Logo
Logo
×

শেষ পাতা

গার্মেন্ট মালিকের প্রতি শ্রমিকদের এ কেমন নিষ্ঠুরতা

Icon

গাজীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

গার্মেন্ট মালিকের প্রতি শ্রমিকদের এ কেমন নিষ্ঠুরতা

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে মাহমুদ জিন্স ও মাহমুদ ডেনিম লিমিটেড নামে একটি কারখানার মালিককে শ্রমিকরা মারধর করে আহত করেছে। বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা এলাকায় ওই কারখানার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মোহাম্মদ রাফি মাহমুদকে পিটিয়ে আহত করা হয়। তার ওপর হামলার ঘটনায় শুক্রবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।

জানা গেছে, ওইদিন সকাল ৯টার দিকে মাহমুদ জিন্স ও ডেনিম কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগদান না করে বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা চন্দ্রা ফ্লাইওভারের সংযোগ সড়কের উভয় পাশে অবরোধ করে। এতে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। 

বিকাল ৪টার দিকে মালিকপক্ষ কারখানাটির সামনে গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে বকেয়া বেতনের বিষয়ে কথা বলতে চান। এ সময় শ্রমিকরা মালিকপক্ষের লোকজন ও শিল্প পুলিশের সদস্যদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে পিছু হটে। পরে শ্রমিকরা কারখানাটির মালিকপক্ষের লোকজনকে কারখানার ভেতরে অবরুদ্ধ করে রাখে। এ অবস্থার মধ্যে ওই কারখানার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাফি শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তাকে বেধড়ক মারধর করে গুরুতর আহত করা হয়। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানা গেছে।

আহত রাফি মাহমুদ বলেন, বৃহস্পতিবার আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। আমি দুই মিনিটের জন্যও কথা বলতে পারিনি। চারদিক শ্রমিকরা আক্রমণ শুরু করে। পরে টেনে টেনে ফ্লাইওভারের নিচে ফেলে দেয়। বড় ইট, রড ও গাছের ডাল দিয়ে মারধর করে। মাথার পেছনে আঘাত করা হলে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। জ্ঞান ফিরে দেখেন তাকে হাত-পা ও ঘাড় চেপে ধরে টেনে কারখানার ভেতরে নিয়ে গেটে তালা দিয়ে রাখে। তিনি আরও বলেন, এটি সম্পূর্ণ পূর্বপরিকল্পিত ছিল এবং সৌভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান। এটি শিল্পকারখানা ও পরিবারের জন্য নিরাপত্তাহীনতা ও লজ্জাকর। তিনি বলেন, যাদের হাত দিয়ে রুটিরুজি তারাই তাদের মালিকের গায়ে হাত তুলছেন-এমন ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। 

শ্রমিকরা জানান, কারখানা কর্তৃপক্ষ, শ্রমিক, বিজিএমইএ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করে নভেম্বরের ২৮ তারিখে বেতন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও কারখানা থেকে কোনো মেসেজ না পাওয়ায় তারা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে। কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রিয়াদ মাহমুদ জানান, উত্তেজিত শ্রমিকরাই ওই কারখানার মালিক মোহাম্মদ রাফি মাহমুদকে মারধর করেছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ মামলা দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিজিএমইএর নিন্দা : হামলার ঘটনায় নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়ে বিজিএমইএ বলছে, কারখানার মালিকের ছেলে মো. রাফি মাহমুদ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় শ্রমিক নামধারী কিছু উসকানিদাতা, দুষ্কৃতকারী হঠাৎ করে তার ওপর আক্রমণ করেন এবং আহত করে কারখানায় নিয়ে আটকে রাখেন। আলোচনার মধ্যে এ রকম হামলা অনভিপ্রেত।

বিজিএমইএর মহাসচিব মো. ফয়জুর রহমান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিজিএমইএ মনে করে, এ ধরনের ঔদ্ধত্য সব শিল্পের ওপর আঘাত। যে শিল্প দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি, যে শিল্প প্রত্যক্ষভাবে ৪০ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে, যে শিল্প পরোক্ষভাবে দেশের পাঁচ কোটি মানুষের জীবন-জীবিকার সুরাহা করেছে, তার ওপর এ আঘাত মোটেও কাম্য নয়। এ ঘটনা বহির্বিশ্বে এ দেশের শিল্প সম্পর্কে ভুল বার্তা দেবে। যারা উসকানি দিয়ে শিল্পকে অস্থিতিশীল করার অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে, শিল্প ও অর্থনীতিকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে, তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে বিজিএমইএ।

মাহমদু জিনস লিমিটেড কারখানার বিষয়ে বিজিএমইএর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নানা কারণে নানা পরিস্থিতেতে একটি ভালো মানের কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে বাধ্য হয়। গত ৯ অক্টোবর শ্রম ভবনে অনুষ্ঠিত কলকারখানা অধিদপ্তরের নেতৃত্বে ত্রিপক্ষীয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২৩ অক্টোবর কারখানার শ্রমিকদের সেপ্টেম্বর মাসের মজুরি বাবদ তিন কোটি ১৫ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। ১৬ নভেম্বর স্টাফদের বকেয়া মজুরি থেকে দুই কোটি টাকাও পরিশোধ করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী শ্রমিক ও স্টাফদের চূড়ান্ত পাওনা, সার্ভিস বেনিফিট, ছুটির টাকা বাবদ প্রায় ২০ কোটি টাকা ২৮ নভেম্বর পরিশোধ করার কথা ছিল। এই টাকা পরিশোধ করার জন্য কারখানার মালিক তার গুলশানের বাড়িটি বিক্রির প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করলেও পেমেন্ট না পাওয়ার কারণে ২৮ নভেম্বরে শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন।


Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম