নবীন আইনজীবীদের কর্মশালায় প্রধান বিচারপতি
নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ আলাদা করতে হবে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। ফাইল ছবি
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হলে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ আলাদা করতে হবে। শনিবার সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত নবীন আইনজীবীদের কর্মশালায় তিনি একথা বলেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, অঙ্গনে সাম্প্রতিক আদালত ঘটে যাওয়া ঘটনায় আইনজীবীদের আরও দায়বদ্ধ থেকে কাজ করতে হবে। সার্বিকভাবে বিচার বিভাগ বার ও বেঞ্চের সমন্বয়ে এগিয়ে যাবে।
কর্মশালায় আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, সুপ্রিমকোর্ট বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বক্তব্য রাখেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচারপতি অপসারণে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন হয়েছে, যা আগে পার্লামেন্টের কাছে ছিল। বিচার বিভাগ আলাদা করার জন্য সরকারকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। নবীন আইনজীবীদের সততার সঙ্গে কাজ করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক স্বশাসন বিচার বিভাগের স্বাধীনতার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। নবীন আইনজীবীরা বিচার বিভাগের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে সচেষ্ট হবেন। সার্বিকভাবে বিচার বিভাগ বার ও বেঞ্চের সমন্বয়ে এগিয়ে যাবে।
প্রধান বিচারপতি লিখিত বক্তব্যে বলেন, যুগান্তকারী মাসদার হোসেন মামলা, যা প্রায়শই বাংলাদেশে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণের ভিত্তিপ্রস্তর হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতার নিরলস প্রচেষ্টার প্রমাণ হিসাবে দাঁড়িয়েছে। এটি একটি গভীর ঐতিহাসিক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা-যা বিচার বিভাগের স্বায়ত্তশাসনের ভিত্তি স্থাপন করেছে। তিনি বলেন, ঐতিহাসিক এই মামলায় (বিভাগের পৃথকীকরণ) আমার পিতা ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা স্মরণ করতে পেরে আমি গভীরভাবে সম্মানিত। তিনি আইনি ভ্রাতৃত্বের এক বিশাল ব্যক্তিত্ব। আমার বাবা ন্যায়বিচারের অগ্রগতি এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি শুধু মাসদার হোসেন মামলায় বিচার বিভাগীয় পৃথকীকরণের একজন কট্টর আইনজীবী হিসাবে হাজির হননি বরং এর সফল সমাধানের জন্য বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত্তিও স্থাপন করেছিলেন।
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদের বর্ণাঢ্য কর্মজীবন ছিল। দুই দফায় সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হওয়া এবং ইতিহাসের সংকটময় মুহূর্তে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন।
বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী বলেন, আইনজীবীদের নৈতিকতা এবং আচরণবিধি মেনে চলা উচিত। কারণ তাদের মাধ্যমেই সাধারণ মানুষ সর্বোচ্চ আদালতকে দেখেন। তিনি বলেন, আপনারা রাজনীতি করেন, এটা দোষের নয়। কিন্তু রাজনীতিকে কোর্টের বাইরে রেখে আসবেন। কোর্টের মধ্যে মেহেরবানি করে রাজনীতিকে টেনে আনবেন না। বার এবং বেঞ্চের সম্পর্কে মানুষের ধারণা কিন্তু ভালো নয়।
বিচারপতি বলেন, আপনার বিপক্ষে রায় হলো, আপনি গিয়ে বলছেন আমরা সংক্ষুব্ধ, ন্যায়বিচার পাইনি। এসব বললে কোনো সাক্ষী লাগবে না, এটা সরাসরি আদালত অবমাননা। রুল ইস্যু করে শাস্তি দিতে পারবেন আদালত।
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তাদের ক্ষমতার চর্চা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। যে মামলায় দেখা যাচ্ছে মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন, সেই মামলায় আমরা আপত্তি না করলেও পারি। কর্মশালা শুরুর আগে চট্টগ্রামে আইনজীবী আলিফ হত্যার ঘটনায় ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে ৫ আগস্ট ঘিরে আন্দোলনে নিহত-আহতদের নিয়ে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।