ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ পা হারানো লিমনের
‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন হিসাবে র্যাব বিলুপ্তির দাবি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারেক আহমেদ সিদ্দিকী, সাবেক র্যাব কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান ও মেজর রাশেদসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দিয়েছেন ১৩ বছর আগে র্যাবের গুলিতে পা হারানো লিমন হোসেন।
মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর বরাবর লিমন হোসেন এ অভিযোগ দাখিল করেন। পরে তিনি সেখানে (পুরাতন হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে) সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় প্রসিকিউটর বিএম সুলতান মাহমুদ, গাজী এমএইচ তামিম, আব্দুল্লাহ আল নোমান উপস্থিত ছিলেন।
লিমন হোসেন বলেন, ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার শাসনামলের সব অপরাধীকে চাইলেও আসামি করতে পারিনি। সবাইকে আমরা আসামি করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু অনেক বাধাবিপত্তি ও হুমকি ছিল। যাদের আসামি করতে পারিনি তার মধ্যে অন্যতম তারিক আহমেদ সিদ্দিক, র্যাব-৮এর তৎকালীন ক্যাম্প কমান্ডার মেজর রাশেদ ও এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান।
র্যাবকে ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করে এ বাহিনীর বিলুপ্তি দাবি করে লিমন হোসেন বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে হবে। তাদের আইনের আওতায় এনে সঠিক বিচার করতে হবে।
২০১১ সালে র্যাবের গুলিতে পা হারিয়ে র্যাবের বিরুদ্ধে মামলা করায় ৮-১০ বছর তারা গ্রামের বাড়িতে থাকতে পারেননি বলে জানান লিমন। তিনি বলেন, ১৩ বছর অনেক আকুতি-মিনতি করেছি ন্যায়বিচারের জন্য। তখন ন্যায়বিচার তো পাইনি, বরং অনেক হয়রানির শিকার হতে হয়েছিল। আমি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দ্বারস্থ হয়েছি ন্যায়বিচারের পাওয়ার জন্য। পায়ের বিনিময়ে কোনো ক্ষতিপূরণ যথোপযুক্ত হয় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারপরও দেশের আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ চান।
লিমন হোসেন বলেন, আমি ও আমার পরিবার কেউ কখনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। এখনো নাই। আমার প্রথম চাওয়া আমাকে যারা পঙ্গু করে দিয়েছে, তাদের বিচার। আাম সুষ্ঠু বিচার চাই। আমি কিন্তু কখনো বলিনি আমি বিচার চাই। আমি বলেছি- আমি সুষ্ঠু বিচার চাই। একটা সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হোক। তিনি আরও বলেন, আমি এবং আমার পরিবার এবং পুরো রাষ্ট্রের এই ট্রাইব্যুনালের প্রতি আস্থা আছে। এ কারণেই আমি এখানে অভিযোগ দাখিল করেছি যে, ইনশাআল্লাহ আমি এখান থেকে ন্যায় বিচার পাবো।
প্রসঙ্গত, ঝালকাঠির রাজাপুরের সাতুরিয়া গ্রামের লিমন হোসেন ২০১১ সালে ২৩ মার্চ মাঠ থেকে গরু আনতে গিয়ে র্যাবের গুলিতে পা হারান। ‘সন্ত্রাসী’ সন্দেহে আটক করার পর তার পায়ে গুলি করা হয়েছিল। লিমনকে গুলি করে উল্টো তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনের দুটি পৃথক মামলা দিয়েছিল র্যাব। ২০১৩ সালে আদালত মামলা দুটি খারিজ করে দেয়।
লিমনের পায়ে গুলি করা হয়েছিল উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার কয়েকদিন আগে। তাই ওই বছর তার আর পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। পরের বছর পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার কাঁঠালিয়া পিজিএস বহুমুখী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। বর্তমানে তিনি সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে শিক্ষকতা করছেন।