আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থীকে নিয়ে স্মৃতিচারণা
‘যদি মারা যাই বলবে আমার মেয়ে শহিদ হইছে’
মো. তারেক রহমান, উত্তরা পশ্চিম (ঢাকা)
প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
‘১৮ জুলাই উত্তরায় অনেক ছাত্র মারা যাওয়ার পর রাতে নাইমা আমাকে জিজ্ঞাসা করে-আমিও যদি আন্দোলনে গিয়ে মারা যাই, তুমি মানুষকে কী বলবে? নাইমা বলে ওঠে-আমি যদি মারা যাই, তখন বলবে আমার মেয়ে শহিদ হইছে,’ কথাগুলো শেষ হতেই কেঁদে উঠে আইনুন্নাহার বেগম বলেন, মেয়ের এ কথাগুলো আমার কানে এখনো বাজে। এভাবেই যুগান্তরের কাছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে নিহত নাইমার স্মৃতিচারণা করছিলেন মা আইনুন্নাহার।
১৯ জুলাই আন্দোলনের সময় রাজধানীর উত্তরায় নিজের বাসার বারান্দায় দাঁড়াতেই দশম শ্রেণির ছাত্রী নাইমা সুলতানার (১৬) মাথায় গুলি লাগে। না ফেরার দেশে চলে যায় সে। বড় মেয়ের স্মৃতি আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছেন আইনুন্নাহার। আন্দোলন নিয়ে মেয়ের আগ্রহ ও নিহত হওয়ার ঘটনা শনিবার উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের বাসায় বসে বর্ণনা করেন তিনি।
আইনুন্নাহার বলেন, ঘটনার দিন বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তাৎকালীন সরকারদলীয় শখানেক নেতাকর্মী পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে আসেন এবং আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালান। নাইমা তখন বারান্দা থেকে জামাকাপড় আনতে যায়। এটাই যেন আমার মেয়ের কাল হয়ে দাঁড়ায়! তিনি বলেন, ও (নাইমা) বারান্দায় যাওয়ার কয়েক মিনিট পরই ‘মা’ বলে একটা চিৎকার দেয়। বারান্দায় যেতেই দেখি নাইমা মেঝেতে পড়ে আছে। পুরো বারান্দা তখন রক্তে লাল হয়ে গেছে। এমনভাবে গুলিটি লাগে যেন ওর মাথার মধ্যে কেউ কোপ দিয়েছিল। আমি বেহুঁশ হয়ে পড়ি। কিছুক্ষণ পর এলাকার ছাত্ররা এসে নাইমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু ততক্ষণে আমার মেয়ে আর বেঁচে ছিল না।
নাইমার মা আক্ষেপ করে বলেন, আমার মেয়েটা তো সড়কে বের হয়নি। ঘরের ভেতর থেকেও ওকে লাশ হতে হলো। ওর মৃত্যু আমাকে অনেক কষ্ট দিচ্ছে। ওর সবকিছুই আমার মনে পড়ে। আমি ঠিকমতো কিছুই করতে পারি না।
চিকিৎসকের সাজে নাইমার ছোটবেলার একটি ছবি দেখিয়ে আইনুন্নাহার বলেন, আমার মেয়েটা বড় হয়ে চিকিৎসক হতে চেয়েছিল। কিন্তু ও আর চিকিৎসক হতে পারল না। তিনি আরও বলেন, আন্দোলনের শুরু থেকেই ও বাসায় বসে আন্দোলনের পক্ষে আঁকাআঁকি করত। ‘বয়কট ছাত্রলীগ’-এর একটি পোস্টার এঁকে নাইমা নিজেই ফেসবুকে পোস্ট করেছিল।
সবশেষে আইনুন্নাহার বলেন, যারা সেদিন গুলি চালিয়ে আমার নিরপরাধ মেয়েটাকে খুন করেছে, আমি তাদের বিচার চাই।