Logo
Logo
×

শেষ পাতা

লিটারে দাম বাড়ল ৮ টাকা

সয়াবিনের মূল্য বৃদ্ধি করে সরবরাহ বাড়ানোর চেষ্টা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সয়াবিনের মূল্য বৃদ্ধি করে সরবরাহ বাড়ানোর চেষ্টা

বোতলজাত ও খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৮ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। সোমবার ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সচিবালয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন। এদিকে বাজারে অস্থিরতার মধ্যে নতুন করে দাম বাড়িয়ে সরবরাহ স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে সরকার। এতে বাড়তি দরে তেল কিনতে বিপাকে পড়বে সাধারণ ভোক্তা। এদিন ক্রেতাসাধারণের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

বৈঠকে জানানো হয়, লিটারে ৮ টাকা বাড়ানোর ফলে নতুন দাম হিসাবে প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের খুচরা মূল্য হবে ১৭৫ টাকা। পাশাপাশি খোলা সয়াবিন বিক্রি হবে ১৫৭ টাকা। আগে বোতলজাত তেল ১৬৭ টাকা ও খোলা তেল ১৪৯ টাকা ছিল। তবে খুচরা বাজারে খোলা সয়াবিন তেল সোমবার প্রতিলিটার ১৭০-১৭৫ টাকায় বিক্রি হয়। আর বোতলজাত সংকট থাকলেও দু-একটি দোকানে বিক্রি হলেও লিটার বিক্রি হয়েছে ১৭০-১৭৫ টাকা।

এদিকে রাজধানীর নয়াবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, শেখ হাসিনার সরকার ব্যবসায়ীদের সুযোগ দিত। কথায় কথায় দাম বাড়িয়ে ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিত। কষ্টে থাকতাম আমাদের মতো ভোক্তা। তবে যে দাম নির্ধারণ করে দিত, তার চেয়েও ১০-২০ টাকা বেশি দামে পণ্য কিনতে হতো। তিনি বলেন, ওই সরকারের আমলে ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করা হলেও বাজারে আমরা সেই দামে তেল কিনতে পারিনি। এবারও নতুন সরকার দাম বাড়িয়ে তেলের দাম নির্ধারণ করেছে। দেখা যাবে এই নতুন দামেও তেল বাজার থেকে কিনতে পারব না। বিক্রি হবে সেই বাড়তি দামে। তবে মূল্য নির্ধারণ করে কী লাভ। বিক্রেতারা বাড়তি দরেই তেল বিক্রি করবে।

একই বাজারের মুদি বিক্রেতা মো. তুহিন বলেন, গত মাস থেকেই কোম্পানিগুলো মিল থেকে তেল সরবরাহ কমিয়েছে। টার্গেট ছিল সরকারের কাছে দাম বাড়িয়ে নেওয়া। তারা বরাবরই একই কাজ করে। যতবার সরবরাহ কমায় ততবার সরকারের সঙ্গে বৈঠক করে দাম বাড়িয়ে নেয়। কিন্তু যে দাম নির্ধারণ করা হয়। কোম্পানি সেই দামে তেল বিক্রি করে না। বাড়তি দামে বিক্রি করায় আমাদের মতো খুচরা বিক্রেতাদের বাড়তি দামে তেল বিক্রি করতে হয়।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন যুগান্তরকে বলেন, সংকটের কোনো কারণ নেই। আমরা বিগত দিনে দেখেছি দেশে ৫ থেকে ৬টি কোম্পানি সয়াবিনের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়ার পর সাপ্লাই বন্ধ করে দেয়। যখন সাপ্লাই বন্ধ করে দিয়ে তারা সরকারের কাছে প্রস্তাব দেয় দাম বাড়ানোর। এবারও সেটাই করা হয়েছে। রোজা ঘিরে তারা এমন কারসাজি করছে। তিনি আরও বলেন, সরকারের উচিত এখন কোম্পানিগুলোর কাছে কী পরিমাণে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত তেল মজুত আছে তার খোঁজ নেওয়া। কোনো অনিয়ম পেলে সঙ্গে সঙ্গে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।

তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে সরকারের অনেক কিছুই করণীয় আছে। আগে দুই দফায় শুল্ক-কর কমানো হয়েছে। ভোক্তার স্বার্থে এই শুল্ক-কর আরও কমানো যেতে পারত। এতে সরকার দাম না বাড়িয়ে ভোক্তাকে স্বস্তি দিতে পারত।

সোমবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সচিবালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা বশির উদ্দিন বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে বাজারে তেলের ঘাটতি রয়েছে। এ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ভোক্তারাও অস্বস্তিতে রয়েছেন। সেজন্য আমরা তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছি। নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করি বাজারে আর তেলের ঘাটতি হবে না।

তিনি আরও বলেন, গত এপ্রিলে ১৬৭ টাকা দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল। এরপর এখন পর্যন্ত বিশ্ববাজারে দাম অনেকটাই বেড়েছে। যে কারণে দেশে স্থানীয় মজুতদারি বেড়েছে। তেলের পযাপ্ত মজুত রয়েছে। অনেকে কিনে মজুত করেছে। ভোক্তা অধিদপ্তরের মাধ্যমে আমরা সেটা মনিটরিং করছি। কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কথা বলে এখন একটি যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করে দিয়েছি। আর সমস্যা হবে না।

এ সময় ভোজ্যতেল সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোর সংগঠনের সভাপতি মোস্তফা হায়দার বলেন, কয়েকদিন থেকে আমরা কীভাবে সরবরাহ নিশ্চিত করা যায় সেটা নিয়ে কাজ করেছি। বিশ্ববাজারে প্রতি টন তেলের দাম ১২০০ ডলারে উঠেছে। গত এপ্রিলে সরকার যখন তেলের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল, তখন বিশ্ববাজারে প্রতি টন তেলের দাম ছিল ১০৩৫ ডলার। এখন আমরা ১১০০ ডলার ধরে লিটারে ৮ টাকা দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এর প্রেক্ষিতে বাণিজ্য উপদেষ্টা বশির উদ্দিন বলেন, যদিও এখন আমাদের প্রতি টন তেল ১২০০ ডলারে খালাস হচ্ছে। আরও দাম বাড়তে পারে, সে উদ্বেগ এখনো রয়ে গেছে। কারণ বিশ্ববাজার এখনো স্থিতিশীল নয়। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা স্থিতিশীল হচ্ছে। তবে আলুর দামে অস্থিরতা এখনো আছে। নতুন আলু উঠলে দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে কমে আসবে বলে আশা করছি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম