Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ভোজ্যতেলে অস্থিরতা কাটেনি চট্টগ্রামে

Icon

আহমেদ মুসা, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ভোজ্যতেলে অস্থিরতা কাটেনি চট্টগ্রামে

সরকারের নানা উদ্যোগের পরও চট্টগ্রামে ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা কাটেনি। চাহিদার মাত্র ৩০ শতাংশ মিলছে। দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জেও ভোজ্যতেলের সংকট বিরাজ করছে। পাইকারি বাজার থেকে হঠাৎ উধাও পণ্যটি। বিশেষ করে এক ও দুই লিটারের বোতলের সরবরাহ নেই বললেই চলে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন ক্রেতারা। বাজারটিতে শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। লিটারপ্রতি ৮ টাকা বাড়ানো হলেও বাজারে আরও অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে কিছুটা কমেছে শীতকালীন সবজির দাম। তবে মুরগি ও মাছের দামও ঊর্ধ্বমুখী।

সোমবার ভোজ্যতেলের দাম প্রতি লিটারে ৮ টাকা বাড়ানো হয়। এখন প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকায়, যা এতদিন ছিল ১৬৭ টাকা। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৪৯ থেকে বেড়ে ১৫৭ টাকা হয়েছে। খোলা পাম তেলের লিটারও ১৪৯ থেকে বাড়িয়ে ১৫৭ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয় ৮৬০ টাকা, যা আগে ছিল ৮১৮ টাকা।

খাতুনগঞ্জের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হলেও অনেক কোম্পানি তেল সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা সরবরাহ পাচ্ছেন না। ১০০ লিটার সয়াবিন তেলের চাহিদার বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ২০ থেকে ৩০ লিটার। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ তুলেছেন, মিল মালিকরা নাকি সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে বাজারে তেলের সংকট বেড়েই চলছে। এভাবে চলতে থাকলে আসন্ন রমজানে ভোজ্যতেলের সংকট সমগ্র বাজারকে অস্থির করে তুলতে পারে। তারা আগের মতো চাহিদা অনুযায়ী তেল সরবরাহ দিচ্ছে না। এছাড়া ভোজ্যতেল নিয়ে একটি চক্র সিন্ডিকেট করে বাজারকে অস্থিতিশীল করছে। তারাও বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। ফলে দামও হুহু করে বাড়ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকার দুই দফায় শুল্ক-কর কমালেও সুফল মিলছে না; বরং দাম আরও বেড়েছে। একাধিক কারণে ভোজ্যতেলের বাজার অস্থির। দেশের ডলার সংকট এখনো চলমান রয়েছে। আমদানিকারকরা আগের মতো ভোজ্যতেল আমদানি করছেন না। বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দামও আগের চেয়ে বেড়েছে। এসব কারণে ভোজ্যতেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী। দেশের ইতিহাসে পাম অয়েলের দাম এবারের মতো আর বাড়েনি। মূলত ইন্দোনেশিয়ার উৎপাদন সংকট, বায়োডিজেলে পাম অয়েল ব্যবহারের পরিমাণ ৫ শতাংশ বৃদ্ধিজনিত কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির বুকিং রেকর্ড পরিমাণে বেড়ে গেছে। এসব কারণে ভোজ্যতেলের বাজার স্থিতিশীল হচ্ছে না। আবার কিছু কিছু ভোজ্যতেল কোম্পানি শর্তসাপেক্ষে তেল বিক্রি করছে।

একাধিক খুচরা ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, কোম্পানি শর্ত দিয়ে ভোজ্যতেল সরবরাহ করছে। শর্তানুযায়ী এক কার্টন তেলের সঙ্গে ১ বস্তা আটা, সুজি ও চিনি কিনতে হচ্ছে। শর্ত না মানলে লিটারপ্রতি ৮-১০ টাকা বাড়তি দিতে হচ্ছে।

পাইকারি বাজারে এক সপ্তাহ আগে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে প্রতি মন সয়াবিন বিক্রি হয়েছিল ৬ হাজার ৭০০ টাকায়। এখন ২০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ৯০০ টাকায়। সে হিসাবে প্রতি লিটারে দাম পড়ছে ১৭২ দশমিক ৫০ টাকা। খুচরায় লিটারপ্রতি ৪-৫ টাকা লাভ যোগ করলে বিক্রি করতে হবে ১৭৪-১৭৬ টাকায়। কিন্তু খুচরা বাজারে সরকার ও কোম্পানিগুলোর নির্ধারিত সয়াবিনের লিটারপ্রতি সর্বোচ্চ মূল্য ১৭৫ দশমিক ৫ টাকা। খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকার বেশি দরে। একইভাবে আগস্টের প্রথমদিকে পাম অয়েলের মনপ্রতি দাম ছিল ৪ হাজার ৮০০ টাকার মধ্যে। ওই সময়ে সয়াবিনের পাইকারি দাম ছিল মনপ্রতি ৬ হাজার টাকার মতো।

খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী কামরুল হাসান বলেন, মিল মালিক বা আমদানিকারকরা এখনো ভোজ্যতেল সরবরাহ স্বাভাবিক করেনি। একইভাবে দাম বাড়ানো হলেও ডিলাররা এখনো খুচরা দোকানগুলোয় বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহ শুরু করেনি। সরবরাহ স্বাভাবিক হতে আরও কয়েকদিন সময় লাগতে পারে। এ কারণে বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে।

বাজারদর : বেড়েছে মাছের দাম। শুক্রবার পোয়া মাছ ২৮০, লইট্টা ২০০, পাবদা ৪০০-৪৫০, রূপচাঁদা ৫৫০-৬৫০, তেলাপিয়া ২০০-২২০, পাঙাশ ১৭০-১৮০, রুই ৩৫০-৩৮০, কাতলা ৩৫০, বেলে ২৮০-৪০০ এবং মৃগেল ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বন্দরনগরে। সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ব্রয়লার ও দেশি মুরগিরও। কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ব্রয়লার মুরগি ১৭৫ টাকা এবং ৩০ টাকা বেড়ে দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৫৫০। এর বাইরে ২৮০-৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে সোনালি মুরগি। অপরিবর্তিত রয়েছে মাংসের দাম। হাড়সহ ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস।

শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়ায় কমেছে দাম। প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৫০, বরবটি ৬০ এবং ঢ্যাঁড়শ বাজারভেদে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি আকারভেদে প্রতিটি ৪০ থেকে ৫০ এবং পাতাকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুলা বাজারভেদে ২৫ থেকে ৩০ এবং গাজর ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মিষ্টিকুমড়ার কেজি ৪০, পোটল ৭০, করলা ১০০, শসা ৬০ থেকে ৭০, চিচিঙ্গা ১০০, বড় কদু ৬০, ক্যাপসিকাম ৩০০ এবং পাকা টমেটোর কেজি ১২০ টাকা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম