মুক্ত আলোচনায় গুম তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান
বিচার বিভাগে কোনো সরকারই নজর দেয়নি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, যদি মানুষ অনুভব করে যে বিচার বিভাগ স্বাধীন নয়, তাহলে রাষ্ট্রে সেই বিচার বিভাগের প্রতি কোনো আস্থার জায়গা থাকে না। বিচার বিভাগের প্রতি কোনো সরকারই যথার্থ নজর দেয়নি।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘নির্বাহী বিভাগ হতে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের ১৭ বছর’ শীর্ষক মুক্ত আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
মিনৌরী বাংলাদেশ’র সহায়তায় স্বেচ্ছাসেবী মানবাধিকার সংগঠন ‘হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশন’ এবং ‘মাসিক আইন ও বিচার’ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বিচার বিভাগের আজকের অবস্থা আমাদের সামষ্টিক ব্যর্থতা। আইনজীবীরা বিচারকদের বিচারিক কার্যক্রমের সহযোগী। কোর্টে বেঞ্চ ও বার একই মুদ্রার দুই পিঠ। এজন্য এই দুই অংশকে সমন্বয়ের মাধ্যমে বিচার বিভাগ সাজাতে হবে। বিচারকদের মানসিকভাবে স্বাধীন হতে হবে। তা-না হলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কাঙ্ক্ষিত ফল আনতে পারবে না।
আইন সংস্কার কমিশনের সদস্য মাজদার হোসেন বলেন, পৃথক সচিবালয় স্থাপনের দাবি নিয়েই আমাদের সংগ্রাম। এ দাবির প্রতি অটল রয়েছি। বিচার বিভাগ প্রধান বিচারপতির নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে। এমন একটি অবকাঠামো তৈরি করতে হবে যেখানে বিচারকদের নিয়োগ, নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বিষয়ক সব সিদ্ধান্ত প্রধান বিচারপতির কাছে অর্পিত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, যেই সিআরপিসি ব্রিটিশরা ফেলে দিয়েছে, আমরা এখনো তা আঁকড়ে ধরে আছি। বাংলাদেশে কাগজে-কলমে বিচার বিভাগ স্বাধীন হলেও তা আমাদের আশা পূরণ করতে পারেনি। রায়ের ১২ দফার কোনোটাই পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। আজও বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করে প্রশাসন। অথচ আইন বিভাগের কাজে প্রশাসন ‘ইন্টারফেয়ার’ করতে পারে না। বিগত ৫৩ বছরে কোনো রাজনৈতিক দল জনস্বার্থে আইন করেনি। তারা নিজেদের রক্ষা ও ক্ষমতার স্বার্থে আইন করেছে। তারা কোনো কালাকানুন বাতিল করেনি। আমরা আষ্টেপৃষ্ঠে শাসক গোষ্ঠী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
সুপ্রিমকোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার, জেলা জজ ও সংবিধান আলোচক ইকতেদার আহমেদ বলেন, বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ এখন আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে। তা সুপ্রিমকোর্টের অধীনে নিতে হবে। তবে আগে সুপ্রিমকোর্টে তা নিয়ন্ত্রণের মতো অবকাঠামো ও পরিস্থিতি ঠিক করতে হবে।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য জিমি আমির বলেন, মানুষ সুবিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছিল বলেই ছাত্র-জনতার আন্দোলন হয়েছে। তাই সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে। আর এজন্যই বিচার বিভাগকে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা দিতে হবে।
বাংলাদেশ আইনজীবী অধিকার পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. খাদেমুল ইসলাম বলেন, বিচার বিভাগ ও বিচারকদের স্বাধীনতা নিশ্চিত না করতে পারলে মানুষের আস্থা অর্জন সম্ভব নয়। সভাপতির বক্তব্যে হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, ১৬ বছর নয়, ৫৩ বছরের অবিচার ধরে কথা বলতে হবে। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ নিছক জজ বা উকিলদের বিষয় না। পৃথকীকরণ না হলেও জজ সাহেব বেতন বা উকিল সাহেব ফি পাবেন, তাদের লস নেই। ক্ষতি পুরোটাই জনগণের। এটা জনগণের প্রতিদিনের ন্যায় পাওয়ার বিষয়, একটি সাংবিধানিক প্রত্যাদেশ।