আগামী শিক্ষাবর্ষের নতুন পাঠ্যবইয়ে স্থান পেয়েছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত আবু সাঈদ ও মীর মুগ্ধের আত্মত্যাগের গল্প। এছাড়াও ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেওয়ালজুড়ে আঁকা গ্রাফিতির পাশাপাশি তুলে ধরা হচ্ছে দেশের ইতিহাসের নায়কদের বীরত্বগাথা অবদানের কথা। একই সঙ্গে পাঠ্যবই থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ও উদ্ধৃতি। শুক্রবার জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান এ কে এম রিয়াজুল হাসান এই তথ্য জানিয়েছেন।

জানা যায়, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবর্তিত হচ্ছে নতুন বছরের পাঠ্যক্রমও। নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকেই দেওয়া হবে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির বই। তবে কিছুটা পরিমার্জন হয়ে বদল হচ্ছে চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণির পাঠ্যবই। নতুন শিক্ষাক্রমের পরিবর্তে মোটা দাগে বেছে নেওয়া হচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাতিল করা ২০১২ সালের পাঠ্যক্রম।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড বা এনসিটিবির চেয়ারম্যান এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে ’৬৯ ও ’৯০ সালে। এবার আমাদের গণ-অভ্যুত্থান হলো ’২৪ সালে। এই তিন সময়ে অনেক ঘটনা গভীরভাবে বিশ্লেষণ করতে পারবে শিক্ষার্থীরা।

একইসঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে প্রাধান্য পাচ্ছে দেশের সঠিক ইতিহাস। বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কৃতিত্ব, ৭ মার্চের ভাষণ, শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা, মওলানা ভাসানীর সংগ্রামী জীবনের পাশাপাশি থাকছে জাতীয় চার নেতার ভূমিকা।

এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান বলেন, সেই সময় তো জিয়াউর রহমান কোনো রাজনৈতিক দল করেননি। তিনি দেশপ্রেমিক সৈনিক হিসাবে সেই সময়ের মধ্যে তার দায়িত্বটুকু পালন করেছেন। সব মিলিয়ে তার যে ভূমিকা সেটা তো মুছে ফেলার সুযোগ নেই। চার নেতা মারা গেছেন ৩ নভেম্বর। জেলখানায় তাদেরও ভূমিকা রয়েছে। অন্যদিকে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তার নামও সংযুক্ত করা হবে।

গত ১৭ বছর পাঠ্যবইয়ে ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন ছবি এবং বক্তব্যের উদ্ধৃতি। দৃষ্টিকটু এসব লেখা-ছবি বাদ দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বইয়ের মূল পৃষ্ঠার পরের ও পেছনের পৃষ্ঠায় এই দলীয় প্রচার প্রোপাগান্ডার ছবি এবং তার বর্ণনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা তো ওই বইটা একটা বিষয়ের বই হিসাবে দেখতে চায়। তাদের স্বপ্নের কথা শুনতে চায়। কোনো দলের কথা তো শুনতে চায় না, এটা তো চাওয়ার কথা না। পাঠ্যপুস্তক তো কোনো দলীয় বিষয়ের বই হতে পারে না।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় দেশজুড়ে আঁকা হয় অসংখ্য গ্রাফিতি। সেগুলোর মধ্য থেকে ব্যাপক সাড়া জাগানো গ্রাফিতিগুলোও থাকছে নতুন বইয়ে। জানুয়ারিতে যারা দশম শ্রেণিতে পড়বে, তাদের পাঠ্যবই হবে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের আলোকে।