বিএনএমে যোগ দিয়ে হারান সব কূল
ফরিদপুরে অবাঞ্ছিত আবু জাফর
জাহিদ রিপন, ফরিদপুর
প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফরিদপুর-১ (বোয়ালমারী, মধুখালী, আলফাডাঙ্গা) আসনের চারবারের সাবেক সংসদ-সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর। তিনি বিএনপি থেকে একবার, জাতীয় পার্টি থেকে একবার এবং আওয়ামী লীগ থেকে দুবার সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এই আসনে প্রভাবশালী নেতাদের অন্যতম ছিলেন তিনি। কিন্তু সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টোপ গিলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মুখে পড়েন। ওই নির্বাচনে নতুন দল বিএনএম থেকে প্রার্থী হয়ে জামানত হারান তিনি। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর থেকে তাকে জনসম্মুখে আর দেখা যায়নি। সম্প্রতি তাকে ফরিদপুরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে বিএনপি। তবে আবু জাফর মনে করছেন, আগামীতে নির্বাচনি পরিবেশ তৈরি হলে নতুন দল বিএনএম ১০ থেকে ২০টি সিট পাবে।
স্থানীয়রা জানান, ফরিদপুর-১ আসনে অনেক উন্নয়ন করেছেন আবু জাফর। জাতীয় পার্টির আমলে তাই জনপ্রিয়তাও ছিল তার। কিন্তু শেষে নামসর্বস্ব একটি দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে (বিএনএম) যোগ দিয়ে সব কূল হারিয়েছেন এই রাজনীতিক।
জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি ছেড়ে বিএনএমে যোগ দেন আবু জাফর। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। বিএনএম এ যোগ দেওয়ার পর তাকে বহিষ্কার করে বিএনপি। বিএনএম তাকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়। দলটিতে যোগ দিয়েই আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে এলাকায় সভা-সমাবেশ করেন তিনি। তখন কাছের মানুষদের তিনি জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তাকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফরিদপুর-১ আসনের এমপি নির্বাচিত করবেন। এজন্য তিনি নতুন দলে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু নির্বাচনের আগ মুহূর্তে আওয়ামী লীগ ওই আসনে দলীয় প্রার্থী দিলে জামানত হারান শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর। তিনি মাত্র ২২ হাজার ৪৬৫ ভোট পান। এ ঘটনায় মনোকষ্টে এলাকায় আসা বন্ধ করে দেন। এছাড়া এলাকায় আওয়ামী লীগের সাপোর্ট নেওয়ায় বিএনপির নেতাকর্মীরাও তাকে বয়কট করেন। ৫ আগস্টের পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান।
৩০ অক্টোবর বোয়ালমারী উপজেলার চৌরাস্তাসংলগ্ন পুরোনো বাসস্ট্যান্ডে শেখ হাসিনার ফাঁসি ও তার দোসরদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সমাবেশ করে বোয়ালমারী উপজেলা কৃষক দল। ওই সমাবেশ থেকে আবু জাফরকে হাসিনার দোসর আখ্যা দিয়ে ফরিদপুরে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুক। তিনি বলেন, আমাদের দলে একজন বেইমান ছিলেন। তার নাম শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর। এই লোভী উচ্ছিষ্টভোগী নেতা বিএনপির সঙ্গে বেইমানি করে রাতের আঁধারে কিংস পার্টি খুলে হাসিনার সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। তাই তাকে এলাকায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।
এদিকে ৫ নভেম্বর রাতে একদল দুর্বৃত্ত পৌর সদর থানার সামনে উপজেলা প্রশাসন মার্কেটে অবস্থিত বিএনএমের অফিস উদ্বোধনের একদিন পর তালা ভেঙে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। হামলাকারীরা অফিসের আসবাবপত্র ও জাফরের ছবি ভাঙচুর করে। এ সময় হামলাকারীরা স্লোগান দেন, ‘খুনি হাসিনার দোসর শাহ জাফর নিপাত যাক।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর যুগান্তরকে বলেন, বিএনএম নিবন্ধিত একটি রাজনৈতিক দল। এ দেশে গণতন্ত্রকে সুগম করতে প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই সমান সুযোগ থাকা উচিত। আমার বিএনএম অফিস ভাঙচুরের তীব্র নিন্দা জানাই। যারা এটা করেছে, তারা ঠিক করেনি। বিগত আওয়ামী লীগ একই স্টাইলে প্রভাব বিস্তার করে চাঁদাবাজি, দখলবাজি করেছে। বর্তমানে যারা একই কাজ করছে তাদের বলব এ ঘৃণ্য কাজ থেকে বিরত থাকাই ভালো, সেই আহবানই জানাই। জনগণের মাঝে ভীতির সঞ্চার করে এবং আমাকে ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই। এছাড়া আমাকে এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা হাস্যকর ছাড়া আর কিছুই নয়। আগামীতে যদি ভোটের পরিবেশ তৈরি হয় তাহলে বিএনএম নির্বাচনে যাবে এবং আশা করি ১০ থেকে ২০টি সিট আমরা পাব।