অপমান করে পদত্যাগে বাধ্য
মারাই গেলেন হাজেরা-তজুর সেই উপাধ্যক্ষ
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দুই মাস আগে চট্টগ্রামের হাজেরা-তজু ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ পদ থেকে অপমান-অপদস্থ করে সরিয়ে দেওয়া এসএম আইয়ুব শেষ পর্যন্ত মারাই গেলেন। প্রায় ৩৪ বছর শিক্ষকতা করেছেন তিনি। কেমিস্ট্রি বিষয়ে পড়াতেন এই শিক্ষক। নিজের ছাত্রদের মধ্যে অনেকেই জায়গা করে নিয়েছেন প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরের শীর্ষ পদে।
৫ আগস্টের পর সেই ‘ছাত্রদের’ হাতেই চরমভাবে লাঞ্ছিত হয়ে স্ট্রোক করেছিলেন প্রিয় কলেজের নিজ অফিস কক্ষে। মৃত্যু শঙ্কায় উপাধ্যক্ষ পদ থেকে সরে এলেও ছাড়েননি শিক্ষকতা। তবে শিক্ষার্থীদের সেই অপমান ভুলতে পারেননি। অসুস্থ হওয়ার পর শারীরিক অবস্থা যে অবনতি হতে শুরু করে তার আর উন্নতি হয়নি।
শনিবার সকালে আবারও স্ট্রোক করলে তাকে নগরীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। এক পর্যায়ে লাইফ সাপোর্টে চলে যান। বেলা ১২টার দিকে চিকিৎসক এই শিক্ষককে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে উপাধ্যক্ষ এসএম আইয়ুবের মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউ। তার পরিবারের সদস্যরাও বলছেন, এটা এক ধরনের ‘হত্যাকাণ্ড’। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এই মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। বলা হচ্ছে, শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
শিক্ষকরা জানিয়েছেন, ২৪ সেপ্টেম্বর কলেজে ন্যক্করজনক ওই ঘটনা ঘটেছিল। সেদিন ছাত্র নামধারী বহিরাগতরা চান্দগাঁও থানা এলাকায় অবস্থিত এই কলেজের উপাধ্যক্ষ আইয়ুবকে বলপ্রয়োগ করে পদত্যাগ করান। একইভাবে অধ্যক্ষ চয়ন দাশকে মারধর করে কলেজের আরও তিন শিক্ষককে বরখাস্ত করতে বাধ্য করা হয়।
সূত্র জানান, মাহিন চৌধুরী নামে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের এক কর কর্মকর্তার ছেলে এবং কলেজের সদ্য সাবেক এক শিক্ষার্থীর নেতৃত্বে সেদিন শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলেছিল বহিরাগতরা। এমনকি হামলাকারীদের একজনের হাতে ছিল ছোরা। তাদের হত্যার হুমকিতে এক পর্যায়ে কলেজের উপাধ্যক্ষ আইয়ুব অসুস্থ হয়ে মাটিতে পড়ে যান। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান সহকর্মীরা।
শহীদুল্লাহ নামে এক শিক্ষক তার ফেসবুক ওয়ালে লেখেন, আমি শোকাহত, আমি লজ্জিত! ক্ষমা করবেন আইয়ুব স্যার। এই পোস্টের সঙ্গে তিনি কফিনে মোড়া উপাধ্যক্ষ আইয়ুবের একটি ছবিও শেয়ার করেন।
হাজেরা-তজু ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ চয়ন দাশ বলেন, এসএম আইয়ুবসহ চার শিক্ষকের সঙ্গে খারাপ আচরণ করায় আইয়ুব অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন। পরে তারা আইয়ুবের আঙুলের ছাপ নিয়েছিল। এ বিষয়টি তিনি কখনোই মেনে নিতে পারেননি। দুদিন আগেও আমাকে দেখতে এসে এসব কথা বলে দুঃখ প্রকাশ করছিলেন।
এসএম আইয়ুবের ছেলে প্রান্ত বলেন, জোরপূর্বক উপাধ্যক্ষ পদ থেকে পদত্যাগ করানো এবং অপমান-অপদস্থ করার পর থেকে আমার বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। সেই যে স্ট্রোক করেছিলেন তিনি এরপর হাসপাতাল আর বাসার বিছানা থেকে উঠতে পারেননি।
বাংলাদেশ রসায়ন সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য অধ্যাপক ইদ্রিস আলী যুগান্তরকে বলেন, তাকে অপমান-অপদস্থ করে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে বলে আমরা শুনেছি। এ ঘটনা যদি সত্য হয়ে থাকে তবে তা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ও গর্হিত কাজ। এখন যে নতুন ভবিষ্যৎ নির্মাণের কথা বলা হচ্ছে এ ধরনের কর্মকাণ্ড দিয়ে তা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।