চারদিকে উড়তে থাকে বিজয় নিশান
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের দিন যতই এগোতে থাকে বিজয়ের ততই দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাতে থাকে বীর বাঙালি মুক্তি সেনারা। একাত্তরের এই দিন আকাশ, জল-স্থল সবদিকে হানাদাররা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। চারদিকে উড়তে থাকে বিজয় নিশান। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় শত শত পাকিস্তানি সেনা আত্মসমর্পণ করে। শুধু ময়নামতীতেই আত্মসমর্পণ করে ১ হাজার ১৩৪ জন। আর সৈয়দপুরে আত্মসমর্পণ করে ৪৮ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের অধিনায়কসহ ১০৭ পাকিস্তানি সেনা। অন্যদিকে নিশ্চিত পরাজয় দেখে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করতে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের এ দেশীয় দোসরদের নিয়ে শিক্ষক, সাংবাদিক, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক ইত্যাদি বুদ্ধিজীবীদের ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করে।
১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর ছিল সোমবার। এদিন যৌথ বাহিনীর অগ্রবর্তী সেনাদল শীতলক্ষা ও বালু নদী অতিক্রম করে ঢাকার ৫-৬ মাইলের মধ্যে পৌঁছে যায়। বালু নদীর পূর্বদিকে পাকবাহিনী স্বীয় পরিসীমায় এক শক্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলে। বাসাবো ও খিলগাঁও এলাকার চারদিকে আগে থেকেই পাকিস্তান বাহিনী ফিল্ড ডিফেন্স বা আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থাসহ অবস্থান নিয়েছিল।
যৌথবাহিনী ঢাকার পতন দ্রুততর করার প্রয়োজনে যুদ্ধের কৌশল পরিবর্তন করে। কেননা ঢাকার পতন হলে আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তনের পরাজয় চূড়ান্ত হবে। ওদিকে পূর্ব ও উত্তর দিক থেকে মিত্রবাহিনী ঢাকার প্রায় ১৫ মাইলের মধ্যে পৌঁছে যায়। ৫৭নং ডিভিশনের দুটো ব্রিগেড এগিয়ে আসে পূর্ব দিক থেকে। উত্তর দিক থেকে আসে জেনারেল গন্ধর্ব নাগরার ব্রিগেড এবং টাঙ্গাইলে নামা ছত্রিসেনারা। পশ্চিমে ৪নং ডিভিশনও মধুমতি পার হয়ে পৌঁছে যায় পদ্মার তীরে।
রাত ৯টায় মেজর জেনারেল নাগরা টাঙ্গাইলে আসেন। ব্রিগেডিয়ার ক্লের ও ব্রিগেডিয়ার সান সিং সন্ধ্যা থেকে টাঙ্গাইলে অবস্থান করছিলেন। রাত সাড়ে ৯টায় টাঙ্গাইল ওয়াপদা রেস্ট হাউজে তারা পরবর্তী যুদ্ধ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনায় বসেন। আলোচনার শুরুতে মেজর জেনারেল নাগরা মুক্তিবাহিনীর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা যদি আমাদের বিনা বাধায় এতটা পথ পাড়ি দিতে সাহায্য না করতেন, তাহলে আমাদের বাহিনী দীর্ঘ রাস্তায় যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ত। রাস্তাতেই আমাদের অনেক শক্তি ক্ষয় হয়ে যেত।’
উত্তরাঞ্চলে যৌথবাহিনী দুপুরে গোবিন্দগঞ্জ থেকে ঢাকা মহাসড়ক ধরে বগুড়ার উদ্দেশে রওয়ানা হয়। বগুড়ায় তখন শত্রুবাহিনীর একটি রেজিমেন্ট কামান ও ট্যাংকসহ অবস্থান করছিল। হিলি রক্ষাব্যূহ ছেড়ে আগেই পাকসেন্যরা বগুড়ায় চলে এসে গড়ে তুলেছিল শক্তিশালী প্রতিরোধ। রাতে যৌথ বাহিনী চারদিক থেকে বগুড়া শহর ঘিরে ফেলে। মধ্যরাতে যৌথ বাহিনীর তিনটি ব্যাটালিয়ন উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব-উত্তর দিক থেকে শত্রুর ওপর আঘাত হানে।