দুই মামলায় তারেক রহমানকে অব্যাহতি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
তারেক রহমান
চাঁদাবাজির এক মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আটজনকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। ২০০৭ সালের ৯ এপ্রিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম লিমিটেড থেকে ১০ কোটি ৩১ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগে শাহবাগ থানায় মামলাটি করা হয়েছিল।
অব্যাহতি পাওয়া অন্যরা হলেন তারেক রহমানের বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ওবায়দুল্লা খন্দকার, কামরুজ্জামান, ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুল আলম, ইঞ্জিনিয়ার একেএম শোয়েব বাশুরী ওরফে হাবলু, আজিজুল করিম তারেক ও মনিজুর রহমান ওরফে মানিক। বুধবার পুলিশের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে ঢাকার অভিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম ছানাউল্ল্যাহ এ আদেশ দেন।
৫ নভেম্বর তারেক রহমানসহ আটজনকে অব্যাহতির আবেদন করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ঢাকা কোতোয়ালি জোনাল টিমের পরিদর্শক মো. সাজ্জাদ হোসেন। পরে আদালত প্রতিবেদনের ওপর শুনানির জন্য ২৭ নভেম্বর দিন নির্ধারণ করেন।
পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাদী ২০০৭ সালের ৩০ জুন দরখাস্ত মারফত মামলার এজাহারে বর্ণিত চাঁদার টাকার পরিমাণ ভুল উল্লেখ করে তা সংশোধনের জন্য আবেদন করেন। সর্বশেষ ২০০৯ সালের ৭ মে বাদী নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য একটি হলফনামা সম্পাদন করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, তিনি বিশেষ মহলের চাপে বাধ্য হয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে মামলাটি করেন। এজাহারভুক্তদের বিরুদ্ধে তার কোনো অভিযোগ নেই এবং তিনি মামলা পরিচালনা করতে ইচ্ছুক নন।
এছাড়াও তদন্তকালে তদন্ত কর্মকর্তা বাদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বাদী তার হলফনামায় বর্ণিত ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তখনকার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপে পড়ে তিনি ওই মামলা করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে গিয়াস উদ্দিন আল মামুন এবং এজাহারনামীয় অপর আসামিদের তিনি চিনতেন না। এজাহারে বর্ণিত চাঁদাবাজির কোনো ঘটনা ঘটেনি।
পুলিশের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মামলার এজাহারনামীয় অন্য আসামিরা সবাই নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। তখন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে তারেক রহমানের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে বাদী খায়রুল বাশারকে চাপ দিয়ে এ মামলা করতে বাধ্য করা হয়। তদন্তে এবং সাক্ষ্যপ্রমাণে মামলার ঘটনাটি তথ্যগত ভুল প্রমাণিত হয়। সব আসামিকে এ মামলার দায় থেকে অব্যাহতির জন্য প্রার্থনা করা হলো।
চাঁদাবাজির অভিযোগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোম্পানি আব্দুল মোনেম লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক খায়রুল বাশার ২০০৭ সালের ৯ এপ্রিল বাদী হয়ে রাজধানীর শাহবাগ থানায় এ মামলা করেন। মামলায় তারেক রহমানসহ আটজনকে আসামি করা হয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ১৯৯৭ সালে মামলার বাদীর কোম্পানি আব্দুল মোনেম লিমিটেড যমুনা সেতু সংযোগ সড়ক প্রকল্পের আওতায় ২৬৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকার কাজ পায়। কাজটি দুই ভাগে সম্পন্ন করা হয়। ২০০১ সালে ওই কাজের কার্যাদেশ পাওয়ার জন্য চেষ্টাকালে তারেক রহমানের বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুনসহ অন্যরা তাদের পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। অন্যথায় কার্যাদেশ পাওয়া যাবে না এবং বাদীর কোম্পানিকে বাংলাদেশের কোথাও কোনো কাজ করতে দেবে না বলে হত্যার হুমকি দেয়। পরে বাদী জীবন রক্ষার্থে চাঁদার টাকা কয়েক কিস্তিতে পরিশোধ করতে রাজি হন। ওই বছরের ৩০ অক্টোবর থেকে ২০০২ সালের ১৫ জুন পর্যন্ত কয়েক দফায় পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা বাবদ গিয়াস উদ্দিন আল মামুন বাদীর কোম্পানির প্রধান কার্যালয় থেকে নিয়ে যান। সেতুর দ্বিতীয় দফার কাজের সময় ফের কয়েক দফায় তিন কোটি ৩১ লাখ টাকা আসামি গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ও তার সঙ্গীরা জোর করে আদায় করেন।
পরে বাদীর কোম্পানি মৌলভীবাজার জেলায় ফেঞ্চুগঞ্জে সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পের কাজ পায়। ওই কাজের কার্যাদেশ পাওয়ার পর ২০০৪ সালের ৫ নভেম্বর আসামি গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ও তার সহযোগীরা কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে আসেন এবং ভয় দেখিয়ে কোম্পানির এমডির কাছ থেকে কয়েক দফায় দুই কোটি টাকা নিয়া যান। সবমিলিয়ে গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ও তার সহযোগীরা নগদ টাকা ও ক্যাশ চেকের মাধ্যমে ১০ কোটি ৩১ লাখ টাকা আব্দুল মোনেম লিমিটেডের প্রধান কার্যালয় থেকে আদায় করেছেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
আরেক মামলায় তারেক রহমানকে অব্যাহতি : সম্পদের তথ্য প্রদর্শন না করার অভিযোগে করা আরেক মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। এদিন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০-এর বিচারক রেজাউল করিম এ অব্যাহতি দেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, মামলাটি অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য ধার্য ছিল। তবে মামলার বাদীর আনা অভিযোগ কাল্পনিক ও সৃজনকৃত উল্লেখ করেন বিচারক। পরে এ মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
মামলার সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালের ২৮ জুলাই উপকর কমিশনার সামিয়া আক্তার বাদী হয়ে মামলা করেন। এতে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২০০২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন খাত থেকে ১ কোটি ৭ লাখ ৪৭ হাজার টাকা আয় করেন। তবে তিনি আয় বাবদ ২৬ লাখ ৮৬ হাজার টাকা কর ফাঁকি দিয়েছেন বলে মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।