বগুড়ায় পুলিশের তদন্তে নতুন মোড়
ছেলে নয়, সেই নারীকে হত্যা করে ফ্রিজে রাখেন ভাড়াটিয়া
বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় গৃহবধূ উম্মে সালমা খাতুনকে হত্যার পর ডিপ ফ্রিজে রাখার ঘটনা নতুন মোড় নিয়েছে। পুলিশ বলছে, নিহতের ছেলে নয়, অনৈতিক কাজে বাধা দেওয়ায় বাড়ির এক ভাড়াটিয়া নারী এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে ওই নারীসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ সালমা খাতুনের দুটি মোবাইল ফোন, বাড়ির ইন্টারনেট রাউটার ও একটি চাবিও উদ্ধার করেছে।
গ্রেফতাররা হলেন-দুপচাঁচিয়া উপজেলার চামরুল ইউনিয়নের ইসলামপুর উত্তর সাজাপুর গ্রামের আইয়ুব আলীর স্ত্রী মাবিয়া সুলতানা হাসি, গুণাহার ইউনিয়নের তালুচ পশ্চিমপাড়ার আবদুর রহিমের ছেলে মোসলেম উদ্দিন ও তালুচ বাজার এলাকার নারায়ণ রবিদাসের ছেলে সুমন রবিদাস। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মাবিয়া সুলতানা হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সুব্রত সিং এ তথ্য দিয়েছেন।
পুলিশ জানায়, দুপচাঁচিয়া দারুস সুন্নাহ কামিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ আজিজুর রহমান চার ছেলেমেয়ের মধ্যে স্ত্রী উম্মে সালমা খাতুন ও ছোট ছেলে একই মাদ্রাসার আলিম দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্র সাদ বিন আজিজুরকে নিয়ে জয়পুরপাড়া এলাকায় চারতলা ভবনের তৃতীয় তলায় বসবাস করেন। তাদের বড় ছেলে ও মেয়ে ঢাকায় থাকেন। ১০ নভেম্বর সকালে আজিজুর ও ছেলে সাদ মাদ্রাসায় যান। দুপুরে সাদ বাড়ি ফিরে দেখেন ঘরের দরজা বাইরে থেকে তালা দেওয়া। তিনি বিকল্প চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকেন। দেখতে পান, ঘরের জিনিসপত্র তছনছ করা এবং আলমারিতে কুড়ালের আঘাত। একপর্যায়ে ডিপ ফ্রিজ খুলে ভেতরে হাত-পা বাঁধা মায়ের লাশ দেখতে পান। পরে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
র্যাব-১২ বগুড়া কোম্পানির সদস্যরা এ হত্যায় জড়িত সন্দেহে ১১ নভেম্বর রাতে সাদকে আটক করে। র্যাব জানিয়েছিল, জিজ্ঞাসাবাদে সাদ তার মাকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। কিন্তু পুলিশ বলছে, ভিন্ন কথা-গ্রেফতার মাবিয়া সুলতানা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছেন, অনৈতিক কাজে বাধা দেওয়ায় এবং বাড়ি ছেড়ে দিতে বলায় ক্ষুব্ধ হয়ে সহযোগীদের নিয়ে সালমা খাতুনকে হত্যা করেন তিনি।
বুধবার বিকালে এসআই সুব্রত সিং সাদকে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড চান। বিচারক সুমাইয়া সিদ্দিকা ৩ দিনের রিমান্ড দেন। রিমান্ডে সাদ র্যাবের কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তি অস্বীকার করে। সাদের দেওয়া তথ্য অনুসারে ডিবি ও দুপচাঁচিয়া থানা পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে সালমা খাতুনের খোঁয়া যাওয়া দুটি মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে হত্যা রহস্য উন্মোচন ও ঘাতকদের শনাক্ত করে। বৃহস্পতিবার রাতে প্রথমে নিহতের বাড়ির চতুর্থ তলা থেকে মাবিয়া সুলতানা হাসিকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তিতে উপজেলার চালুচ গ্রাম থেকে মোসলেম উদ্দিন ও সুমন রবিদাসকে গ্রেফতার করা হয়।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) সুমন রঞ্জন সরকার জানান, মাবিয়া সুলতানা হাসি প্রায় ৭ মাস আগে ওই বাসা ভাড়া নেন। হাসি ও অপর দুজন বাড়িতে অনৈতিক কাজ এবং উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতারণা, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ করে আসছেন। বিষয়টি টের পেয়ে সালমা খাতুন তাতে বাধা দেন এবং তাদের বাড়ি ছেড়ে দিতে বলেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এতেই মাবিয়া অন্য দুজনের সহযোগিতায় সালমা খাতুনকে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ ফ্রিজে রেখে পালিয়ে যান।
সুমন রঞ্জন সরকার আরও জানান, গ্রেফতার তিনজনের মধ্যে মোসলেম উদ্দিন শুক্রবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। অপর দুজনের ৭ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।