পৃথক হত্যা মামলা
সাবেক এমপি মুকুল ও সোলাইমান সেলিম কারাগারে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাজধানীর মিরপুর মডেল থানা ও চকবাজার থানার পৃথক দুটি হত্যা মামলায় ভোলা-২ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য আলী আজম মুকুল ও ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য সোলাইমান সেলিমকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার ঢাকার পৃথক মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এ আদেশ দেন। শিক্ষার্থী নাহিদুল ইসলামকে হত্যার অভিযোগে মিরপুর মডেল থানায় করা মামলায় আলী আজম মুকুলকে এবং রাকিব হাওলাদারকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে চকবাজার থানায় করা মামলায় সোলাইমান সেলিমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।
এদিন আলী আজম মুকুলকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক মো. আল আমীন তালুকদার। এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী জামিন চেয়ে আবেদন করেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেফাতুল্লাহ তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী খায়ের উদ্দিন শিকদার শুনানিতে বলেন, গত ১৯ জুলাই, মিরপুরের ঘটনা। মামলা ২৭ আগস্ট। এজাহারের ১৬নং আসামি। বাদীর ঠিকানা ভোলা দৌলতখান। আসামি ওই আসনের সংসদ-সদস্য। কাজেই বোঝা যাচ্ছে প্রতিহিংসার মামলা।
তিনি আরও বলেন, তখন আওয়ামী লীগের নির্দেশনা ছিল যে যার অবস্থান থেকে কর্মসূচি পালনের। তখন ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলছিল। ওই সময় আলী আজম মুকুল নিজ এলাকায় ছিলেন। তবে ভোলায় কোনো হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি। ওই এলাকা নিরিবিলি, শান্ত ছিল। রাজনৈতিক কোলাহল, দ্বন্দ্ব ভোলায় হয় না। ওই সময় আন্দোলনও হয়নি। শুধু হিংসার বশবর্তী হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে।
তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক ফরুকী বলেন, তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর তদন্ত কর্মকর্তা তাকে খোঁজেন। তিনি পালিয়ে ছিলেন। তার মতো যারা পালিয়েছিলেন আবার নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে। ফ্যাসিস্ট পালিয়ে গেছে, তারা পালাতে পারেনি। জামিন পেলে তারা আবার নৈরাজ্য সৃষ্টি করবে। তার জামিনের বিরোধিতা করছি। পরে আদালত আদেশ দেন।
এর আগে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকা থেকে আলী আজম মুকুলকে গ্রেফতার করে র্যাব-২। পরে তাকে মিরপুর মডেল থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই রাজধানীর মিরপুর এলাকায় নিহত হন নাহিদুল ইসলাম। এ ঘটনায় ১ সেপ্টেম্বর ভুক্তভোগীর চাচাতো ভাই বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় মামলা করেন। মামলায় ৪১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মুকুল এ মামলার এজাহারনামীয় ১৬ নম্বর আসামি।
এদিন সাবেক সংসদ-সদস্য সোলাইমান সেলিমকেও আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক আবুল খায়ের তাকে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন। তবে এ মামলার মূল নথি না থাকায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মুহাম্মদ জোনাইদ সোলাইমান সেলিমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। একই সঙ্গে ২৭ নভেম্বর রিমান্ড ও জামিন শুনানির জন্য দিন ঠিক করেন।
এর আগে রিমান্ড শুনানির জন্য সোলাইমান সেলিমকে গারদ থেকে আদালতের এজলাসে তোলা হয়। এ সময় ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেন সোলাইমান সেলিম।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ৫ আগস্ট সকালে চাঁনখারপুল মোড়ে আন্দোলনরত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ওপর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ ও এলোপাতাড়ি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ছোড়া গুলিতে রাকিব হাওলাদার গুলিবিদ্ধ হন। গুরুতর আহত রাকিবকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করলে আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বাধা দেন। পরে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে নিয়ে গেলে বিকাল পৌনে ৩টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় ২৩ সেপ্টেম্বর নিহতের বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন বাদী হয়ে চকবাজার মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন।