Logo
Logo
×

শেষ পাতা

শতাধিক বাস ভরে হঠাৎ রাজধানীতে মানুষ

লাখ টাকা ঋণের প্রলোভনে শাহবাগে জড়ো করার চেষ্টা

‘অহিংস গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশ’-এর প্রধান মোস্তফা আমীনসহ ঢাকায় আটক ১০

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

লাখ টাকা ঋণের প্রলোভনে শাহবাগে জড়ো করার চেষ্টা

বিনা সুদে, বিনা জামানতে এক লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সোমবার রাজধানীর শাহবাগে জনসমাগমের চেষ্টা করেছে একটি সংগঠন। ‘অহিংস গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামের সংগঠনটি শাহবাগে সমাবেশের উদ্দেশে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাসে ও মাইক্রোবাসে লোক জড়ো করার চেষ্টা করে। রোববার গভীর রাত থেকে শতাধিক বাস ভরে হঠাৎ রাজধানীতে আসা এসব লোকের মধ্যে অন্তত ১০ জনকে আটক করেছে শাহবাগ থানা পুলিশ। তাদের মধ্যে আছেন ‘অহিংস গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ সংগঠনের আহ্বায়ক আ. ব. ম. মোস্তফা আমীন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকায় আসার পথে জেলাশহরগুলোতে আটক হয়েছেন অনেকে। এ ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশের শাহবাগ থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঢাকায় আসা লোকদের অনেকে বিনাসুদে লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হবে বলে তাদের কাছ থেকে এক হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে বলেও জানান।

সোমবার দুপুরে শাহবাগে সরেজমিন দেখা গেছে, ঢাকার বাইরে থেকে একে একে বাস ভর্তি লোক এসে থামছে শাহবাগে। ঢাকা-ফুলবাড়ীয়া-ময়মনসিংহ রুটে চলা আলম এশিয়া নামের একটি বাস (ময়মনসিংহ-ব ১১-০০৬৭) ভর্তি লোক শাহবাগে থামার পর তাদের দ্রুত সরিয়ে দেয় ছাত্র-জনতা। বাসটির চালক যুগান্তরকে বলেন, একটি সম্মেলনের কথা বলে ১৩ হাজার টাকায় বাস ভাড়া করা হয়েছে। সোমবার সকাল ৮টার দিকে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া থেকে তিনি যাত্রী নিয়ে রওয়ানা হন। এক মহিলা গাড়িটি ভাড়া করেছে বলেও তিনি জানান।

ওই বাসের এক নারী যাত্রী বলেন, গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশের ধানমন্ডির অফিস থেকে ফোন দিয়ে তাকে বলেছে শাহবাগ এলে ঋণ দেবে। যারা যারা সমাবেশে আসবে তাদের লিস্ট ধরে যে যেমন কর্ম করে তার ওপর ভিত্তি করে ঋণ দেবে। এজন্য আমরা আসছি।

নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা অপর এক বাসের নারী যাত্রী বলেন, তাকে বলা হয় শাহবাগ গেলে এক লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হবে। মাসে ৩-৪ হাজার টাকা করে শোধ করতে হবে। এজন্যই তিনি এসেছেন। এর চেয়ে বেশি কিছুই তিনি জানেন না।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, রোববার গভীর রাত থেকেই বাসে ও মাইক্রোবাসে রাজধানীর শাহবাগে লোক আসা শুরু করে। পুলিশ ও ছাত্র-জনতা তাদের শাহবাগ থেকে সরিয়ে দিয়েছে। ২৫ নভেম্বর ‘রাজধানীর শাহবাগে মহাসমাবেশ’ লেখা ব্যানারও দেখা গেছে কয়েকটি গাড়িতে। এ সময় বাসে থাকা মানুষের কাছ থেকে একটি লিফলেট উদ্ধার করা হয়। সেখানে লেখা আছে-কৃষক, শ্রমিক, হকার, বেকার তথা সব জনগণ থেকে ভ্যাট, ট্যাক্স হিসাবে আদায় করা লক্ষ-কোটি টাকা ক্ষমতাশ্রিত একটি হায়েনার দল স্বাধীনতার পর থেকেই লুটপাট করছে। লুণ্ঠিত অর্থ উদ্ধার করব, বিনা সুদে পুঁজি নেব। ‘অবৈধ অর্থ উদ্ধার ও গণমুখী বিনিয়োগ জাতীয় সংস্থা’ শিরোনামে দুর্নীতিবিরোধী বিশেষ আইন প্রণয়নের দাবিতে ২৫ নভেম্বর ২০২৪ সোমবার সকাল ১০টায় ঢাকার শাহবাগ মোড়ে ‘অবস্থান কর্মসূচি’ পালন করা হবে।

লিফলেটে আরও লেখা রয়েছে, বিনা সুদে, বিনা জামানতে এক লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত পুঁজি পেয়ে দারিদ্র্য মুক্তিতে আগ্রহী সর্বস্তরের জনগণকে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি। কার্যালয়ে পুঁজির আবেদনের ‘ছক’ পাওয়া যায়। নির্ধারিত ছকে পুঁজির আবেদন করুন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. জুয়েল রানা যুগান্তরকে বলেন, আমরা বেশ কয়েকজনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও অনেককে আমাদের কাছে সোপর্দ করছে। এদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তারা জানিয়েছে যার যার নিজের টাকায় ঢাকা আসছেন। মামলাও প্রক্রিয়াধীন আছে। যাচাই-বাছাই শেষে তাদের নাম মামলায় অন্তর্ভুক্ত হবে।

তিনি বলেন, রোববার রাত থেকেই আমরা অভিযানে নামি। এ সংগঠনের যিনি প্রধান (মোস্তফা আমীন) তিনি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। রোববার রাতে তাকে ধরে আনার পর অসুস্থতা বোধ করলে আমরা কোনো ঝুঁকি নিতে চাইনি। এ জন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মোস্তফা আমীন ২০২২ সাল থেকে সংগঠনটি করেছেন। হঠাৎ করেই আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। তাদের কোনো অশুভ উদ্দেশ্য আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান জুয়েল রানা।

পুলিশ ও শাহবাগে আসা লোকজন বলছেন, এমন প্রলোভনে পড়ে রোববার রাত ১টার পর সারা দেশ থেকে বাস, পিকআপ ও মাইক্রোবাসে সাধারণ মানুষ ঢাকায় আসতে শুরু করেন। পরে পুলিশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আসা লোকজনকে বুঝিয়ে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করেন। সোমবার সকাল ৭টার দিকে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রচণ্ড যানজট দেখা যায়। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও পুলিশ ঢাকায় আসা লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের বুঝিয়ে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করেন। পরে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ খালিদ মুনসুর যুগান্তরকে বলেন, ‘অহিংস গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠন গ্রামের লোকজনকে প্রলোভন দেয়, যারা এই সমাবেশে আসবেন, তাদের এক লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হবে। তাদের কাউকেই জড়ো হতে দেইনি। কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে।

ঢাকায় আসার পথে টাঙ্গাইলে আটক ১৩ : টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে ঋণ দেওয়ার কথা বলে ঢাকায় সমাবেশে নিয়ে যাওয়ার সময় ১৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। সোমবার সকালে ভূঞাপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে তাদের আটক করা হয়।

ভূঞাপুর থানার ওসি একেএম রেজাউল করিম জানান, তারা অহিংস গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশ নামের একটা সংগঠনের সদস্য। তারা সহজ-সরল মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আইডি কার্ড ও টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তারা সুদ ছাড়া ঋণ দেওয়া হবে মর্মে প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এছাড়া সোমবার বিকালে জেলার মধুপুরে একটি বাস থেকে নারী ও পুরুষসহ ৪০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয়েছে। তারা ভোরে জামালপুর থেকে ওই বাসে ঢাকায় সমাবেশে যোগদান করার জন্য গিয়েছিল।

মধুপুর থানার ওসি এমরানুল কবির জানান, যে ব্যক্তির মাধ্যমে ঢাকায় যাচ্ছিল সাভারের নবীনগরে যাওয়ার পর ওই ব্যক্তির নম্বর বন্ধ থাকায় তারা আর ঢাকায় যায়নি। পরে তারা নবীনগরে স্মৃতিসৌধে ঘুরে জামালপুরে ফেরার পথে মধুপুরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে।

লক্ষ্মীপুরে আটক ১১ : রোববার রাতে সমাবেশে নেওয়ার জন্য কমলনগর উপজেলার ৩ শতাধিক নারী-পুরুষ-কিশোর-কিশোরীকে একত্রিত করা হয়। জেলার কমলনগর উপজেলার করইতলা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। রাতেই স্থানীয়রা তাদেরকে ঘেরাও করে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে খবর দেয়। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থল পৌঁছে ৩টি চেয়ারকোচ বাস ও ৪টি মাইক্রোবাস জব্দ করে। এ সময় ১১ জনকে আটক করা হয়। তবে তাদের নাম-পরিচয় জানায়নি পুলিশ। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কমলনগর থানার ওসি তহিদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

রামগতি-কমলনগরে ১২টি বাস আটকে দেয় স্থানীয়রা : লক্ষ্মীপুরের কমলনগর ও রামগতি উপজেলার কয়েকশ নারী-পুরুষকে রোববার রাতে ১২টি যাত্রীবাহী বাস ও ১৫টি মাইক্রোবাসে করে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পথে তাদের আটকে দেন স্থানীয় লোকজন। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ সময় তিনটি বাসসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে নারীসহ ১১ জনকে আটক করে পুলিশ। কমলনগর থানার ওসি তহিদুল ইসলাম ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে রাতেই ১১ জনকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া দিনাজপুরের বিরলে বিনাসুদে ঋণ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঢাকায় সমাবেশের নামে বিপুলসংখ্যক লোকজন নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার সময় আটকে দিয়েছে পুলিশ। একজনকে আটকও করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের বন্দরে অহিংস গণ-অভ্যুত্থান কর্মসূচিতে যাওয়ার পথে ১৫-১৬টি বাস আটক করেছে পুলিশ। সোমবার সকালে বন্দরের দড়ি সোনাকান্দা, ফরাজিকান্দা, মদনগঞ্জ, ইস্পাহানি ও কুড়িপাড়া এলাকা থেকে বাসগুলো আটক করা হয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম