Logo
Logo
×

শেষ পাতা

অর্থ বিভাগের নির্দেশনা জারি

কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দিতে হবে

মিজান চৌধুরী

মিজান চৌধুরী

প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দিতে হবে

কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দেওয়ার পাশাপাশি নতুন কোনো বরাদ্দ চাওয়া যাবে না, মন্ত্রণালয়গুলোকে এমন নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ বিভাগ। তবে রিজার্ভের চাপ কমাতে নিশ্চিত বৈদেশিক মুদ্রা মিলবে-এমন প্রকল্প বাস্তবায়নে অধিক গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। আর এসব পদক্ষেপ সামনে রেখে প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে কাটছাঁট করে সংশোধনী বাজেট প্রস্তাব পাঠাতে পরিপত্র জারি করেছে অর্থ বিভাগ।

সংশ্লিষ্টদের মতে, মূলত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব কম আদায়ের কারণে অর্থ বিভাগ কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বলেছে, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কমে ৪ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসবে। ফলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অর্থের অপচয় বন্ধে সংশোধিত বাজেটে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। অবশ্য ইতোমধ্যে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে মৌখিকভাবে অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেছেন।

অর্থ বিভাগের নির্দেশনায় চলতি অর্থবছরে অবকাঠামো নির্মাণ, বিদেশ ভ্রমণ, নতুন গাড়ি ক্রয় ও ভূমি অধিগ্রহণ না করার মতো কৃচ্ছ সাধন কর্মসূচি অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।

প্রতিবছরই সংশোধিত বাজেট সামনে রেখে অর্থ বিভাগ থেকে বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়। এবার মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতির মধ্যে সামঞ্জস্য আনতে বলা হয়েছে। এমন মন্তব্য করেন অর্থ বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ। তিনি শুক্রবার যুগান্তরকে জানান, সরকার সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে। সেদিক থেকে সরকারের ব্যয় কমানো দরকার আছে। ফলে প্রকল্প বর্হির্ভূত অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কাটছাঁট করা উচিত।

অপচয়মূলক ব্যয় কমানোর মধ্য দিয়ে চলতি অর্থবছরে বাজেট থেকে কমপক্ষে এক লাখ কোটি টাকা কাটছাঁটের কাজটি শুরু করেছে অর্থ বিভাগ। এর মধ্য দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার চাপ কমবে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে-এমনটি আভাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আরও একটি কারণ হচ্ছে-প্রত্যাশা অনুযায়ী রাজস্ব আহরণ হচ্ছে না। অর্থবছরের গেল চার মাস অর্থাৎ জুলাই-অক্টোবরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব ঘাটতির মুখে পড়েছে। অর্থ সংকট মোকাবিলায় উন্নয়ন ও পরিচালনা বাজেট কমিয়ে আনতে নানা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে অর্থ বিভাগ থেকে।

৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার চলতি অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রণয়ন করে। এর মধ্যে এডিপি ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থ বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যার মধ্যে ব্যয় হয়েছে ৫ লাখ ৬৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা।

সাধারণত অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে, বিশেষ করে মার্চে সরকার জাতীয় বাজেট সংশোধন করে। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এর আগেই সংশোধনের পরিকল্পনা করছে। সম্ভাব্য এডিপি সংশোধনের ইঙ্গিত দিয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, অপচয়মূলক উদ্যোগ বন্ধে সরকার এডিপির আওতায় চলমান ও নতুন উভয় ধরনের প্রকল্প যাচাই-বাছাই করবে।

চলতি অর্থবছরে এডিপির আওতায় ১ হাজার ৩২৬টি প্রকল্প আছে। এর মধ্যে অনেকগুলো ২০২৩ সালে অন্তর্ভুক্ত হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যয় দেখা যায়নি। তবে প্রকল্পের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সংশোধিত এডিপিতে প্রকল্পের সংখ্যা সীমিত রাখার পাশাপাশি কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দিতে হবে। বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানে বাস্তবায়িত প্রকল্প, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত বৈদেশিক ঋণ পাওয়া যাবে-এমন প্রকল্প, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও পুনর্বাসন সম্পর্কিত প্রকল্প এবং চলতি অর্থবছরে শেষ হবে এমন প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ডলার সংকট কাটাতে বৈদেশিক ঋণের বা অনুদানের প্রকল্পের ক্ষেত্রে পিএল অংশের অর্থ পুরোটা খরচ করা যাবে। তবে অননুমোদিত কারিগরি সহায়তা প্রকল্প সংশোধিত এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা যাবে না। এছাড়া প্রকল্পে প্রাপ্য বৈদেশিক মুদ্রার পরিপূরক স্থানীয় মুদ্রা বরাদ্দের দাবির প্রস্তাবকে অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ওই নির্দেশনায় বলা হয়, অপ্রত্যাশিত খাত থেকে কোনো অর্থ বরাদ্দ হয়ে থাকলে সংশোধিত বাজেটে এর প্রতিফলন নিশ্চিত করতে হবে। নির্দেশনায় বলা হয়, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানি খাতের বরাদ্দের সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে। আবাসিক, অনাবাসিক ও অন্যান্য ভবন ও স্থাপনা খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে। যানবাহন, আকাশযান কেনা বন্ধ থাকবে। তবে ১০ বছরের বেশি পুরোনো গাড়ি প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিয়ে ব্যয় করতে হবে। এছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ খাতে অর্থ বরাদ্দ বন্ধ থাকবে। বিদেশ ভ্রমণ ব্যয় স্থগিত থাকবে। ধীরগতি প্রকল্প থেকে বরাদ্দ কমিয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন প্রকল্পে বরাদ্দ, কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন, বন্যা-উত্তর পুনর্বাসন, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসে ক্ষয়ক্ষতিসংক্রান্ত প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম