গণ-অভ্যুত্থানে নিহত ৬৮ নেতাকর্মী
শহিদদের স্মরণে শ্রমিক দল ঢাকায় সমাবেশ করবে
জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের ৬৮ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা আরও সহস্রাধিক। অনেকেই এখনো হাসপাতালের বিছানায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। কেউ কেউ হাত, পা কিংবা চক্ষু হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। হতাহতদের স্মরণে ঢাকায় সমাবেশ করবে শ্রমিক দল। এছাড়াও সারা দেশে শহিদ শ্রমিকদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারা। এ নিয়ে আজ শ্রমিক দল ও সম্মিলিত শ্রমিক পরিষদের যৌথ সভায় কর্মসূচি চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে। কর্মসূচি নির্ধারণে এরই মধ্যে সাত সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটিও গঠন করা হয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
গণ-অভ্যুত্থানে শ্রমিক দলের নিহত ৬৮ জন নেতাকর্মীর একটি তালিকা যুগান্তরের হাতে এসেছে। নিহতদের ছবিসহ নাম ও ঠিকানা বিএনপির দপ্তরে জমা দিয়েছে সংগঠনটি। ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন তারা। এর মধ্যে ঢাকার যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, রামপুরা ও বাড্ডা এলাকায় সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি শ্রমিক মারা গেছেন ১৯ জুলাই ও ৫ আগস্ট।
জানা যায়, জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে শহিদদের স্মরণে কর্মসূচি নির্ধারণে গত সোমবার একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছে শ্রমিক দল। এতে সংগঠনের সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে আহ্বায়ক, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সহ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মফিদুল ইসলাম মোহন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শ্রমিক দলের আহ্বায়ক সুমন ভুইয়া, উত্তরের কাজী শাহ আলম রাজা, দক্ষিণে সদস্য সচিব বদরুল আলম সবুজ, উত্তরের কামরুল জামান।
শ্রমিক নেতারা জানান, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শ্রমিক দলের ভূমিকাও ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্র-জনতার পাশাপাশি শ্রমিক দলের নেতাকর্মীরাও ছিল আন্দোলনের সম্মুখ সারিতে। এতে অসংখ্য নেতাকর্মী হতাহত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত ৬৮ জন নিহতের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। আহতের সংখ্যাও কয়েক সহস্রাধিক। জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল এসব নিহতের অবদান জাতির সামনে তুলে ধরবে। এজন্য তাদের স্মরণে সমাবেশের পরিকল্পনা রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী জানুয়ারি মাসে ঢাকায় বড় সমাবেশ হবে। এর আগে ৬৮ জন শহিদের বাড়ি বাড়ি যাবেন শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। শহিদদের কবর জিয়ারতসহ তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে খোঁজখবর নেবেন। ইতোমধ্যে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও শ্রমিক দলের নেতাকর্মীরা শহিদদের তালিকা ধরে সহায়তা করে আসছেন। আগামীতেও শহিদ পরিবারের পাশে থাকবে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক সংগঠনটি।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট সামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস যুগান্তরকে বলেন, জুলাই-আগস্ট ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানে শহিদদের স্মরণে সমাবেশ করা উচিত বলে আমরা মনে করছি। পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আমরা সম্মিলিত শ্রমিক পরিষদকে নিয়ে বুধবার যৌথ সভা করব।
তিনি বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে হটাতে রেকর্ডসংখ্যক শ্রমিক জীবন দিয়েছে। তাদের রক্ত যাতে বৃথা না যায়, সে লক্ষ্যে আমরা সমাবেশ করব। শহিদরা বাংলাদেশের ভাগ্যহত মানুষের অধিকার আদায়ের মাইলফলক হিসাবে থাকবে। যৌথ সভায় কর্মসূচি চূড়ান্ত হবে। প্রথমে সারা দেশে শহিদ শ্রমিকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের কবর জিয়ারত ও পরিবারের সদস্যদের খোঁজখবর নেওয়া হবে। পরে ঢাকায় সমাবেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এদিকে বিএনপিতে জমা দেওয়া শ্রমিক দলের নিহত নেতাকর্মীরা হলেন-পাওয়ার গ্রিড করপোরেশ বাংলাদেশের সভাপতি মো. রাকিব হোসেন, কাফরুল থানা শ্রমিক দলের সদস্য মোহাম্মদ ফজলু, যাত্রাবাড়ী থানার সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত নোয়াখালীর মো. লিটন উদ্দিন, গুলশান থাকা শ্রমিক দলের নেতা মো. সোহাগ মিয়া ও ফাইজুল ইসলাম রাজন, নরসিংদীর জাহাঙ্গীর আলম ও মো কামাল, ফরিদপুরের মো. শামছু মোল্লা, মাদারীপুরের হৃদয় হাওলাদার ও মনিরুজ্জামান মোল্লা, চট্টগ্রাম উত্তরের ফারুক হোসেন ও মো. ইউসুফ, হবিগঞ্জের মো. মোস্তাক মিয়া, ফতুল্লা থানা শ্রমিক দলের সদস্য মো. শাহ আলম সৈয়াল, কুমিল্লার মো. জাহিদ হাসান, ঝালকাঠির মো. কামাল হোসেন, গাজীপুরের রুহুল আমিন, রাজবাড়ীর গণি শেখ, জাতীয়তাবাদী সড়ক পরিবহণ শ্রমিক দলের সভাপতি খন্দকার হাসান মাহমুদ, কদমতলী থারা শ্রমিক দলের নেতা মো. জাহাঙ্গীর মৃধা, বাড্ডার মো. মনির হোসেন, যাত্রাবাড়ীর মো. নাসির, শরীয়তপুরের মো. জালাল উদ্দিন, যাত্রাবাড়ীর মো. শাওন তালুকদার, নোয়াখালীর মো. মামুন হোসেন, মো. রুবেল ও মো. ইয়াসিন, মোহাম্মদপুরের শাহরিয়ার হোসেন রোকন, মো. হোসেন, মিরপুর পল্লবীর আসিফ মিয়া, ময়মনসিংহের মো. কামরুজ্জামান, উত্তরার মো. সাইফুল ইসলাম, গাজীপুরের অহিদ মিয়া, বগুড়ার মো. জিল্লুর রহমান, রনি মিয়া, মো. আবু রায়হান, ঢাকা মিরপুরের কবির, চাঁদপুরের শাহাদাত হোসেন ও মো. ইমন, রংপুরের বদিউজ্জামান, পটুয়াখালীর মো. বাচ্চু হাওলাদার, রংপুরের মো. আব্দুল লতিফ, মিরপুর ১০-এর মো. শিফাত হোসেন, ডেমরার মো. নুর বেপারী, মেরুল বাড্ডার মো. আলমগীর, রামপুরার মো. ঈসমাইল হোসেন, খিলগাঁওয়ের মো. আমির হোসেন, রায়েরবাগের রাসেল মিয়া, খুলনার শাহজাহান গাজী, ভোলার মো. নয়ন, মো. ইমন, মো. সুজন ও মো. জাকির, পাবনার খোকন সরদার, জামালপুরের মো. সুমন, দিনাজপুরের মো. আসাদুল হক বাবু, নেত্রকোনার মো. রমজান, কিশোরগঞ্জের মো. সাগর, মুঞ্জীগঞ্জের মো. বাবুল হাওলাদার, কুমিল্লার সৈকত চন্দ্র দে, খুলনার পারভেজ, কক্সবাজারের শফিউল আলম শফি, গাজীপুরে জসিম, পঞ্চগড়ের সাজু মিয়া, মাদারীপুরের রোমান বেপারী ও তাওহিদ সন্যামত এবং পাবনার মো. দুলাল হোসেন।