Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ডেঙ্গুতে ৯ জনের মৃত্যু হাসপাতালে ১২১৪

প্রতিদিন গড়ে মৃত্যু ৬ জন: এডিস মশা নির্মূলে হলিস্টিক অ্যাপ্রোচ দরকার-অধ্যাপক গোলাম ছারোয়ার

Icon

জাহিদ হাসান

প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ডেঙ্গুতে ৯ জনের মৃত্যু হাসপাতালে ১২১৪

এডিস মশাবাহী ডেঙ্গু রোগে প্রতিদিন মৃত্যুর পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। হাসপাতালগুলোয় বাড়ছে রোগীর চাপ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুজ্বরে আরও ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মারা গেলেন ৪৩৬ জন। আর চলতি নভেম্বরের প্রথম ২০ দিনে ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে বিভিন্ন হাসপতালে ভর্তি হন ২২ হাজার ৫৫১ জন। এ হিসাবে দৈনিক ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১১২৭ জন। আর এ সময় মারা গেছেন ১২১ জন। অর্থাৎ গড়ে দৈনিক ৬ জন করে মৃত্যু হয়েছে। এর আগে অক্টোবরে মারা গেছেন ১৩৫ জন।

বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে সারা দেশের হাসপাতালে ১ হাজার ২১৪ জন ভর্তি হয়েছেন। অক্টোবরে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩০ হাজার ৮৭৯ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত একদিনে হাসপাতালে নতুন ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ৮২, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৪, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৩০, ঢাকা উত্তর সিটিতে ১৯৫, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১৪১ এবং খুলনা বিভাগে ১১৭ জন রয়েছেন। এছাড়া রাজশাহী বিভাগে ৯১, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৯, রংপুর বিভাগে ১৪ এবং সিলেট বিভাগে ১১ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৪ হাজার ৩৬৮ জন। যাদের মধ্যে ৬২ দশমিক ৯০ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৭ দশমিক ১০ শতাংশ নারী রয়েছেন। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪৩৬ জনের। এর মধ্যে নারী ৫০ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং পুরুষ ৪৯ দশমিক ৩০ শতাংশ।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, সাধারণত প্রতিবছর বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালে ডেঙ্গু রোগের মৌসুম হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বর্তমানে সারা বছরই এ জ্বরের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। অতীতের বছরগুলোয় শহরের বাসাবাড়িতে আবাসিক ধরনের মশা (এডিস ইজিপ্টি) ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঘটালেও বর্তমানে গ্রামাঞ্চলের বুনো মশাও (এডিস এলবোপিকটাস) এ রোগের বাহক হিসাবে কাজ করছে। কয়েক বছর ধরে অব্যাহতভাবে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঘটলেও যথাযথ উদ্যোগ না নেওয়ায় এটি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ সালে দেশে সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন এবং ৯৩ জনের মৃত্যু হয়। ২০০১ সালে আড়াই হাজার আক্রান্ত হন এবং ৪৪ জনের মৃত্যু হয়। ২০০২ সালে ছয় হাজার ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ৫৮ জন মারা যান। ২০০৩ সালে ৪৮৬ জনের মধ্যে ১০ জন, ২০০৪ সালে চার হাজারের মধ্যে ১৩ জন, ২০০৫ সালে এক হাজারের মধ্যে চারজন, ২০০৬ সালে দুই হাজারের মধ্যে মৃত্যু হয় ১১ জনের। ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত আড়াই হাজার ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলেও কারও মৃত্যু হয়নি।

২০১১ সালে দেড় হাজারের ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ছয়জনের মৃত্যু হয়। ২০১২ সালে ৬৭১ জনের মধ্যে একজন, ২০১৩ সালে প্রায় দুই হাজারের মধ্যে দুজন ডেঙ্গুরোগী মারা যান। ২০১৪ সালে ৩৭৫ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে কেউ মারা যাননি। ২০১৫ সালে তিন হাজারের মধ্যে ছয়জন, ২০১৬ সালে ছয় হাজারের মধ্যে ১৪ জন, ২০১৭ সালে তিন হাজারের মধ্যে আটজন, ২০১৮ সালে ১০ হাজার ১৪৮ জনের মধ্যে ২৬ জন, ২০১৯ সালে এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জনের মধ্যে ১৭৯ জন মারা যান।

জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের কীটতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. গোলাম ছারোয়ার যুগান্তরকে বলেন, ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশা নির্মূলে হলিস্টিক অ্যাপ্রোচ দরকার। কিন্তু ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর যথেষ্ট কার্যক্রমে বড় ধরনের ঘাটতি আছে। এর ফলে ডেঙ্গু আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা উদ্বেগজনক গতিতে বাড়ছে। পাশাপাশি ব্যক্তিপর্যায়ে অসচেতনতাও ডেঙ্গুতে মৃত্যুর আরেকটি কারণ।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধের প্রথম ধাপ এডিস মশা নির্মূল বা নিয়ন্ত্রণ। কিন্তু দেশব্যাপী এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত কোনো কার্যক্রম বা পরিকল্পনা শুরু থেকে এখন পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়নি। কিছু জায়গাভিত্তিক মশা মারার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম