রাজস্ব বাড়ানোর শর্তে কঠোর আইএমএফ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বাংলাদেশকে চলমান ঋণ কর্মসূচিতে আরও ৭৫ কোটি ডলার দিতে সম্মত হয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তবে এজন্য কর আদায় ও নীতি গ্রহণ সংস্থাকে আলাদা করাসহ রাজস্ব বাড়ানোর শর্তে কঠোর অবস্থানে সংস্থাটি।
এসব শর্তের কৌশল গ্রহণে সন্তুষ্টি সাপেক্ষে ৫ ফেব্রুয়ারি সংস্থার নির্বাহী পর্ষদ বোর্ড সভায় বাংলাদেশের জন্য চতুর্থ কিস্তিতে ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার ছাড় করার প্রস্তাব উপস্থান করা হবে। বোর্ডে অনুমোদন হলে ১০ ফেব্রুয়ারি তা ছাড় হতে পারে। বৃহস্পতিবার আইএমএফ মিশন প্রধানের সংবাদ সম্মেলন ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের আগে শর্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা ও নতুন ঋণের বিষয়ে দরকষাকষি করতে ৩ ডিসেম্বর থেকে আইএমএফের ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল ঢাকা সফরে আসে। মিশন শেষে প্রতিনিধিদলের প্রধান সংস্থার গবেষণা বিভাগের ডেভেলপমেন্ট ম্যাক্রোইকোনমিকসের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, চতুর্থ কিস্তির ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার ছাড়ে তারা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছেছে।
তবে রাজস্ব আয় বাড়ানোসংক্রান্ত একটি কমিশন গঠনসহ কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে ৫ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদ সভায় চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। বোর্ডের অনুমোদন সাপেক্ষে পরবর্তীতে তা ছাড় করা হবে। তিনি জানান, চলমান কর্মসূচির আওতায় ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে ৫৩০ কোটি করতেও তারা সম্মত।
আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশকে প্রতিটি কিস্তি পেতে বেশকিছু শর্ত পরিপালন করতে হচ্ছে। চতুর্থ কিস্তির জন্য জুনভিত্তিক দেওয়া বিভিন্ন শর্তের মধ্যে কর-রাজস্ব সংগ্রহ ছাড়া সব শর্ত পূরণ হয়েছে। তাই এবার মিশনের অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের সঙ্গে বৈঠকে বারবারই কর আহরণ বাড়ানোর বিষয়টি উঠে এসেছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এর আগের কিস্তিতেও কর রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যায়নি। তাই এ বিষয়ে বেশ কঠোর অবস্থানে আইএমএফ।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ঋণ কর্মসূচির আওতায় রাজস্বের একটি লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও তা বাধ্যতামূলক ছিল না। অর্থাৎ যৌক্তিক কারণ ব্যাখ্যা সাপেক্ষে তা মিশন কর্মকর্তারাই নিষ্পত্তি করতে পারতেন। কিন্তু পরবর্তী কিস্তি থেকে এ লক্ষ্যমাত্রাও বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। অর্থাৎ কর রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ সরকারকে আইএমএফ বোর্ডে অব্যাহতি চাইতে হবে।
এছাড়া কর-জিডিপির অনুপাত বাড়াতে রাজস্ব আদায় ও নীতি গ্রহণ সংস্থাকে আলাদা করার শর্ত দিয়েছে আইএমএফ। যত দ্রুত সম্ভব এ বিষয়ে একটি রোডম্যাপ তাদের দিতে হবে। একই সঙ্গে অযৌক্তিক করছাড় আরও কমানোসহ রাজস্ব আহরণ প্রক্রিয়া অটোমেটেড করতে হবে। এছাড়া মুদ্রার বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করার শর্তও দিয়েছে আইএমএফ।
সংবাদ সম্মেলনে মিশন প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির সার্বিক চিত্র এখনও খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। দীর্ঘদিনেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না মূল্যস্ফীতি। এখন যে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি তা আইএমএফের ধারণার চেয়েও অনেক বেশি। বাংলাদেশের বাজারে অব্যাহতভাবে খাদ্যমূল্য বাড়ছে, এজন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
আইএমএফ মনে করে, মূল্যস্ফীতির চাপে বাংলাদেশের অর্থনীতি। এজন্য প্রবৃদ্ধি কমে ৩ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে আসবে। নতুন টাকা ছাপিয়ে কিছু দুর্বল ব্যাংককে দেওয়ার বিষয়েও মিশন প্রধান উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, এটা হয়তো সাময়িক স্বস্তি দিতে পারে, কিন্তু এটা লম্বা সময়ের জন্য হতে পারে না। তবে আইএমএফ বিশ্বাস করে, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, তারা যে টাকাটা নতুন করে বাজারে ছেড়েছেন, সেটা তারা দ্রুত বাজার থেকে তুলেও নেবেন। তবে সেটা যদি না করেন, তাহলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। যা দেশের সাধারণ মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়াবে।
ব্যাংক খাতের দুর্বলতা দূর করার পরামর্শ দিয়ে আইএমএফ বলেছে, দ্রুত যেসব কাজ করতে হবে তার মধ্যে রয়েছে সঠিকভাবে খেলাপি ঋণ চিহ্নিত করা, বর্তমানে যেসব নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা রয়েছে তার কার্যকর বাস্তবায়ন এবং আর্থিক খাতে পুনর্গঠনের জন্য একটি রোডম্যাপ বা পথনকশা তৈরি করা। আর্থিক খাতের সংস্কার কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা ও সুশাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে আইএমএফ।
এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অর্থনীতিতে বেশ চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে আইএমএফ যেভাবে বলছে, এ খারাপ অবস্থা নয়। তাছাড়া রাজস্ব আদায় ও নীতি গ্রহণ সংস্থাকে আলাদা করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।