Logo
Logo
×

শেষ পাতা

সিলেটে নিখোঁজের ৭ দিন পর মিলল সন্ধান

শ্বাসরোধে হত্যার পর খালে পুঁতে রাখা হয় মুনতাহাকে

প্রাইভেট পড়ানো থেকে বাদ দেওয়ায় খুন করেন গৃহ শিক্ষক * গৃহ শিক্ষক মার্জিয়া ও তার মাসহ গ্রেফতার ৪

Icon

সিলেট ব্যুরো

প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শ্বাসরোধে হত্যার পর খালে পুঁতে রাখা হয় মুনতাহাকে

সিলেটে নিখোঁজের সাত দিন পর লাশ মিলল ছোট্ট মুনতাহার। তাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর বাড়ির পাশের খালে পুঁতে রাখেন তারই গৃহ শিক্ষিকা মার্জিয়া। এর সঙ্গে মার্জিয়ার মা আলিভজান বিবিও জড়িত ছিলেন। মুনতাহার সন্ধানে ব্যাপক খোঁজাখুঁজি শুরু হলে ভয় পেয়ে যান আলিভজান বিবি। তাই তিনি শনিবার রাতে খাল থেকে লাশ তুলে অন্য কোথাও গুম করার চেষ্টা করেন। তখনই হাতেনাতে ধরা পড়েন তিনি।

জানা গেছে, ৩ নভেম্বর কানাইঘাট উপজেলার ভাড়ারিফৌদ গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয় ছয় বছরের মুনতাহা আক্তার। সে গ্রামের শামীম আহমেদের মেয়ে। এ ঘটনায় পুলিশ গৃহ শিক্ষিকা মার্জিয়া ও তার মাসহ চারজনকে আটক করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করে মার্জিয়া জানিয়েছে, প্রাইভেট পড়ানো থেকে তাকে বাদ দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে সে মুনতাহাকে হত্যা করে। রোববার ভোরে মুনতাহার লাশ উদ্ধারের পর ভাড়ারিফৌদ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ ও বিষণ্ন।

রাস্তা শেষ হয়েছে মুনতাহাদের বাড়িতেই। পাশেই ছোট একটি খাল। তার পাড়ে সরকারি জমিতে একটি ঘরের মতো দেখা যায়-ভাঙচুর করে তাতে আগুন দিয়েছে গ্রামবাসী। লোকজন জানান, এই ঘর মুনতাহার শিক্ষিকা মার্জিয়ার। কাছে যেতেই দেখা মিলে এক বৃদ্ধের। নাম ওয়াহিদ আলী। গণমাধ্যমকর্মীদের দেখে বাকিরা জানান, ইনিই প্রথম মুনতাহার লাশ দেখেছেন। তারপর ওয়াহিদ আলীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি মুনতাহার বাবার প্রতিবেশী। মুনতাহা নিখোঁজের পর তাকে খুঁজে পেতে তিনি বিভিন্ন স্থানে ঘুরেছেন। শনিবার বিকালে বাড়ির পাশে থাকা গৃহ শিক্ষক মার্জিয়ার কথাবার্তায় অমিল পান তিনি। সেই সঙ্গে মার্জিয়ার মাকে হঠাৎ খালে নেমে কী যেন খুঁজতে দেখেন। এতে সন্দেহ হলে রাতে পুলিশ ডেকে মার্জিয়াকে ধরিয়ে দেয় গ্রামবাসী। ওয়াহিদ আলী জানান, তিনি রাতভর মার্জিয়ার মায়ের ওপর নজর রাখছিলেন। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে হঠাৎ মানুষ চলাচলের শব্দ পান। এগিয়ে গিয়ে টর্চ জ্বালিয়ে দেখেন মার্জিয়ার মা আলিভজান বিবি। তার কোলে কাদা মাখানো একটি বস্তু। কাছে গেলেই বস্তুটি মাটিতে ফেলে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন আলিভজান। তাকে ধরার পর দেখতে পান বস্তুটি মুনতাহার লাশ। সম্ভবত তাকে খালের মধ্যে পুঁতে রাখা হয়েছিল। সেখান থেকে তুলে নিয়ে নতুন করে কোথাও গুম করার পরিকল্পনা ছিল তার। কয়েকদিনে লাশটি প্রায় অর্ধগলিত। এরপর সবাইকে ডেকে তোলেন তিনি। খবর পেয়ে পুলিশ এসে আলিভজানকে আটক করে এবং মুনতাহার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়।

জানা যায়, গ্রামের মানুষের খুব প্রিয় ছিল চটপটে মুনতাহা। সবাই তাকে খুব আদর করতো। তার লাশ উদ্ধারের লোমহর্ষক গল্প শুনে হতবাক সবাই। মুনতাহাকে হত্যার প্রতিবাদে মিছিল করে গ্রামবাসী। গ্রামের শরিফউদ্দিন বলেন, এত তুচ্ছ কারণে কেউ কাউকে মারতে পারে-এটা বিশ্বাসই হচ্ছে না। ফুটফুটে শিশুটির জন্য পুরো গ্রাম কাঁদছে।

এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে মুনতাহার লাশ আনা হয় বাড়িতে। অর্ধগলিত হওয়ায় পলিথিনে মুড়ে রাখা হয়। তা দেখতেই ভিড় জমান কয়েক গ্রামের মানুষ। ভিড় ঠেলে ভেতরে গিয়ে কথা হয় মুনতাহার বাবা শামীম আহমেদের সঙ্গে। হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন তিনি। জানান, ৭ দিন ধরে মুনতাহার সন্ধানে সারা দেশের মানুষ কাজ করেছে। তাই তারাই মুনতাহার অভিভাবক, বিচারের ভার সারা দেশের মানুষের কাছে ছেড়ে দেন তিনি। তিনি বলেন, কয়েকবার চুরি করে ধরা পড়ার পর আড়াই মাস আগে মুনতাহাকে পড়াতে নিষেধ করা হয় মার্জিয়াকে। তারপর থেকেই নানাভাবে ঝগড়া লাগানোর ফন্দি করত সে।

শামীম আহমেদ বলেন, মার্জিয়ার মা ভিক্ষুক। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে সহায়তা নিয়ে তাদের স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করছি। কিন্তু তার ফল হলো এই-আমার অবুঝ মেয়েটাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে তারা।

এদিকে, আলোচিত এই হত্যার ঘটনা তদন্তে কানাইঘাটে যান পুলিশ সুপার মীর মাহবুবুর রহমান। আটক মার্জিয়া ও তার মা আলিভযান জিজ্ঞাসাবাদে খুনের কথা স্বীকার করেন। পাশাপাশি মার্জিয়া এর সঙ্গে জড়িত আরও দুই জনের নাম বলেন। পরে তাদেরও আটক করা হয়। এরা হলেন মুনতাহার প্রতিবেশী ইসলাম উদ্দিন ও তার আত্মীয় নাজমা বেগম।

পুলিশ সুপার মীর মাহবুবুর রহমান বলেন, সন্ধ্যা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদে যতটুকু জানা গেছে তা হলো-৩ নভেম্বর বিকালে মুনতাহাকে ফুসলিয়ে ডেকে নিয়ে যান মার্জিয়া। পরে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। রাতে মা ও মেয়ে মিলে পাশের খালে পুঁতে রাখেন। আটক অপর দুজনের বিরুদ্ধে মার্জিয়ার অভিযোগ তারা নাকি বিভিন্ন সময় মুনতাহাকে ধরে এনে দিতে তাকে প্রলোভন দেখিয়েছিল। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম