বাজার পরিস্থিতি বেসামাল
পণ্যের অগ্নিমূল্যে হাহাকার মধ্য ও নিম্নবিত্তের
ভোজ্যতেলের বাড়তি দামে জ্বলছে ক্রেতা * পুরান আলুর কেজি ৭৫ ও নতুন ১২০ টাকায় বিক্রি * সব ধরনের মসলাপণ্যে অসহনীয় দাম

ইয়াসিন রহমান
প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বেসামাল ভোগ্যপণ্যের বাজার। সরকার একাধিক উদ্যোগের পরও পণ্যের দামে লাগাম টানা যাচ্ছে না। অসাধু মহলের কারসাজিতে প্রতি সপ্তাহেই কিছু না কিছু পণ্যের দাম বাড়ছে। পরিস্থিতি এমন-নতুন আলু বাজারে এলেও সপ্তাহের ব্যবধানে পুরাতন আলু কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে সংকট নেই তবুও ভোজ্যতেলের বাড়তি দামে জ্বলছেন ক্রেতা। লিটারে বেড়েছে ৫ থেকে ১৫ টাকা। সঙ্গে পেঁয়াজ, আদা-রসুন, এলাচসহ সব ধরনের মসলার দামও অসহনীয়। চাল থেকে শুরু করে আটা-ময়দাও অগ্নিমূল্য। এ পরিস্থিতিতে বাজারে এসে মধ্য ও নিম্নবিত্তের হাহাকারই বাড়ছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, নতুন সরকারের কাছে ভোক্তার আসা ছিল এবার একটু হলেও পণ্যের দাম কমে স্বস্তির জায়গায় আসবে। কিন্তু বাজার সে জায়গায় নেই। তবে সরকার ইতোমধ্যে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে। সেই উদ্যোগ যথাযথভাবে কার্যকর করতে পারলে পণ্যের দাম কমার আশা করা যাচ্ছে। তবে বাজারে তদারকি জোরদার করতে হবে।
খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকা। যা ৭ দিন আগেও ১৬০ টাকা ছিল। বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬৭-১৭০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগেও ১৬৫-১৭০ টাকা ছিল।
এছাড়া দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ টাকা। যা ৭ দিন আগেও ৩৩৫ টাকা ছিল। পাশাপাশি খোলা পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ১৫৬ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগেও ১৫০ টাকা ছিল। আর পাম অয়েল সুপার বিক্রি হচ্ছে লিটারপ্রতি ১৬০ টাকা। যা আগে ১৫৪ টাকা ছিল। এছাড়া খুচরা পর্যায়ে প্রতি লিটার বোতলজাত রাইসব্রান তেল বিক্রি হচ্ছে ২০০-২১০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে লিটারপ্রতি বিক্রি হয়েছে ১৮৫-১৯৫ টাকা। সঙ্গে পাঁচ লিটারের বোতলজাত রাইসব্রান তেল বিক্রি হচ্ছে ৯৮০-১০৫০ টাকা। যা ৭ দিন আগেও ৮৮০-৯২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
অন্যদিকে মসুর ডালের দাম নতুন করে বৃদ্ধি না হলেও ১৩০-১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি চিনি কিনতে ক্রেতার গুনতে হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকা। পাশাপাশি বাজারে নতুন আলুর সরবরাহ বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় কোনো সংকটও নেই। তারপরও সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে পুরাতন আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকা। যা আগে ৬০-৬৫ টাকা ছিল। আর নতুন আলু প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা। পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক ছাড়ের ঘোষণায় কেজিপ্রতি দেশি পেঁয়াজের দাম ১০ টাকা কমে এখন ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা ১ মাস আগেও ১২০ টাকা ছিল।
আর ২ মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৯০-১০০ টাকা। প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৩৬০০-৩৮০০ টাকা। যা ৭ দিন আগেও ৩২০০-৩৪০০ টাকা ছিল। লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৬০০ টাকা। যা আগে ১৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ টাকা। যা ৭ দিন আগেও ৫৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি দেশি আদার কেজি ৫০০ ও আমদানি করা আদা ১২০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর রামপুরা বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো. আল আমিন বলেন, বাজারে সব ধরনের পণ্যের সরবরাহ অনেক। দোকানগুলোতে পণ্যের কোনো সংকট নেই। পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু দাম গত সপ্তাহের তুলনায় বাড়তি। এসব যারা দেখবেন তাদেরও আমরা ভোক্তারা দেখছি না। প্রতি সপ্তাহেই কিছু না কিছু পণ্যের দাম বাড়ছে। ভোজ্যতেল কিনতে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। চাল, ডাল, আটা-ময়দার দামও বাড়তি। মসলা পণ্যে হাতই দেওয়া যাচ্ছে না। বাজারে এসে কি যে কিনব সেটাই বুঝতে পারছি না।
রাজধানীর নয়াবাজারে পণ্য কিনতে আসা মো. শাকিল বলেন, যে হারে পণ্যের দাম বাড়ছে সে হারে আয় বাড়ছে না। পণ্যের দাম নিয়ে হাহাকার তৈরি হয়েছে। ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে। দাম কামানোরও কোনো উদ্যোগ নেই। অন্যান্য পণ্যের দামে দিশেহারা হয়ে পড়ার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার প্রতি কেজি সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৮-৮০ টাকা। যা গত বছর ঠিক একই সময় ৬০-৭৫ টাকা। প্রতি কেজি মাঝারি দানার চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮-৬৫ টাকা। যা আগে বিক্রি হয়েছে ৫২-৫৬ টাকা। আর মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২-৫৫ টাকা। যা গত বছর ঠিক একই সময় বিক্রি হয়েছে ৪৮-৫২ টাকা।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। ভোক্তাদের সুবিধার্থে আগামীকাল (আজ) থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৬টি ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৭টি সাব-সেন্টারে সরাসরি ডিম বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া বাজারে তদারকি করা হচ্ছে। পণ্যের দাম কমে আসবে।