পুলিশের ছররা গুলিতে ঝাঁজরা শুভর দুই পা
কলেজে ফেরার আকাঙ্ক্ষা
পাকুন্দিয়া (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চার আগস্ট ছাত্র-জনতার মিছিলে উত্তাল ছিল কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া পৌর শহর। মিছিলে নির্দয়ভাবে গুলি ছোড়ে পুলিশ। আহত হন শতাধিক। তাদেরই একজন পাকুন্দিয়া পৌরসভার বাসিন্দা শিক্ষার্থী শুভ মিয়া (২১)। সেদিন পুলিশের ছররা গুলিতে তার দুটি পা ঝাঁজরা হয়ে যায়। বন্ধুরা তাকে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করান। চার-পাঁচটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে ৪ নভেম্বর বাড়িতে ফিরেছেন তিনি। ডান পা থেকে কিছু গুলি বের করা হয়েছে তার। আরও কিছু গুলি পায়ে আটকে থাকায় নিদারুণ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তিনি।
আহত শুভ পাকুন্দিয়া পৌরসভার হাঁপানিয়া গ্রামের মৃত মফিজ উদ্দীনের ছেলে। তিনি এ বছর পাকুন্দিয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন।
শুভর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পায়ে গুলির ক্ষতচিহ্ন নিয়ে খাটের ওপর কাতরাচ্ছেন তিনি। পা দুটি শুকিয়ে গেছে। উৎকণ্ঠা নিয়ে পাশে বসে আছেন শুভর মা ও বোন। ছেলে সুস্থ হয়ে আবার কলেজে যেতে পারবেন কি না এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় মা খোদেজা বেগম।
শুভ বলেন, চার আগস্ট দুপুরে ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশ শত শত ছররা গুলি, রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এ সময় একজন পুলিশ দৌড়ে এসে আমার পায়ে সরাসরি ছররা গুলি ছোড়ে। খুব কাছ থেকে গুলি ছোড়ায় সব গুলি পায়ে বিঁধে যায়। বন্ধুরা রক্তাক্ত অবস্থায় আমাকে প্রথমে কিশোরগঞ্জের শহিদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতাল ও সিএমএইচে ভর্তি করা হয়।
তিনি আরও বলেন, পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করে ডান পা থেকে শতাধিক গুলি বের করে। এখনো শতাধিক গুলি পায়ের ভেতর রয়েছে। দিনভর পা ব্যথা করে। হাঁটতে পারি না। কবে আবার সুস্থ হয়ে কলেজে যেতে পারব এই চিন্তায় সারাক্ষণ মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। চিকিৎসক বলেছেন, আরও একটি অস্ত্রোপচার করে সেগুলো বের করতে হবে। সম্পূর্ণ ভালো হতে দীর্ঘ সময় লাগবে।
শুভ আরও বলেন, পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালে জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলমসহ কয়েকজন সমন্বয়ক আমার সঙ্গে দেখা করেন। বর্তমানে তাদের তত্ত্বাবধানে সরকারিভাবে আমার চিকিৎসা চলছে।
খোদেজা বেগম বলেন, শুভর বাবা চার বছর আগে মারা গেছেন। বসতভিটা ছাড়া পরিবারের সহায়-সম্বল বলতে কিছু নেই। টাকার অভাবে ছেলেটাকে ভালো খাবার ও ফল কিনে খাওয়াতে পারছি না। ছেলেটা দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া চিকিৎসার প্রথম দিকে ধারদেনা করে ৬০ হাজার টাকা খরচ করা হয়েছে। সেই টাকাও পরিশোধ করতে পারছি না। সরকার ও বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের আবেদন জানান তিনি।