Logo
Logo
×

শেষ পাতা

বিএমডিএর নতুন সেচ নীতিমালা

বোরো আবাদে বাদ অর্ধেক জমি

কমবে উৎপাদন তীব্র হবে খাদ্য সংকট

আনু মোস্তফা

আনু মোস্তফা

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বোরো আবাদে বাদ অর্ধেক জমি

বছরের পর বছর ধরে গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের মাধ্যমে ফসলের জমিতে সেচ দেওয়ার ফলে ভূ-গর্ভের পানির স্তর তলানিতে ঠেকেছে রাজশাহীসহ বরেন্দ্র অঞ্চলের বিশাল এলাকাজুড়ে। পানি স্তর এতটাই নিচে নেমেছে যে এখন বরেন্দ্রভূমির রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আট উপজেলার ২৬টি ইউনিয়ন এলাকায় ১৭০ ফুট খনন করেও পানি উঠছে না গভীর নলকূপে। এসব এলাকার হাজারও হস্তচালিত নলকূপ এক দশক আগেই অচল হয়েছে। অব্যাহত পানি সংকট মোকাবিলা ও ভূ-গর্ভের পানিস্তর রক্ষায় নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আসন্ন বোরো মৌসুমজুড়ে একটা গভীর নলকূপ ৯৮০ ঘণ্টার বেশি চালাবে না। বছরে একটা গভীর নলকূপ চলবে ১ হাজার ৯৬০ ঘণ্টা। কৃষকেরা বলছেন, বিএমডিএর নতুন এ সিদ্ধান্তের কারণে বরেন্দ্রভূমির তিন জেলা রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার পানি সংকট এলাকাগুলোতে বোরো চাষ অর্ধেকে নেমে আসবে। একটা গভীর নলকূপ এলাকার সেচ স্কিমের অর্ধেক জমিতে এবার বোরো চাষ করা যাবে। বাকি অর্ধেক জমিতে চাষ করতে হবে বোরো ছাড়া সেচ সুবিধাবিহীন প্রচলিত অন্য ফসল। নতুন নীতিমালা সম্পর্কে আরও জানা গেছে, কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবার যে জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছে আগামী বছর সেই জমিতে কম সেচনির্ভর অন্য ফসল চাষ করতে হবে। এ নীতিমালা শুধু বোরো চাষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে বিএমডিএর সিদ্ধান্তে জানা গেছে। অক্টোবরে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ নতুন সেচ নীতিমালার এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও কৃষকেরা জানতে পেরেছেন ডিসেম্বরের প্রথমে প্রচারপত্র হাতে পেয়ে।

বরেন্দ্রের মাঠের কৃষকেরা জানিয়েছেন, ১ ডিসেম্বর নতুন সেচ নীতিমালার বিষয়ে অবহিত ও সচেতন করতে বিএমডিএর পক্ষ থেকে মাঠে মাঠে লিফলেট ও প্রচারপত্র বিতরণ শুরু করা হয়েছে। প্রচারপত্র হাতে পেয়ে কৃষকদের মাঝে হতাশা নেমে এসেছে। মাঠে মাঠে এখন সেচ কর্তন জমি চিহ্নিত ও শনাক্তের কাজ করছে বিএমডিএর মাঠ কর্মকর্তারা। বিএমডিএর প্রচারপত্রে বলা হয়েছে নতুন সেচ নীতিমালা ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ মে পর্যন্ত থাকবে। এই সময়ের বাইরে বোরোর নির্ধারিত জমিতেও আর সেচ দেওয়া হবে না। সেচ সংকোচনে কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে কৃষকদের মতামত ও পরামর্শ গ্রহণের প্রয়োজন ছিল বলে অনেক কৃষক জানিয়েছেন। আর কদিন পরেই তারা বোরোর জমি তৈরির কাজ শুরু করবেন। এমন সময়ে বিএমডিএ এমন সিদ্ধান্ত জানিয়ে কৃষকদের হতাশ করেছে।

গোটা উত্তরাঞ্চলের ১৩৫টি উপজেলা এখন বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অধিভুক্ত এলাকা। উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় বিএমডিএর গভীর নলকূপের সংখ্যা ১৫ হাজার ৯৬৫টি। এর মধ্যে রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও তানোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, গোমস্তাপুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা, নওগাঁর নিয়ামতপুর, সাপাহার ও পোরশায় রয়েছে ১ হাজার ৯৮০টি গভীর নলকূপ। অন্যদিকে বিএমডিএর অধিভুক্ত এলাকায় ব্যক্তি মালিকানার প্রায় ৫৬ হাজার গভীর ও অগভীর নলকূপ ভূগর্ভের পানি উত্তোলন করছে। কৃষকেরা বলছেন, ব্যক্তি মালিকানার গভীর নলকূপগুলো কমিয়ে আনলেই পানি স্তরের সংকট থাকবে না। কর্তৃপক্ষ সেটা না করে কৃষকদের উপর খাঁড়ার ঘা মেরে দিচ্ছেন। কারণ ব্যক্তি মালিকানার অধিকাংশ গভীর নলকূপ অবৈধ। বিএমডিএর নতুন সেচ নীতিমালার কারণে এবার অর্ধেক জমিতে বোরো আবাদ করতে পারবেন কৃষকেরা। যেসব কৃষক বিএমডিএর সেচ স্কিমের বাইরে বোরো আবাদ করবেন তারা সেচ সুবিধা পাবেন না।

নওগাঁর সাপাহার উপজেলার শীতলডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আতাউর রহমান বলেন, নতুন নিয়মের কারণে তাদের স্কিমের জমি দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এক ভাগে এবার বোরো ধান হবে; অন্য ভাগে পরের বার হবে। এর ফলে কৃষকদের বিপুল পরিমাণ জমি পতিত থাকার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, আমরাও বিষয়টি শুনেছি। আমরা বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য বিএমডিএকে বলেছি। নতুন সেচ নীতিমালার কারণে হাজার হাজার হেক্টর আবাদযোগ্য জমি অনাবাদি থাকার আশঙ্কা থাকছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম