারা ব্যাংক লুটের পরিকল্পনা করে। রোগীকে সহায়তা করার বিষয়টি আমরা এখনো যাচাই করতে পারিনি।

ব্যাংকের ম্যানেজার শেখর মন্ডল বলেন, ব্যাংকের সব টাকা গুনে দেখা হয়েছে। এক টাকাও খোয়া যায়নি। রোববার থেকে ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম